Quantcast
Channel: Eisamay
Viewing all 41318 articles
Browse latest View live

সরকারের তীব্র প্রতিক্রিয়া, ‘রাজ্যপাল হলেন তোতাপাখি’

$
0
0

এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: বাদুড়িয়ায় অশান্তির জেরে নতুন সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের। এবার স্থানীয় থানার উদ্যোগে বুথগুলিতে ‘শান্তি বাহিনী’ গড়া হবে বলে। আজ নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে একথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর পর ওই সাংবাদিক বৈঠক থেকেই রাজ্যপালকে তীব্র আক্রমণ করেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

ফেসবুকে এক কিশোরের আপত্তিকর পোস্টকে কেন্দ্র করে অশান্তি ছড়ায় উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ার রুদ্রপুর এলাকায়। ওই কিশোরকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ। কিন্তু, এরপরও অশান্তি আরও ছড়িয়ে যায় বাদুড়িয়া ও সংলগ্ন এলাকাগুলিতে। মঙ্গলবার রাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানো হয় উত্তপ্ত এলাকাগুলিতে। মুখ্যমন্ত্রী আজ জানান, ‘বাদুড়িয়ার পরিস্থিতি এখন শান্ত।’

তবে এরপর থেকে এলাকায় শান্তিরক্ষার স্বার্থে ‘শান্তি বাহিনী’ গড়ার কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী। স্থানীয় থানার উদ্যোগে বুথ প্রতি ‘শান্তি বাহিনী’ গড়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই ৬০ হাজার বুথে গড়া হবে ‘শান্তি বাহিনী’। এলাকার নাগরিকদের নিয়েই এই বাহিনী গড়া হবে। প্রতি বাহিনীতে ১৫-২০ জন করে সদস্য থাকবেন। এলাকার শান্তিরক্ষার কাজেই ব্যবহার করা হবে সদস্যদের।

এদিকে, গোটা বিষয়ে BJP-কে একহাত নেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘পতাকা ব্যবহার করে অশান্তি ছড়াচ্ছে BJP। অন্য দেশ, রাজ্যের ফটো ব্যবহার করে মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে। হিংসা ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে।’ তবে এগুলি বরদাস্ত করা হবে না বলেও স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, জাতীয় স্তরে তৃণমূল কেন্দ্রের বিরোধিতা করছে বলেই চক্রান্ত করছে BJP।

আজ ‘পশ্চিমবঙ্গে সমাজবিরোধীদের সরকার’ চলছে বলে দিল্লিতে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি। নাম না করে তাঁকে পালটা জবাব দেন মুখ্যমন্ত্রী। ‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়ে হিংসাকে প্ররোচনা দিচ্ছেন কিছু নেতা। নিজেদের কাজ ছেড়ে বাংলা নিয়ে তাঁদের এত মাথা ব্যথা কেন?’ BJP শাসিত উত্তরপ্রদেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

BJP-কে আক্রমণ করলেও, রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। রাজ্যপাল নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি শুধু বলেন, ‘যা বলার কাল বলে দিয়েছি। আমার কাছে সবাই সমান।’ মুখ্যমন্ত্রী না বললেও, এবার রাজ্যপালকে তীব্র আক্রমণ করেন রাজ্য মন্ত্রিসভার বর্ষীয়ান সদস্য সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

‘রাজ্যপাল BJP-র তোতাপাখি। উনি BJP-র কথামতো কাজ করেন।’ অভিযোগ সুব্রত বাবুর। তিনি আরও বলেন, ‘BJP-র তরফে রাজ্যপালকে অনেক চিঠি দেওয়া হয়। উনি আবার সেগুলো আমাদের পাঠান জবাব চেয়ে। উনি কী করেন আমরা জানি।’

আজই ‘রাজভবন BJP-র আস্তানা হতে পারে না' বলে মন্তব্য করেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব ও শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। যার জবাবে কড়া প্রতিক্রিয়া দেন রাজ্যপাল ত্রিপাঠী। মুখ্যমন্ত্রী ও শাসকদল রাজভবনকে অপমান করছে বলে প্রতিক্রিয়া দেন তিনি। প্রসঙ্গত, গতকাল মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠকের পরই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন ডেরেক ও’ব্রায়েন, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো সিনিয়র তৃণমূল নেতারা।

আজ রাজ্যপালের প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে সুব্রত মুখোপাধ্যায় কটাক্ষ করে বলেন, ‘শুনেছি উনি নাকি বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা থাকলে, আমারও আছে। আলু আর আলুবখরা কি এক হতে পারে?’ রাজ্য বিধানসভায় রাজ্যপাল যে সরকারের লিখে দেওয়া ভাষণ পাঠ করবেন তাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। বলেন, ‘বিধানসভা শুরু হলে, আমাদের লিখে দেওয়া প্রশংসাই পড়ে আসবেন উনি। এতেই ওনার মুখোশ খুলে যায়।’ তবে তীব্র কটাক্ষ করলেও রাজ্যপালের বদলের দাবি যে তাঁরা করছেন না, তা স্পষ্ট করে দেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়।


দাঙ্গাবাজদের রুখতে মমতার শান্তিবাহিনী

$
0
0

এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: রাজ্যে 'দাঙ্গাবাজ'দের চক্রান্তের মোকাবিলায় শান্তিবাহিনী গঠনের উপর জোর দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার নাবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মমতা জানিয়েছেন, বুথভিত্তিক শান্তিবাহিনী গড়ে তোলা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ৬০ হাজার বুথে এই শান্তিবাহিনী থাকবে।

কারা থাকবেন এই শান্তিবাহিনীতে? মূলত, স্থানীয় নাগরিকদের নিয়েই তৈরি হচ্ছে এই বাহিনী। রাখা হবে ছাত্র-যুবাদের। এলাকায় কেউ উস্কানি দিলে বা অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করলে অথবা প্ররোচনামূলক কথা বললে, এই বাহিনীই পুলিশ-প্রশাসনের কাছে খবর দেবে।

সাংবাদিকদের সামনে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, গুজব ছড়িয়ে বিজেপিই রাজ্যে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করছে। তৃণমূলকে চুপ করাতেই বিজেপির এই চক্রান্ত বলে অভিযোগ মমতার।

ফেসবুকে যেভাবে মিথ্যা প্রচার চলছে, তার উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মানুষকেই সতর্ক থাকতে হবে। দাঙ্গা বাধাতে কেউ উস্কানি দিচ্ছে কি না, খেয়াল রাখতে হবে। রাজনৈতিক ভাবে এঁটে উঠতে না-পেরে, বিজেপিই এই পন্থা নিয়েছে বলে দাবি মুখ্যমন্ত্রীর।

মমতার কথায়, এটাই বিজেপির রাজনীতির ধারা। শুধু এ রাজ্য কেন, গোটা দেশে এই পদ্ধতি মেনে কাজ করে চলেছে বিজেপি। এর বিরুদ্ধে রাজ্যবাসীকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।


নন্দীগ্রাম মামলায় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট CBI-এর

$
0
0

এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: নন্দীগ্রাম কাণ্ডে বুধবার হলদিয়া আদালতে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা, সিবিআই। সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে এই প্রথমবার পুলিশেরও নাম রয়েছে। যার মধ্যে নন্দীগ্রামের তত্‍‌কালীন ওসি শংকর রায় ছাড়াও রয়েছেন দুই পুলিশকর্তা সত্যজিত্‍‌ বন্দ্যোপাধ্যায় ও দেবাশিস বড়াল। সেসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছিলেন সত্যজিত্‍‌ বন্দ্যোপাধ্যায়।

নন্দীগ্রাম মামলায় সিবিআই প্রথম চার্জশিট দিয়েছিল ২০১৩-র ২৩ ডিসেম্বর। সেখানে ৩৭ জনের নাম থাকলেও, কোনও পুলিশকর্তার নাম ছিল না। সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে তিন পুলিশ অফিসারের নাম যোগ করা হয়েছে।



২০০৭ সালের ১৪ মার্চ সত্যজিত্‍‌ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পুলিশ ও প্রশাসনের একটি টিম রাস্তা সারাতে গেলে, বাধা দেন সেখানে জড়ো হওয়া গ্রামবাসীরা। যা নিয়ে চরম উত্তেজনা তৈরি হয়। জমায়েত বেআইনি ঘোষণা করে, বাঁশ-লাঠি নিয়ে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের সরে যেতে বলা হয়। কিন্তু, বিক্ষোভকারীরা তাতে কর্ণপাত না-করে, পুলিশের দিকে ঢিল ছুড়তে শুরু করেন। পুলিশ ধৈর্যের পরিচিয় না দিয়ে, টিয়ার শেলের সঙ্গেই গুলি ছুড়তে শুরু করে, যার জেরে মৃত্যু হয় ১৪ জনের।

চার্জশিটে পুলিশের বিরুদ্ধে সরাসরি খুনের অভিযোগ না-এনে, সিবিআই উল্লেখ করে, উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে।

তখনকার বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন বামফ্রন্ট সরকার ঠান্ডা মাথায় নন্দীগ্রামের নিরীহ মানুষজনকে খুন করেছে।

পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি ত্রিপাঠীর

$
0
0

এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের বাদুড়িয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে রিপোর্ট দিলেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। সূত্রের খবর, রিপোর্টে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফোনে কথোপকোথনের বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন রাজ্যপাল। এর আগে রাজ্য সরকারের তরফেও একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে রাষ্ট্রপতির কাছে। বুধবার সকালেই রাষ্ট্রপতির কাছে রিপোর্টটি পাঠিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের মহাসচিব তথা পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বসিরহাটকে কেন্দ্র করে মুখ্যমন্ত্রী-রাজ্যপাল সংঘাত এতে অন্যমাত্রা পাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

গত দু'দিন ধরে বাদুড়িয়াকে ঘিরে রাজ্যের পরিস্থিতি উত্তাল। বিশেষত রাজ্যপালের ফোন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠক করে অসন্তোষ প্রকাশ করায়, রাজ্য রাজনীতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কেশরীনাথ ত্রিপাঠী তাঁকে ফোনে হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। পালটা বিবৃতি দিয়ে অভিযোগ নস্যাত্‍‌ করেন রাজ্যপাল। পারস্পরিক চাপানউতোরে নজিরবিহীন ভাবেই সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী। এবার সেই তরজা পৌঁছল রাষ্ট্রপতির দরবার পর্যন্ত।

জানা গিয়েছে, রাজভবন থেকে রাষ্ট্রপতিকে পাঠানো চিঠিতে বাদুড়িয়ার ঘটনা ছাড়াও রাজ্যের সার্বিক পরিস্থিতির উল্লেখ করা হয়েছে। রাজ্যের শাসকদল ও মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালের পদকে কীভাবে অসম্মান করেছেন, তারও ব্যাখ্যা করেছেন কেশরীনাথ ত্রিপাঠী।

এদিকে, বুধবারও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীকে আলাদা আলাদা ভাবে ফোন করে রাজ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতি জানতে চান। বসিরহাটে শান্তি ফেরাতে রাজ্য কী পদক্ষেপ করেছে, চিঠি দিয়ে তা-ও জানতে চেয়েছে কেন্দ্র।

মুসলমানের উঠোনে গান গেয়ে যায় কীর্তনের দল

$
0
0

প্রসেনজিত্ বেরা, বাদুড়িয়া

এই গ্রামে আজান হয়৷ আজান থামলে কীর্তন হয়৷ কীর্তনের দল হিন্দুর বাড়ির উঠোনে যেমন যায়, তেমনই আসে মুসলমানের দাওয়ায়৷ মসজিদের সামনে হরিধ্বনি ওঠে৷ এই গ্রামে দুর্গাপুজো হয়৷ পুজোর মাইক বাঁধা থাকে মসজিদের সামনে৷ পুষ্পাঞ্জলির মন্ত্র মসজিদের গা ছুঁয়ে ভাসতে থাকে বাতাসে৷

এই গ্রামে কয়েকশো বছর ধরে হিন্দু-মুসলমানের বাস৷ মুসলমানের উঠোনের গায়ে হিন্দুর গোয়ালঘর৷ বোঝা যায় না , কে হিন্দু, কে মুসলমান৷ বোঝার চেষ্টাও নেই৷ কিন্ত্ত হঠাত্ই সব কিছু যেন সুরকাটা৷ তালকানা৷

গ্রামের নাম মাগুরখালি৷ এখানেই বাস শৌভিক সরকারের৷ বছর আঠারোর এই ছেলেটির ফেসবুক পোস্ট ঘিরেই উত্তপ্ত উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়া , দেগঙ্গা , বসিরহাট , স্বরূপনগর -সহ বিস্তীর্ণ এলাকা৷ তবে মাগুরখালি কিন্ত্ত এখন শান্ত৷ শৌভিকের বাড়িতে আগুন দিয়েছিল কিছু যুবক৷ সেই আগুনে জল ঢেলে ছিলেন মাগুরখালি মিলন মসজিদ কমিটির সভাপতি আমিরুল ইসলাম৷ গোবরডাঙা থেকে দমকলের গাড়ি ডেকে এনেছিলেন মকসুদ৷ সবাই কিন্ত্ত উন্মত্ত নন৷ হয়তো কেউ কেউ৷ না -হলে হিন্দুর বাড়ির আগুন মুসলমান নেভাবেন কেন ! ভাইপো সাবিন রহমানকে নিয়ে হাবরায় গিয়েছিলেন আমিরুল৷ সন্ধে সাড়ে ছ ’টা নাগাদ তাঁর মোবাইল বেজে ওঠে৷ ও -পারে ত্রস্ত গলা৷ মাগুরখালি গ্রামের শিক্ষক ত্রিদিব চৌধুরীর৷ তিনি বললেন, ‘আমিরুল কাকা , শৌভিকদের বাড়িতে হামলা হচ্ছে৷ আগুন ধরানোর চেষ্টা হচ্ছে৷ তুমি তাড়াতাড়ি এসো৷’ ঘণ্টাখানেক বাদে গ্রামে এসে তিনি দেখেন, শ ’তিনেক উন্মত্ত যুবক বাবলু সরকারের বাড়িতে হামলা চালচ্ছে৷ বাবলু শৌভিকের সম্পর্কিত জ্যাঠা৷ মা মারা যাওয়ার পর তাঁর বাড়িতেই থাকত একাদশ শ্রেণির ছাত্র৷ জ্বলন্ত কাঠ বাড়ির জানলা দিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ উন্মত্ত জনতার সামনে তখন হিন্দু-মুসলিম সবাই সিঁটিয়ে৷

বুধবার বৃষ্টিভেজা দুপুরে মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে আমিরুল৷ এখনও তাঁর গলা কাঁপছে৷ বললেন , ‘শয়ে শয়ে অচেনা ছেলে বাবলুদের বাড়িতে হামলা চালাচ্ছিল৷ প্রতিবাদ করি৷ ওরা আমাকে পাল্টা আমাকে শাসিয়ে বলে , ‘আপনি কে ? কেন বাধা দিচ্ছেন ? আমি নিজের পরিচয় দিই৷ কিন্ত্ত ওরা শোনেনি৷ ’বাবলুর বাড়ি জ্বলতে থাকে৷ আমিরুল ছুটে গিয়ে বন্ধুদের ডেকে আনেন৷ গ্রামের ছেলে মকসুদ দমকলের কর্মী৷ তিনিই গোবরডাঙা থেকে দমকলের গাড়ি নিয়ে আসেন মাগুরখোলায়৷ হিন্দু-মুসলমান হাতে -হাত মিলিয়ে বাবলুর বাড়ির আগুন নেভান৷ বাইরের লোক এসে তাঁদের গ্রামের একটি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে চলে গেল , এখনও বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না গ্রামের হাজার দুই মানুষ৷ সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তো দূরের কথা , ভোটের সময়ও এই গ্রামের দু’টি বুথে কখনও মারামারি হয়নি৷ তাই অন্য জয়াগায় অশান্তি থাকলেও রুদ্রপুরের মাগুরখালি শান্তই৷ মসজিদের ঠিক উল্টোদিকে শৌভিকদের বাড়ি৷ ঢিল ছোড়া দূরে নিবাস মনোরঞ্জন মণ্ডলের৷ প্রবীণ মানুষ৷ গ্রামজুড়ে তাঁর ছাত্র৷ শৌভিকদের বাড়ির উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, ‘ঈদে আমাদের নেমতন্ন ছিল৷ আমরা সবাই খেয়েছি৷ শৌভিকের একটা ভুলে লজ্জায় আমাদের মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে৷’ তাঁর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে শামছেল মণ্ডল বললেন , ‘উনি আমাদের মাস্টারমশাই৷ আমরা সকলে ওঁর ছাত্র৷ এই গ্রামে সবাই সবার বাড়ির অনুষ্ঠানে যায়৷ ’ তরুণ মহম্মদ রিয়াজুল সর্দারের কথায় , ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুলিশ এসেছিল৷ তার পর আর আসেনি৷ আমাদের গ্রামে কোনও ঝামেলা নেই৷ তাই পুলিশও নেই৷ ’ শৌভিকের জ্যাঠা বাবলুর সঙ্গে রুদ্রপুর স্কুলে একসঙ্গে পড়েছেন সিরাজুল মণ্ডল৷ পাশের জসইকাটি গ্রামে বাড়ি সিরাজুলের৷ শৌভিকদের বাড়ির সামনে জটলা দেখে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন৷ তিনি বললেন , ‘বাবলু আমার ছোটবেলার বন্ধু৷ অত্যন্ত সজ্জন৷ ওর বাড়ি এই ভাবে একদল বাইরের লোক এসে আগুন ধরিয়ে দিয়ে গেল মেনে নিতে পারছি না৷ ’ কথা বলতে বলতে চোখের জল মুছলেন মধ্য চল্লিশের সিরাজুল৷

বিশ্বাস হচ্ছে না গৌরী মণ্ডলেরও৷ গ্রামে কোনও দিন ঝামেলা দেখেননি৷ বললেন , ‘এই মসজিদে আজান হয়৷ আজান থেমে যাওয়ার পর আমাদের কীর্তন হয়৷ গ্রামের হিন্দু-মুসলিম সব পাড়া দিয়ে সেই কীর্তনের দল ঘোরে৷ কেউ কোনও দিন কিছু বলেনি৷ ’সত্যিই অবাক মাগুরখালি৷ কারও কিছু বিশ্বাস হচ্ছে না৷ এই গ্রামেরই এক ছেলের এই কাণ্ড ! কত কী যে বিশ্বাস হয় না৷ আম -জাম -কাঁঠালের ডালে দিব্যি বাঁধা ছিল সম্প্রীতির তার৷ থাকবেও৷

​হেরিটেজ শহরের তকমা পাবে নবদ্বীপ-কোচবিহার

$
0
0

সুগত বন্দ্যোপাধ্যায়

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বার রাজ্যে হেরিটেজ শহর তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেন৷ এর ফলে পশ্চিমবঙ্গই হবে ভারতের দ্বিতীয় রাজ্য, যেখানে হেরিটেজ শহর তৈরি হবে৷ তবে জোড়া হেরিটেজ শহরের প্রথম নজির রাজ্যই গড়বে৷ রাজ্য সরকারের মূল লক্ষ্য বিদেশি পর্যটকদের টানা৷

পরিকল্পনা অনুযায়ী, একটি হেরিটেজ শহর হবে বৈষ্ণব আন্দোলনের পীঠস্থান নবদ্বীপকে ঘিরে৷ অন্যটি কোচবিহার শহর, যা উনবিংশ শতাব্দীতে রাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণের হাত ধরে ইউরোপের আদলে একটি পরিকল্পিত নগর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল৷ ২০১৩ সালে রাজস্থানের রাজপুত রাজাদের দুর্গ-কেন্দ্রিক পার্বত্য আমের শহরটি হেরিটেজ শহরের মর্যাদা পায়৷ আপাতত এটিই দেশের একমাত্র হেরিটেজ শহর৷ চৈতন্যর জন্মস্থান এবং বৈষ্ণব পীঠস্থানই নবদ্বীপের একমাত্র পরিচিতি নয় বলে মনে করেন বিদ্বজ্জনেরা৷ এখানে গড়ে উঠেছিল শাক্ত আন্দোলনও৷ শাক্ত ধর্মের অন্যতম কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের জন্মস্থান নবদ্বীপ৷

আজকের কালী মূর্তির ভাবনা তাঁরই৷ পাল আমলে এখানে শুরু হয়েছিল বৌদ্ধচর্চা৷ তৈরি হয়েছিল সুবর্ণ বিহার৷ যা কালের নিয়মে আজ হারিয়ে গিয়েছে৷ তবুও প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা চালালে সেখানে মিলতে পারে নানা ইতিহাস৷ রয়েছে বল্লালঢিবি৷ যা সেন বংশের নিদর্শন বহন করে চলেছে৷ এই ইতিহাসকেই পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে চায় রাজ্য সরকার৷ যদিও গঙ্গার গতিপথ পরিবর্তনে প্রাচীন নবদ্বীপের অনেক কিছুই হারিয়ে গিয়েছে৷ প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষকরা বলছেন , ১৭৬০ সালে গঙ্গা নবদ্বীপ শহরকে দ্বিখণ্ডিত করে৷ চৈতন্যদেবের আমলে গঙ্গার গতিপথ ছিল শহরের পশ্চিম প্রান্তে৷ অর্থাত্, আজকের নবদ্বীপ স্টেশনের চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের পাশ দিয়ে৷

কোচবিহার মানেই রাজতন্ত্র৷ এখানে অষ্টাদ্বশ শতাব্দীতে রাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণের হাত ধরে গড়ে উঠেছিল প্রথম পরিকল্পিত শহর৷ এ জন্য ইউরোপ থেকে আনা হয়েছিল কান্ট্রি প্ল্যানারদের৷ রয়েছে মদনমোহন বিগ্রহ৷ বিগ্রহ চুরি গেলেও, এই মন্দিরের সঙ্গে আজও উত্তর-পূর্ব ভারত, বিশেষ করে অসমের মানুষের আবেগের সর্ম্পক জড়িয়ে রয়েছে৷ এই ইতিহাস, স্থাপত্য, জনপদকে সামনে রেখে ঢেলে দুই শহরের সংস্কার ও সংরক্ষণ করতে চায় সরকার৷ এ জন্য প্রাচীন স্থাপত্যর আশপাশে নতুন করে নির্মাণ নিয়ন্ত্রণ করা হবে৷ পর্যটকের সুবিধার্থে নিকাশি থেকে পানীয় জল, বিদ্যুত্ ও চিকিত্সার সুযোগ থাকবে এই সংরক্ষিত শহরে৷ ট্যুরিস্ট গাইড থেকে নানা ধরনের কর্মসংস্থানও তৈরি হবে এই দুই শহরে৷ বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যসচিব থাকাকালীনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ভাবনাকে সামনে রেখে জুনের মাঝামাঝি হেরিটেজ কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে প্রকল্পর রিপোর্ট তৈরির নির্দেশ দেন৷ বৈঠকে কোচবিহার ও নদিয়ার জেলাশাসকদের ডাকা হয়৷

এই ধরনের শহর আত্মপ্রকাশ করলে কেন্দ্রীয় আর্থিক সাহায্য মিলবে৷ আসবেন বিদেশি পর্যটকরাও৷ তার আগে কী ভাবে এই দুই শহরকে ভিন্ন ভাবনায় আত্মপ্রকাশ করনো হবে, তা নিয়ে প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরির সিদ্ধান্ত হয়৷ রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের চেয়ারম্যান শুভাপ্রসন্ন জানান, ‘প্রথমে সমীক্ষা করে দেখতে হবে দুই শহরেই হেরিটেজ স্বীকৃতি দেওয়ার যৌক্তিকতা কতটা৷ এখানে প্রাচীন সৌধ ও স্থাপত্য কী অবস্থায় রয়েছে৷ ইতিহাসটা পর্যালোচনা করা দরকার৷’ কমিশনের সম্মতি নিয়ে সমীক্ষার জন্য বেছে নেওয়া হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিকে (বিই কলেজ)৷ সমীক্ষার দায়িত্ব দেওয়ার জন্য আইনমাফিক তত্কালীন মুখ্যসচিব পুর -দপ্তরকে নির্দেশ দেন৷

পুর -দপ্তরকে মুখ্যমন্ত্রীর আগ্রহের কথা জানিয়ে দ্রুত সমীক্ষা ও নতুন শহরের আইনি খুঁটিনাটি সেরে ফেলার নির্দেশ দেন মুখ্যসচিব৷ রাজ্যের পুরসচিব ওঙ্কার সিং মীনা বলেন , ‘দুই প্রতিষ্ঠানই সমীক্ষা শুরু করে দিয়েছে৷ ’ নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদ -সহ জেলার হেরিটেজ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বিশিষ্টজনেদের সঙ্গে বৈঠক করেন নদীয়ার জেলাশাসক৷ বিশিষ্টদের সকলেই জানিয়ে দেন , নবদ্বীপ পুর এলাকার বাইরে মায়াপুর ও স্বরূপগঞ্জকেও যুক্ত করতে হবে হেরিটেজ শহরের অংশ হিসেবে৷ নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদের শান্তিরঞ্জন দে জানান , গঙ্গা নবদ্বীপ শহরকে দ্বিখণ্ডিত করার আগে স্বরূপগঞ্জ ও মায়াপুর (মিয়াঁপুর চর ) নবদ্বীপ শহরের মধ্যেই ছিল৷ জেলাশাসক এই প্রস্তাব মেনে নেন৷ জেলাশাসক বিশিষ্টদের নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করে দেন৷ যাদের কাজই হবে নবদ্বীপ শহরকে কেন হেরিটেজ শহরের মর্যাদা দেওয়া হবে , তার যৌক্তিকতা ও নিদর্শন তুলে ধরা৷ গত ২৪ জুন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ জনের বিশেষজ্ঞের দল নবদ্বীপ পৌঁছে জেলাশাসকের কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে এলাকা পরিদর্শন করে৷ হেরিটেজ শহরের আইন ও বর্তমান পুর আইনের মধ্যে সামঞ্জস্য আনতে অফিসার পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ হেরিটেজ ঘোষণার পরে এই শহরের নির্মাণের উপর কিছুটা নিষেধজ্ঞা চালু করতে হবে৷ বিশেষ করে বর্তমান হেরিটেজ আইনে পরিষ্কার বলা রয়েছে , প্রাচীন সৌধ ঘোষণার পরে তার একশো মিটারের মধ্যে কোনও নির্মাণ চলবে না৷ ২০০ মিটারের মধ্যে নির্মাণ করতে হলে অনুমতি নিতে হবে৷ প্রাচীন ঐতিহ্যকে সামনে রেখেই শহর আত্মপ্রকাশ করবে৷

আগুন-বোমায় তপ্ত কালিম্পং

$
0
0

এই সময়: এ বার অশান্তির আবহ কালিম্পংয়েও৷ সর্বদলীয় বৈঠকের ঠিক আগের দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠল পাহাড়ের নবগঠিত জেলাটি৷ বুধবার দার্জিলিংয়ে বিশাল র্যালির আয়োজন করে জিএনএলএফ৷ সেই র্যালির খবর পেতেই উত্তেজনা ছড়ায় কালিম্পংয়ে৷ একের পর এক হিংসার ঘটনায় পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে৷ কালিম্পংয়ের সুপার মার্কেট লক্ষ করে বোমা ছোড়া হয়৷ ওই বিল্ডিংয়েরই নীচে তৃণমূল কার্যালয়েও বোমা পড়ে৷ ৪-৫টি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়৷ আগুন লাগানো হয় এনবিএসটিসির অফিসেও৷ পুলিশ বাধা দিলে খণ্ডযুদ্ধ বাধে৷ পুলিশের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে৷ তবে এত কিছুর পরও কালিম্পং থেকে সর্বদলীয় বৈঠকের স্থান বদলায়নি মোর্চা৷ আজ, বৃহস্পতিবার কালিম্পংয়ের পেডংয়েই হবে সর্বদলীয় বৈঠক৷

মঙ্গলবারই সাংবাদিক বৈঠকে মোর্চা প্রধান বিমল গুরুং নাম না-করেই ষষ্ঠ তফসিল প্রসঙ্গ তুলে খোঁচা মেরেছিলেন জিএনএলএফ ও জাপকে৷ এ দিন দার্জিলিংয়ের র্যালিতে সেই বক্রোক্তির জবাব দিতে গিয়ে জিএনএলএফ সভাপতি মন ঘিসিং বলেন,‘আগামী কাল সর্বদলীয় বৈঠকে পরিষ্কার জানিয়ে দেব, ষষ্ঠ তফশিলকে বাতিল করে দিয়েছি৷ আমাদের দাবি গোর্খাল্যান্ড৷’তিনি বলেন, ‘আমরা অশান্তি চাই না৷ আমাদের সকলেরই‘কমন’দাবি গোর্খাল্যান্ড৷ এ নিয়ে আমরা একমত৷’বৈঠকে মোর্চার তিন বিধায়কের পদত্যাগ দাবি করবেন জানিয়ে তিনি বলেন,‘আমরা মনে করছি, তিন জনের বিধায়ক পদে থাকা মানে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও না-কোনও ভাবে যুক্ত থাকা৷ তাই সর্বদলীয় বৈঠকে দাবি করব, মোর্চার তিন বিধায়ক যেন পদত্যাগ করেন৷’

মঙ্গলবারের সাংবাদিক বৈঠকে তোলা আরও একটি অভিযোগ নিয়েও এ দিন মুখ খোলেন মন৷ তিনি বলেন,‘মোর্চার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, আমি ক্রীড়া উন্নয়ন পর্ষদের সদস্য৷ সেখান থেকে যেন আমি পদত্যাগ করি৷ কিন্ত্ত এরকম কোনও সংস্থায় আমি আদৌ যুক্ত নই৷ তাই পদত্যাগেরও প্রশ্ন নেই৷’দার্জিলিংয়ে আগুন জ্বললেও এত দিন শান্ত ছিল কালিম্পং৷ তেমন কোনও গণ্ডগোলের আঁচ পড়েনি এখানে৷ কিন্ত্ত বুধবার দার্জিলিংয়ে জিএনএলএফ-এর মিছিল বেরনোর পর হঠাত্‍ই কালিম্পংয়ের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে৷ কালিম্পংয়ের সুপার মার্কেটে পেট্রল বোমা ছোড়া হয়৷ সুপার মার্কেটের এই বিল্ডিংয়ের নীচেই তৃণমূলের অফিস৷ সেটি লক্ষ করে চলে বোমাবাজি৷ আগুন ধরে যায় তৃণমূল অফিসে৷ এ দিন আন্দোলনকারীরা ৪-৫টি গাড়িতেও আগুন লাগিয়ে দেয়৷

এনবিএসটিসির অফিসেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়৷ পুলিশ বাধা দিতে এলে খণ্ডযুদ্ধ বাঁধে৷ মুহূর্তে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে এলাকা৷ পুলিশকে লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়৷ পাল্টা কাঁদানে গ্যাসের শেল পাঠায় পুলিশও৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে আরও বাহিনী পাঠানো হয়৷ মোর্চার সহকারী সম্পাদক বিনয় তামাং বলেন,‘পুলিশের গুলিতে মোর্চার তিন কর্মী আহত হয়েছেন৷’তবে গুলি চালানোর কথা স্বীকার করেনি পুলিশ৷ মোর্চার হামলায় ৬ জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগ তুলে পুলিশের দাবি, মোর্চাকর্মীরা গুলিতে নয়, কাঁদানে গ্যাসে আহত হয়েছেন৷ রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, এ দিনের গণ্ডগোলে আসলে হরকাবাহাদুর ছেত্রীকেই বার্তা দিল মোর্চা৷ কিছু দিন আগেই জাপ সভাপতি বলেছিলেন,‘অশান্তি করে যদি লাভ হত, তবে ১৯৮৬-র আন্দোলনেই কাজ হত৷’

এই বিবৃতির জেরেই হরকাবাহাদুরের এলাকায় মোর্চা এ দিন শক্তি প্রদর্শন করল বলে মনে করা হচ্ছে৷ আজকের বৈঠকে জাপ ও জিএনএলএফ মোর্চার উপর চাপ সৃষ্টি করবে বলে জানা গিয়েছে৷ তাই বৈঠকের আগের দিন দুই দলকে চাপে রাখতে মোর্চা পাল্টা চাল দিল বলে মনে করা হচ্ছে৷ এ দিন পাহাড়ে তৃণমূলের তিন নেতা পদত্যাগ করেছেন বলে খবর৷ পদত্যাগীদের মধ্যে রয়েছেন, তৃণমূলের পাহাড় কমিটির কার্যকরী সভাপতি এনবি খাওয়াস, সহ-সভাপতি পরিসীমা গিরি (রোশন গিরির বোন) এবং কার্শিয়াং জেলা সভাপতি মোহন লামা৷ তৃণমূল ছেড়ে যাঁরা বেরিয়ে আসছেন, তাঁদের দলে টানতে মোর্চা ও জিএনএলএফ-এর মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে৷ তার জেরেই এ দিনের অশান্তি৷ গতকাল তিনধারিয়াতে কয়েকশো তৃণমূল কর্মীর জিএনএলএফের যোগ দেওয়ার কথা ছিল৷ কিন্ত্ত শেষ মুহূর্তে মোর্চার আপত্তিতে তা আটকে যায়৷

হিংসায় ক্ষুব্ধ জিএনএলএফ-জাপ, আজ বন্ধে ছাড়ের দাবি

$
0
0

সঞ্জয় চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি

সরকারের সঙ্গে তীব্র সংঘাত, পুলিশের সঙ্গে প্রায় নিত্য ঝামেলা ইত্যাদিকে ছাপিয়ে পাহাড় ক্রমেই তেতে উঠছে জিএনএলএফ-জন আন্দোলন পার্টির সঙ্গে মোর্চার বিরেধে৷ তিন বার সর্বদলীয় বৈঠক হলেও মোর্চা ও পাহাড়ের অন্য দলগুলির মধ্যে সন্দেহ আর অবিশ্বাসের বাতাবরণ ক্রমশ বাড়ছে৷ বৃহস্পতিবার আর এক দফা সর্বদলীয় বৈঠকের আগে বিরোধ এতই প্রকট হয়ে পড়েছে যে তাতে পাহাড়ে অশান্তি আরও বাড়ার সম্ভাবনায় উদ্বিগ্ন প্রশাসনও৷ দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক জয়সী দাশগুপ্ত বলেন,‘আমরা পরিস্থিতির দিকে নদর রেখেছি৷ প্রয়োজনে পদক্ষেপ করা হবে৷’জিএনএলএফ গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে নেমে পড়ার পরেও বুধবার পাতলেবাসে সাংবাদিক বৈঠকে তাদের পুরোনো ষষ্ঠ তফসিলের দাবি খুঁচিয়ে তুলেছিলেন মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুং৷

তাতে ক্ষুব্ধ জিএনএলএফ নেতৃত্ব এর পিছনে আন্দোলনকে পিছন থেকে ছুরি মারার ষড়যন্ত্র আছে বলে মনে করছেন৷ জিএনএলএফের সাধারণ সম্পাদক মহেন্দ্র ছেত্রী বুধবার বলেন,‘এক সময়ে আমরা ষষ্ঠ তফসিলে পাহাড়ের অন্তর্ভূক্তি দাবি করলেও মোর্চা পৃথক রাজ্যের দাবিতে পথে নামার পরে আমরাও আন্দোলনে অংশ নিয়েছি৷ এখন আবার ষষ্ঠ তফসিলের কথা উঠছে কেন? আমরা এখন পৃথক রাজ্যই চাই৷ আর কেউ এই দাবি থেকে সরে দাঁড়াতে চাইলেও আমরা সরব না৷ আমরা চাই, এখনই কেন্দ্রীয় সরকার হস্তক্ষেপ করুক এবং আলোচনার জন্য পাহাড়ের রাজনৈতিক দলগুলিকে ডাকুক৷ না-হলে দার্জিলিং কিন্ত্ত কাশ্মীরে পরিণত হবে৷’জিএনএলএফের সন্দেহ, সর্বদলীয় কমিটি থেকেও তাদের সরাতে চাইছে মোর্চা৷

জিএনএলএফের এক নেতা বলেছেন,‘পাহাড়ে মোর্চার পরে দ্বিতীয় বড় দল আমরাই৷ সেজন্যই হয়তো মোর্চা নেতারা আমাদের ভয় পাচ্ছেন৷’ বিভাজনের আবহেই বুধবার দুই দল আলাদা সভা করে দার্জিলিংয়ে৷ জেলা শহরে একাই মিছিল করে মোর্চা৷ আর ক্লাব হাউস রোডে আলাদা সভা করে জিএনএলএফ৷ অবশ্য শুধু এই দুই দল নয়, পাহাড়ের অন্য দলগুলিও মোর্চার থেকে নিজেদের দূরত্ব বাড়াতে শুরু করেছে৷ জন আন্দোলন পার্টির শীর্ষ নেতা হরকাবাহাদুর ছেত্রী স্বীকারই করলেন,‘সর্বদলে পারস্পরিক বিশ্বাসের অভাব রয়েছে৷’মোর্চা বিরোধী পাহাড়ের দলগুলির সন্দেহ, সর্বদলের নামে তাদের সামনে রেখে মোর্চা আদতে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে দর কষাকষি করছে৷

গোর্খাল্যান্ডের বাইরে অন্য কোনও ভাবে সমঝোতা হলে যাতে পুরো দায় তাদের ঘাড়ে না-পড়ে, সেজন্যই ষষ্ঠ তফসিলের প্রশ্নটিকে মোর্চা সামনে আনছে বলে তাদের মত৷ জন আন্দোলন পার্টির আর এক নেতা বলেন,‘মোর্চা ভালো করেই জানে, পৃথক রাজ্যের দাবিতে কেন্দ্রীয় সরকারের সম্মতি পাবে না৷ সেজন্যই সর্বদলকে সামনে রেখে স্বশাসনের পাশাপাশি আরও কিছু সুবিধা আদায় করতে দর কষাকষি করছে৷’বৃহস্পতিবারের সর্বদলীয় সভায় বন্ধে ছাড় দেওয়ার প্রসঙ্গ আসতে পারে৷ সেক্ষেত্রে অন্য দলগুলি আপত্তি তুলবে বলে জানা গিয়েছে৷ অন্য দলগুলি অন্তত দু’-তিন দিনের জন্য বন্ধে ছাড় দেওয়ার পক্ষপাতী৷ মোর্চা নেতৃত্ব বুধবার নতুন কিছু না-বললেও বন্ধের থেকে পিছিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেননি৷

বরং এই আন্দোলনকে ‘অন্তিম লড়াই’বলে মঙ্গলবার বন্ধের রাজনীতিকেই সিলমোহর দিয়েছিলেন বিমল গুরুং৷ বন্ধকে কেন্দ্র ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগেরও বিরোধী মোর্চা ছাড়া অন্য দলগুলি৷ ফলে এ সব হিংসার দায় নিতে তারা রাজি নয়৷ পৃথক রাজ্যের দাবিদার একটি দলের নেতা বলেন,‘বন্ধ ডেকেছে মোর্চা৷ বন্ধে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি এবং অশান্তির দায়ও মোর্চাকেই নিতে হবে৷’মোর্চার হুমকির কাছে নতি স্বীকার করে এদিন দার্জিলিংয়ের দুই তৃণমূল নেতা-নেত্রী এন বি খাওয়াস ও পরিসীমা গিরি এবং কালিম্পংয়ের মিলন লামা দল ছেড়েছেন৷


অক্ষরেখা-ঘূর্ণাবর্তের দৌলতে বৃষ্টি চলবে

$
0
0

এই সময়: ভরদুপুরে টানা বৃষ্টি৷ পথে ভোগান্তি, জলও জমে যায় অনেক রাস্তায়৷ ছবিটা মূলত উত্তর ২৪ পরগনার৷ বৃষ্টি হয়েছে কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও৷ তবে পরিমাণ তুলনায় কম৷ আবহবিদদের আশ্বাস, হাল্কা থেকে মাঝারি পরিমাণ বৃষ্টিপাত চলবে৷

উত্তরবঙ্গ ও উত্তরপ্রদেশের উপর দু’টি ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে৷ তার জেরে প্রবল বর্ষণ চলছে বিহার ও উত্তরবঙ্গে৷ দক্ষিণবঙ্গের ভরসা পাঞ্জাব থেকে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত নিম্নচাপ অক্ষরেখা৷ এ দিন তার সঙ্গী হয়েছে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের নতুন ঘূর্ণাবর্ত৷ এতে বৃষ্টি বাড়ার পরিস্থিতি ক্রমশ অনুকূল হয়ে ওঠে৷

এ দিন রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত দমদমে বৃষ্টি হয়েছে ৫৭ মিলিমিটার৷ অল্প সময়ে এতটা বৃষ্টিতে আশপাশের অনেক এলাকায় সাময়িক ভাবে জল দাঁড়িয়ে যায়৷ বৃষ্টি নামে মহানগরেও৷ আলিপুরে বৃষ্টি হয়েছে ১৪.৩ মিলিমিটার৷ ঘূর্ণাবর্ত-অক্ষরেখা জোটের দাওয়াইয়ে আপাতত রোজই বৃষ্টি চলবে৷ মেঘলা থাকবে আকাশ৷ ফলে গরম সহসা মাথাচাড়া দিতে পারবে না৷

শান্তি চাইছে বসিরহাট

$
0
0

কৌশিক সরকার, বসিরহাট

বুধবার বিকেলেও বড় কালীবাড়ি পাড়ায় একসঙ্গেই বসেছিলেন মেহমুদ্দিন মণ্ডল, সেলিম গাজি, শম্ভুনাথ দে-রা৷ উদ্যোক্তা বসিরহাট পুরসভার কংগ্রেস কাউন্সিলর বাবু গাজি৷ সেই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল, এলাকায় নতুন করে অশান্তি এড়াতে উদ্যোগী হবে দুই সম্প্রদায়ই৷ বৃহস্পতিবার এলাকায় শান্তি মিছিলও হবে৷ কিন্তু বুধবার রাতেই কয়েকটি এলাকায় নতুন করে অশান্তির খবর আসায় ভেস্তে যায় সেই উদ্যোগ৷

এ দিন সকালে ত্রিমোহনী, কালীবাড়ি পাড়া এলাকাগুলিতে বিক্ষিন্ত ভাবে একটি-দু’টি করে দোকানপাট খুলতে শুরু করলেও দুপুরের পর থেকে ফের অশান্ত হতে শুরু করে বসিরহাটের কিছু এলাকা৷ গত কয়েকদিনের অশান্তির জেরে ব্যাহত স্বাভাবিক জীবনযাপন, যা নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে৷ বিশেষত, স্থানীয় প্রশাসন এবং শাসকদলের স্থানীয় নেতাদের ভূমিকায় এলাকায় যথেষ্ট ক্ষোভ৷ যদিও সব পক্ষই এখন চাইছে, দ্রুত শান্তি ফিরুক৷ বসিরহাট পুরসভার কর্মী ইন্দ্রজিত্ অধিকারী৷ গত কয়েকদিনের ঘটনায় কাজে যেতে পারেননি ইন্দ্রজিত্৷ ত্রিমোহনীতে তাঁর বিধবা মা উমা অধিকারীর ছিল একটি চায়ের দোকান৷ গোলমালে ভেঙে গিয়েছে তাঁর দোকানও৷ গত চারদিন বাড়ির বাইরে বেরোতে পারেননি শম্ভুনাথ দে-র পরিবারের কেউই৷ ত্রিমোহনীতে বন্ধ দোকানগুলির সামনে বসে গল্প করছিলেন মেহবুদ্দিন গাজি, সেলিম গাজিরা৷ মেহবুদ্দিন গাজি জানান, গত রাতেও জোড়া পেট্রোল পাম্পের কাছে তপার চরে হামলা হয়েছে৷ বোমায় ক্ষতি হয়েছে এলাকার কয়েকটি বাড়ি৷ তাঁদের সকলের বক্তব্য, ‘এই ভাবে কাজকর্ম বাদ দিয়ে কি বাড়িতে বসে থাকা যায়? দোকানপাটেও তো যেতে হয়৷ সময় মতো প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে এমন হত না৷’ তাঁদের সাফ কথা, বসিরহাটের সাংসদ, বিধায়ক, পুরসভার চেয়ারম্যান কেউই চারদিনে একবার আসতে পারলেন না? এঁরা অনেকেই শাসকদলেরই কর্মী-সমর্থক৷ এ দিন বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাস এলাকায় গেলে তাঁকে ঘিরেও বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় মানুষেরা৷ বেলা গড়ানোর পরে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের পরিস্থিতিও ঘোলাটে হতে শুরু করে৷ দেবাশিস ঘোষ, আজিজুল ইসলাম, আবু হোসেন গাজি, প্রীতম মৃধাদেরও বক্তব্য, ‘আমাদের স্বাভাবিক জীবন ফেরাতে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার ? এমন আতঙ্কের পরিবেশে আর কতদিন থাকতে হবে আমাদের? গত কয়েকদিনে যে এলাকাগুলিতে গোলমাল রয়েছে, সেখানে পুলিশ এবং বিএসএফ মোতায়েন থাকলেও গোটা এলাকায় নজরদারি খুবই কম৷ কোনও এলাকায় দু-তিনজন লাঠিধারী পুলিশ বসে রয়েছেন বটে , তবে তাঁদের চোখেমুখেই ফুটে উঠেছে অসহায়তার অভিব্যক্তি৷

স্থানীয় বাসিন্দা শম্ভুনাথ দে-র ছেলে জানান, ‘এ বার ঈদে অন্তত দশ বাড়ি থেকে সিমুই, মিষ্টি পাঠিয়েছিলেন আমাদের মুসলমান প্রতিবেশীরা৷ এই এলাকার কোনও হিন্দু বাড়ির বিয়ে, অন্নপ্রাশনেও নিমন্ত্রণ থাকে মুসলিমদের৷ এমন পরিস্থিতি তো কখনও হয়নি৷’ এ বারের ঘটনায় তাই হকচকিয়ে গিয়েছেন সকলেই৷ কাঠ ব্যবসায়ী নিতাই কুণ্ডুর বাড়ি, কাঠের গোলা ভাঙচুর হয়েছে গত কয়েকদিনে৷ তাঁরও বক্তব্য, কিছু দুষ্কৃতীকে দিয়েই এ কাজ করানো হয়েছে৷ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অনেকেই বলছেন, ক্ষোভের কারণে দোকান ভাঙচুর হলে বুঝতাম৷ দোকান জ্বালিয়ে দিলেও না-হয় একটা কথা ছিল৷ কিন্ত্ত, দোকান থেকে জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া তো দুষ্কৃতীদেরই কাজ৷ মহম্মদ ইমাম হাসান, মেহবুদ্দিন মণ্ডলেরও বক্তব্য, প্রশাসন আগে নজর দিলে এই ক্ষতিটা এড়ানো যেত৷

শম্ভুনাথ দে, ইন্দ্রজিত্ অধিকারী, বাবু গাজি বা মহম্মদ ইমাম হোসেনদের বক্তব্য, কয়েকদিনে দুই সম্প্রদায়েরই যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, যাঁদের সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে, তাঁদের ক্ষোভ অনেক বেশি৷ স্থানীয় স্তরে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ প্রশাসনের তরফে নেওয়া হলে তবেই তা বেশি ফলপ্রসূ হতে পারে৷ তবে বসে নেই বসিরহাট৷ শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা এখনও জারি৷

মুখ্যমন্ত্রীর কাজে সন্তুষ্ট কেশরীনাথ

$
0
0

এই সময়: তৃণমূল-বিজেপি রাজনৈতিক কাজিয়া দু’ধাপ চড়লেও, রাজভবন বনাম নবান্নের প্রত্যক্ষ সংঘাত কিছুটা স্তিমিত হল বৃহস্পতিবার৷ এ দিন মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপাল প্রশ্নে কোনও মন্তব্য করেননি৷ গত দু’দিনের বিস্ফোরক মন্তব্যের পর এ দিন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর মন্তব্যে বরং কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে রাজ্য সরকার৷ রাজ্যপাল এ দিন বলেন, ‘আমি যা বলার ইতিমধ্যেই বলেছি৷ শান্তি ও আইনের শাসন ফেরাতে হবে৷ আমি খুশি, যে রাজ্য সরকার সেই লক্ষ্যেই পদক্ষেপ করছে৷’ এর মধ্যেই বাদুড়িয়া, বসিরহাটে শান্তি ফেরাতে সকলকে উদ্যোগী হতে আহ্বান জানিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার রাতে ‘এই সময়’-কে বলেন, ‘পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলির বসিরহাটে যাওয়া উচিত হবে না৷’

আজ শুক্রবারই বিজেপি, কংগ্রেস ও বাম প্রতিনিধি দলের অশান্ত এলাকায় যাওয়ার কথা৷ বুধবার রাজভবন দ্বিতীয় দফায় আরও কড়া বিবৃতি জারি করার পরও মুখ্যমন্ত্রী নিজে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি৷ এ দিন নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী পরিস্থিতি সম্পর্কে সকলকে অবহিত করেন৷ সূত্রের খবর প্রত্যেক মন্ত্রীকে নিজের জেলায় পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে বলেছেন মমতা৷ কোথাও কোনও গুজব কানে এলে বা গোলমাল পাকানোর চেষ্টা দেখলেই মন্ত্রীরা যাতে পুলিশ-প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে তত্পর হন তাও বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বৈঠক শেষ হওয়ার পর আমলা ও আধিকারিকরা ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী শুধু মন্ত্রীদের সঙ্গে মিনিট দশেক আলাদা ভাবে কথা বলেন৷ মন্ত্রীরা কে কী বলছেন, করছেন সব খবরই তাঁর কাছে আছে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বাদুড়িয়া-বসিরহাটের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে সুনির্দিষ্ট কিছু দায়িত্ব দিয়েছেন মমতা৷ এ দিন নবান্ন থেকে বেরনোর সময় মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যপাল নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এ নিয়ে কোনও কথা বলব না৷’ উত্তর ২৪ পরগনায় অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মমতা বলেন, ‘সেন্ট্রাল ফোর্স তো রয়েছেই৷ যারা সীমান্তে পাহারা দেয়৷’ রাজ্যের এক শীর্ষ আমলাও বলেন, ‘কেন্দ্রীয় বাহিনী আমরা যেখানে চাইছি, যেমন দার্জিলিং, সেখানে দিল্লি দিচ্ছে না৷ এই মুহূর্তে উত্তর ২৪ পরগনায় আমাদের অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী দরকার নেই৷’

প্রস্তাবিত শান্তিবাহিনী নিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ রাজনীতি-নিরপেক্ষ হবে৷ এ ব্যাপারে রাজ্য পুলিশের ডিজি পরে একটি নির্দেশিকা জারি করবেন৷’ নবান্নের অপর একটি সূত্রের খবর, রাজ্যে সাম্প্রদায়িক উস্কানি ছড়াচ্ছে এমন বেশ কয়েকটি ধর্মীয় সংগঠনকে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন৷ তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে চলেছে রাজ্য সরকার৷

হাতে হাত রেখে রাত জাগছেন গণেশ -আমজাদরা

$
0
0

জয় সাহা, বসিরহাট

দু’রাত আগের কথা৷ খবর আসতে শুরু করল, ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট৷ তখন থেকেই হাতে হাত রেখেছেন আমজাদ-গণেশরা৷

দেখি কার এত দম যে আমাদের বন্ধুত্ব ভাঙে৷ বলতে বলতে আমজাদের দিকে একবার তাকিয়ে নেন গণেশচন্দ্র বাছার৷ মধ্য চল্লিশের আমজাদ আলি গাজিও বন্ধুর হাতে হাত রেখে সায় দেন৷ গ্রামবাসীরা হল্লা করে বুঝিয়ে দেন, ভাগাভাগি নয়, পাশাপাশি থেকেই এ গ্রামকে রক্ষা করতে হবে ওঁদের৷ সেই হল্লায় মিশে যায় শয়ে শয়ে খলিল-নির্মলদের প্রতিজ্ঞা৷ গোষ্ঠী সংঘর্ষের উত্তন্ত বসিরহাট শহর৷ ইছামতী নদী পেরিয়েও সেই উত্তাপ থামেনি৷ গ্রামগুলিতে বিভাজনরেখা ক্রমে স্পষ্ট হচ্ছে৷ এক রাশ কালোর মাঝেও আলো জ্বেলে সম্প্রীতির কথা বলছে বসিরহাটের একটি গ্রাম৷ সংগ্রামপুর পূর্বপাড়া৷ দ্বীপের মতো এই গ্রামই এখন অন্যদের অনুপ্রেরণা৷ যেখানে আজানের সুর মিশে যাচ্ছে কালী মন্দিরের ঘণ্টায়৷ গ্রামের সব সম্প্রদায় এক হয়েছেন বিভেদ দূর করবেন বলে৷ সম্প্রীতি রক্ষায় রাতপাহারায় বসছেন গ্রামের সব পুরুষ৷ মেয়ে-বউরা এক সঙ্গে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন গোলা ভরা ধান৷ সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর এই গ্রামেই অনেকে ভয়ে সিঁটিয়ে গিয়েছিলেন ঘরে৷ সব সম্প্রদায় এক হয়ে সেই ভীত মানুষগুলোর বাড়িতে গিয়ে অভয় দিয়ে এসেছেন৷ বলে এসেছেন, ‘ভয় নেই৷ আগুন জ্বলতে দেব না৷’

এই গ্রামের প্রায় ৬০০ পরিবারের বসবাস৷ হিন্দুর ঘরের পাশেই মুসলিমের একচালা বাড়ি৷ মাঠে, ঘাটে, ইটভাটায় হররোজ যেমন পাশাপাশি থেকে কাজ করেন, এই সঙ্কটেও তেমনই একজোট৷ গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা গণেশের কথায়, ‘কয়েক দিন ধরেই ঝামেলার খবর পাচ্ছিলাম৷ আমাদের ভাল লাগছিল না ব্যাপারটা৷ এর মধ্যে শুনতে পাই একদল বাইরের লোক আমাদের গাঁয়ে ঢুকতে চাইছে গোলমাল পাকাবে বলে৷’ এই ঘটনা মঙ্গলবার দুপুরে৷ পরের কথা কেড়ে নেন স্থানীয় কৃষক আমজাদ আলি৷ তাঁর বক্তব্য, ‘সঙ্গে সঙ্গে গায়ের আটচালায় গ্রামবাসীরা এক হই৷ ওখানে শপথ নিই, এই গ্রামটাকে ওদের হাত থেকে বাঁচাতেই হবে৷ পাশ থেকেই ইটভাটার শ্রমিক নির্মল মণ্ডল বলে ওঠেন, ‘কত গায়ের জোর ওদের? বল তোমরা?’

সঙ্গে সঙ্গে আরও জোরে হল্লা করে সমর্থনের জোয়ার ওঠে মেঠো রাস্তায়৷ গুজব যাতে না ছড়িয়ে পড়ে তার জন্য গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রচার করছেন মিজারুল-সুকেশ সৌভিকরা৷ প্রত্যেকেই যুবা৷ কেউ নির্মাণশিল্পের সঙ্গে যুক্ত, কেউ আবার কলকাতায় কোনও হোটেলে চাকরি নিয়েছেন৷ গ্রামের এই সঙ্কটে তাঁরা ফিরে এসেছেন৷ এই যুবারা প্রত্যেকেই স্কুলের গণ্ডি পেরিয়েছেন৷ কেউ কেউ উচ্চ মাধ্যমিক পাশ৷ ফলে কোনটা গুজব, কোনটা বাস্তব সেই হিতাহিত জ্ঞান ওঁদের আছে৷ সুকেশ পাত্র যেমন বলছিলেন, ‘যা করছি একসঙ্গে করছি৷ গুজবে কান দিয়ে যাতে গাঁয়ের লোকগুলো সর্বস্ব হারিয়ে না-ফেলে, সেই কাজই তো করছি৷’ আর এক যুবা মিজারুল হোসেনের কথায়, ‘মন্দির-মসজিদ কোনও কিছুতেই যাতে আঘাত নেমে না-আসে, তার জন্য রাত জাগছি৷ কখনও আমি মন্দিরে রাত কাটাই, কখনও আবার সুকেশ মাজারে থাকে৷’ কিন্ত্ত প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে ওঁদের মধ্যে প্রচুর ক্ষোভ৷ স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সদস্য সমরেশ ঘোষের কথায়, ‘কোথায় পুলিশ? এই গ্রামকে তো আমরাই আগলে রেখেছি৷’

এই বিভাজনের আবহাওয়াতেও কী করে পারলেন সব কিছু সামাল দিতে? উত্তর দেন খলিল মণ্ডল৷ তাঁর জবাব, ‘সামাল দেওয়ার কী আছে৷ সামলেই তো ছিল সব৷ সেই ছোটবেলা থেকে সবাই এক দাওয়াতে খেয়ে-খেলে বড় হয়েছি৷ দু’দিনের আতঙ্ক সেই বন্ধুত্ব ভাঙবে৷ এমন জোর তার নেই গো!’

সর্বদলেও বন্ধের পথে রইল মোর্চা

$
0
0

চিত্রদীপ চক্রবর্তী, কালিম্পং

সঙ্গীদের তীব্র চাপ উপেক্ষা করেই পাহাড়ে টানা বন্ধের দাবিতে অটল রইল বিমল গুরুংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা৷ বৃহস্পতিবার কালিম্পংয়ের পেডংয়ে সর্বদলীয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ এ দিন প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার বৈঠক শেষে মোর্চার মুখপাত্র বিনয় তামাং বলেন , ‘আপাতত বন্ধ প্রত্যাহার বা শিথিল করার কোনও ভাবনাচিন্তা আমাদের নেই৷ আমাদের দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করেছে বৈঠকে হাজির ১৫টি দল এবং সংগঠন৷ ’ যদিও এই বৈঠকেই বন্ধ নিয়ে তাদের আপত্তি জোরালো ভাবেই জানিয়েছিল জিএনএলএফ এবং হরকাবাহাদুর ছেত্রীর দল জাপ৷ একই সঙ্গে পাহাড়ের আন্দোলন এ বার ডুর্য়াস এবং তরাইতেও ছড়াতে চাইছে মোর্চা৷


এ দিন সর্বদলীয় বৈঠকের শুরুতেই জিএনএলএফের পক্ষ থেকে মোর্চার তিন বিধায়কের পদত্যাগের দাবি তোলা হয়৷ মোর্চা নেতারাও জিএনএলএফকে পাল্টা চাপে ফেলার হোমওর্য়াক করে এসেছিলেন৷ তাঁরা বলেন, তা হলে সুবাস ঘিসিংয়ের পুত্র মন ঘিসিংকেও সরকারি পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে৷ যা তিনি এখনও করেননি৷ এর পরেই মোর্চা নেতারা পাল্টা প্রস্তাব দেন, ‘বরং আমরা সর্বসম্মত ভাবে সিদ্ধান্ত নিই যে পাহাড়ের সমস্ত ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যানরা পদত্যাগ করে সমতল থেকে পাহাড়ে উঠে আসুন এবং আমাদের আন্দোলনে যোগ দিন৷’ এ দিনের বৈঠকে পাহাড়ের সাম্প্রতিক অশান্তির প্রসঙ্গও ওঠে৷ মোর্চা নেতারা জবাব দেন, পুরো ঘটনাটাই রাজ্য পুলিশের মদতে ঘটছে৷ পাহাড়ে হিংসায় বারবার মোর্চার নাম জড়ালেও, দলের নেতারা প্রশ্ন তোলেন, পুলিশ উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও কী করে একের পর এক নাশকতামূলক কাজকর্ম ঘটছে পাহাড়ে৷ মূলত, পুলিশি অত্যাচারকে পাহাড়ের মানুষের সামনে তুলে ধরতে কো-অর্ডিনেশন কমিটি ফর গোর্খাল্যান্ডের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি সেল খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ যার মধ্যে একটি হল হিউম্যান রাইটস সেল৷ এদের কাজ হবে পাহাড়ের যে সমস্ত আন্দোলনকারী বা বাসিন্দার উপর পুলিশি অত্যাচার হবে তাদের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে অভিযোগ দায়ের করানো৷ দ্বিতীয় সেলটি হল, লিগ্যাল সেল৷ এই সেলের কাজ হবে হিউম্যান রাইটস সেলের থেকে নথিপত্র সংগ্রহ করে রাজ্য সরকার এবং রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে সাহায্য করা৷

গত কয়েকদিন ধরে জিএনএলএফ এবং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার মধ্যে কার্যত আড়াআড়ি ভাবে লড়াই শুরু হয়েছিল৷ কিন্ত্ত, এ দিনের বৈঠকে ফের একসঙ্গে মিটিং-মিছিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ তবে এ দিনের বৈঠকে সবচেয়ে তাত্পূর্ণ বিষয় ছিল, গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের দাবিকে পাহাড় থেকে সমতলে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত৷ কমিটির সব সদস্যই বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে বলেন, ‘আমাদের কাছে গোর্খাল্যান্ড বলতে শুধু পাহাড় বোঝাচ্ছে না, এতে রয়েছে তরাই এবং ডুয়ার্সের বেশ খানিকটা অংশ৷ ফলে, এই আন্দোলনে তাদেরও যুক্ত করা প্রয়োজন৷’

ইতিমধ্যে তরাই এবং ডুয়ার্সে কর্মীদের নিয়ে আলাদা করে বৈঠক করেছেন মোর্চার নেতারা৷ কী ভাবে তাদের আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে সেই বিষয়েও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাঁদের৷ ২০০৮-০৯ সালেও আন্দোলনকে একই কায়দায় ডুয়ার্স এবং তরাইয়ে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল মোর্চা৷ কিন্ত্ত আদিবাসী বিকাশ পরিষদের প্রবল চাপের মুখে সেই আন্দোলন তেমন দানা বাঁধতে পারেনি৷ সে সময় দু’পক্ষের প্রবল সংঘর্ষে বেশ কয়েকরজনের প্রাণও যায়৷ রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আদিবাসী বিকাশ পরিষদের অস্তিত্ব কার্যত নেই৷ পরিষদের সিংহভাগ সদস্যই নাম লিখিয়েছে শাসকদল তৃণমূলে৷ ফলে, এ বার মোর্চার আন্দোলন সমতলে ছড়িয়ে দিতে এলে সরাসরি সংঘাতের সম্ভাবনা শাসকদল তৃণমূলের সঙ্গে৷ পাহাড়ে একচেটিয়া ক্ষমতা দেখানো মোর্চা, সমতলে এসে তৃণমূলের সঙ্গে কতটা লড়াই করতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে পাহাড়ের রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে৷

এক অ্যাম্বুল্যান্সে হিন্দু-মুসলমান, স্যালাইন হাতে ধরে হিন্দু ছেলে

$
0
0

মৈত্রেয়ী ভট্টাচার্য

একটাই অ্যাম্বুল্যান্স৷ হাসপাতালে এলেন দুই আহত৷ এক জন পারিবারিক সূত্রে হিন্দু৷ অন্য জন মুসলিম৷ দু’জনেরই স্যালাইন ধরে যিনি, তিনি হিন্দুর ছেলে৷ হাসপাতালে এনে দু’জনকে ভর্তি করালেন তিনিই৷ বৃহস্পতিবার সকালে মৃত্যু হয়েছে বসিরহাটের ট্যাঁটরা পাইকপাড়ার কাছে দুষ্কৃতীদের হামলায় গুরুতর জখম কার্তিক ঘোষের৷ সুস্থ হওয়ার পথে ফজলুল ইসলাম৷ ওয়ার্ডে বসে মরমে মরে যাচ্ছেন তিনি৷ বার বার বলছেন, ‘আমরা তো ভালোই ছিলাম মিলেমিশে৷ কেন এমন হল ?’

বুধবার সন্ধ্যায় কার্তিক ঘোষের ছেলে প্রভাশিস নিজের দায়িত্বে আরজি করে এনে ভর্তি করে প্রাণে বাঁচিয়েছেন ফজলুলকে৷ বেডে শুয়ে এখন প্রভাশিসের পরিবারের জন্য আল্লাহর কাছে শান্তির প্রার্থনা করছেন অপরিচিত মুসলিম ভদ্রলোক৷ প্রভাশিস-ফজলুলদের দেখে কে বলবে, বসিরহাটে লাগাম ছাড়া উত্তেজনার পিছনে ধর্মীয় ভিন্নতা? এ দিন দুপুরে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ইএনটি বিভাগের বেডে কোনও মতে উঠে বসেছিলেন ফজলুল৷ বাঁ গালে লাগানো ফেট্টি৷ চোখ ফুলে ঢোল৷ কথা বলার অবস্থা নেই৷ নীচে রাস্তায় তখন মৃত কার্তিক ঘোষের দেহ দখলের লড়াইয়ে মেতেছে বিজেপি-তৃণমূল৷ জানলা দিয়ে সে দিকেই তাকিয়ে ছিলেন বছর পঞ্চাশের মানুষটি৷ দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল আচমকাই৷ অসুস্থ এই মানুষটা জানেন, আজ প্রাণে বেঁচে একটি হিন্দুর ছেলের জন্যই৷ ‘খুব ভালো লোক ওরা৷ ভদ্রলোকের খুব চোট লেগেছিল৷ কাল বিকেলে বসিরহাট হাসপাতাল থেকে আমাকে ওই ছেলেটাই ওর বাবার সঙ্গে অ্যাম্বুল্যান্সে করে এনে ভর্তি করে,’ ধীর গলায় বলেন ফজলুল৷ পাইকপাড়ায় নিজের মুরগির দোকান বন্ধ করে ফেরার পথে বুধবার দুপুরে গণ্ডগোলের মাঝে পড়ে যান ফজলুল৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের ছোড়া শেলে গুরুতর আহত হন তিনি৷ পুলিশের উদ্যোগেই বসিরহাট হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে৷

কার্তিক ঘোষেরও মুরগির ব্যবসা৷ বসিরহাট চৌরাস্তায় মুরগির সাপ্লাই দিয়ে ফেরার পথে দুষ্কৃতীদের হামলার শিকার হন বছর পঁয়ষট্টির ভদ্রলোক৷ ছেলে প্রভাশিস বলেন, ‘বাবার গলায় তুলসীকাঠের মালা দেখে হামলা করেছিল ওরা৷ মাথায় কোপ মারা হয়েছিল৷ হাতটা ভেঙে গিয়েছিল৷ রাস্তার পাশে কচুবনে পড়ে ছিলেন অনেকক্ষণ৷ খবর পেয়ে ছুটে গিয়ে আড়াইটে নাগাদ কোনও মতে অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করে বসিরহাট থানায় নিয়ে গিয়েছিলাম৷’

ডাক্তারবাবুরা প্রাথমিক চিকিত্সা করেছিলেন বটে, কিন্ত্ত কার্তিকবাবুকে প্রাণে বাঁচাতে যে মেডিক্যাল কলেজে দ্রুত নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন--সে কথাও বলেছিলেন প্রভাশিসকে৷ উত্তেজনার পরিস্থিতিতে অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে বেরোতে রাজি হচ্ছিলেন না কোনও চালক৷ ‘কোনও মতে হাতে-পায়ে ধরে সন্ধ্যায় অ্যাম্বুল্যান্স পাই৷ জানতে পারি , ফজলুল ইসলামেরও অবস্থা খারাপ৷ আরজি করে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন৷ কিন্ত্ত, ওঁর বাড়ির লোকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না৷ আমি তাই বাবার সঙ্গে ওঁকে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে নিই৷ দু’জনের স্যালাইনই হাতে ধরে বসেছিলাম,’ টালা থানায় বসে জানান প্রভাশিস৷ ধর্মের ভেদ নিয়ে তরজার মধ্যে এত বড় ঝুঁকি নিলেন? যদি রাস্তায় কিছু হয়ে যেত? ‘তখন সে-সব কিছু ভাবিনি৷ বিশ্বাস করুন৷ বাবাকে যে অবস্থায় দেখছিলাম, বুঝতেই পারছিলাম হয়তো বাঁচিয়ে ফেরাতে পারব না৷ কিন্ত্ত ওই মানুষটাকে হাসপাতালে ফেলে রাখার কারণে যদি কিছু হয়ে যেত, নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না৷ তাই নিয়ে এসেছিলাম,’ বলেন প্রভাশিস৷ বুধবার রাতে কার্তিক ঘোষের সঙ্গেই ফজলুলকে আনতে দেখে কিছুটা অবাক হয়েছিলেন হাসপাতালের ডাক্তারবাবুরাও৷ কার্তিকবাবুকে ভর্তি করে ফজলুলকে সিটি স্ক্যান করাতেও নিয়ে যান প্রভাশিসই৷ পরে ফজলুলের আত্মীয়রা আরজি করে এসে পৌঁছলে দায়িত্ব তাঁদের হাতে তুলে দিয়ে শুধু বাবার দিকে মন দেন বেসরকারি চাকুরে প্রভাশিস৷ বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর আশঙ্কা সত্যি করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন কার্তিক৷ ইএনটি বিভাগে বসে সে খবর কানে আসে ফজলুলের৷ তার পর থেকেই মন আনচান করছে৷ বলেন, ‘এক থালায় হিন্দুদের সঙ্গে ভাত খেয়েছি৷ এখনও গ্রামে একটা হাঁক দিলে ১৫টা হিন্দুর ছেলে জড়ো হয়ে যাবে৷ কী এক ইন্টারনেটের খবর থেকে নাকি ঝামেলা শুরু হয়েছে৷ বিশ্বাস করুন, আমরা এ সব চাই না৷ মনটা বড় খারাপ ওই মানুষটার জন্য৷ আল্লাহর কাছে শান্তি কামনা করি৷’

ফজলুলের আর্তি কি পৌঁছবে মানবতার দুশমনদের কানে?

ভাঁড়ার খালি, পেটের টানে সমতলে

$
0
0

সঞ্জয় চক্রবর্তী ■ শিলিগুড়ি

পাহাড়ে পৃথক রাজ্যের দাবিতে মোর্চার ডাকা বন্ধে এ বার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে মানুষের৷ ১৫ জুন থেকে টানা ২২ দিন বন্ধের জেরে পাহাড়ের রসদে টান পড়েছে৷ অধিকাংশ মানুষের ঘরে খাবার চাল কিংবা আটা নেই৷ অনেকেরই হাতে খাবার কেনার টাকাও নেই৷ ফলে মোর্চার নির্দেশ অমান্য করেই দিনের বেলাতেই পাহাড়ের লোকজন নেমে আসছেন সমতলে৷ কার্শিয়াং , মিরিক থেকে প্রতিদিন গড়ে কয়েকশো মানুষ আসছেন শিলিগুড়িতে৷

পিঠের ব্যাগে যতটা সম্ভব খাবার ভরে ফিরে যাচ্ছেন নিজের ডেরায়৷ কেউ কেউ গাড়িতে এলেও বেশির ভাগই যাতায়াত করছেন বাইক বা স্কুটারে৷ পেটের টানে ১৯ -২০ কিলোমিটার পথ হেঁটেও আসছেন অনেকে৷ ক্লান্ত , ক্ষুব্ধ মানুষগুলির সংবাদমাধ্যমের সামনে একটাই আর্জি, ‘নাম জানতে চাইবেন না৷ ছবি তুলবেন না৷ তা হলে গ্রামে গিয়ে মোর্চা নেতাদের অত্যাচারের মুখে পড়তে হবে৷ ’

বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ি লাগোয়া রোহিণী মোড়ে দেখা গেল ক্ষুব্ধ জনতার যেন স্রোত নেমে আসছে৷ এই মোড় থেকেই একটি রাস্তা সোজা উত্তর দিকে কার্শিয়াংয়ে চলে গিয়েছে৷ অন্য একটি রাস্তা গাড়িধুরা হয়ে মিরিক এবং পানিঘাটায় গিয়েছে৷ মাত্র এক ঘণ্টা ওই সড়কে দাঁড়িয়ে দেখা গেল অন্তত দুশো লোক নেমে এলেন পাহাড় থেকে৷ কার্শিয়াং লাগোয়া এলাকার একটি গ্রামের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব শঙ্খবাহাদুর সুব্বা৷ পাহাড়ি চোরাবাটো (পাহাড়ের পায়ে চলার পথ ) ধরে দু’ঘণ্টা হেঁটে তিনি নেমে এসেছিলেন রোহিণী মোড়ে৷ সেখান থেকে আরও প্রায় তিন কিলোমিটার পথ হেঁটে যান আদলপুরে৷ বাজার থেকে সামান্য আটা , আলু আর পেঁয়াজ কিনে ফেরার আগে রোহিণী মোড়ে জিরিয়ে নিচ্ছিলেন৷ রাগে কাঁপতে কাঁপতে তাঁর যুক্তি , ‘কী হচ্ছে এই বন্ধ করে ? আমাদের তো খেটে খেতে হয়৷ গোর্খাল্যান্ড হলে কাজ করতে হবে না ? আমরা ভালোই বুঝি , গোর্খাল্যান্ড কোনও দিন হবে না৷ স্রেফ নেতাদের পকেট ভরবে৷ ’

বন্ধের জেরে বিপাকে চা বাগানের শ্রমিকেরাও৷ অধিকাংশ বাগানে কাজকর্ম বন্ধ থাকায় শ্রমিকেরা মজুরি পাচ্ছেন না৷ আটা গুলে জলে সেদ্ধ করে খাচ্ছেন বহু মানুষ৷ অনেকে স্রেফ শাকপাতা খেয়ে বেঁচে রয়েছেন৷ রোহিণী মোড়ে দেখা হল তেমনই একটি পরিবারের সঙ্গে৷ অরুণ শর্মা পানিঘাটা এলাকায় থাকেন৷ দু’দিন ধরে ঘরে কোনও খাবার নেই৷ এ দিন সাত সকালে নেমে এসেছেন আদলপুরের উদ্দেশে৷ ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকা তুলবেন৷ তার পরে বাজার সেরে বাড়িতে ফিরবেন৷ নামার পথে অ্যাম্বুল্যান্স , বাইক যা পেয়েছেন , তাতেই চড়েছেন৷ তার পরে রোহিণী মোড় থেকে হেঁটে রওনা হলেন আদলপুরে৷ অরুণ বললেন , ‘পাহাড়ে মোর্চার অত্যাচার৷ শুনছি পুলিশই শিলিগুড়ি থেকে খাবার পাহাড়ে আসতে দিচ্ছে না৷ আমরা যাব কোথায় ?’

এদিনই বিমানে কলকাতা থেকে বাগডোগরায় নেমে প্রথমে ছোট গাড়ি , তার পরে অটো এবং শেষে অপরিচিত এক ব্যক্তির বাইকে চড়ে রোহিণী মোড়ে পৌঁছলেন কার্শিয়াংয়ের বাসিন্দা রমেশ সুব্বা৷ গাড়ি না -পেলে তিনিও চোরাবাটো ধরেই বাড়ি ফিরবেন ঠিক করেছেন৷ ইন্টারনেট অচল থাকায় কয়েকদিন আগে রমেশ শিলিগুড়িতে নেমেছিলেন মাধ্যমিক পাশ ছেলের একাদশে ভর্তির খোঁজ নিতে৷ পরে মত বদলে কলকাতায় দৌড়ন৷ তাঁর সাফ কথা , ‘ছেলেকে পাহাড়েই রাখব না৷ রোজই তো গোলমাল চলছে৷ এ ভাবে পড়াশোনা হয় ? আমাদের নেতারাই দার্জিলিংকে শেষ করে দিচ্ছে৷ ’টানা বন্ধে ক্লান্ত ব্যবসায়ীরাও৷ পেটে টান পড়ছে তাঁদেরও৷ ফলে দোকানপাটও খুলতে শুরু করেছে৷ প্রথমে বন্ধ শুরু হলে শিলিগুড়ি লাগোয়া সালুগাড়া , মিলন মোড়েও বন্ধ শুরু হয়৷ সুকনা তো দিনের বেলাতেই নিঝুমপুরী হয়ে থাকত৷ পুলিশি টহলদারি বাড়ায় সালুগাড়া ও মিলন মোড়ে প্রথমে দোকানপাট খুলে যায়৷ এ দিন দেখা গেল সুকনাতেও দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে৷ অধিকাংশ দোকানপাট খোলা শিমুলবাড়িতেও৷ রোহিণী মোড়েই দোকান খুলে চা , জলখাবার বিক্রি হচ্ছে৷ এমনকী , শিলিগুড়িতে পুলিশ পাহাড়ে খাবার উঠতে বাধা দিলেও , ব্যবসায়ীরাও বিকল্প রাস্তা বার করে নিয়েছেন৷ এদিন সালুগাড়ায় যেমন দেখা গেল , পুলিশি নজরদারি এড়াতে ছোট টেম্পোয় খাদ্যসামগ্রী নিয়ে পাহাড়ের এক বাসিন্দা সোজা চলে গেলেন সামরিক ছাউনির দিকে৷ তিনি বললেন , ‘মোর্চার নজরদারি এড়িয়ে গ্রামে পৌঁছতে পারলে সবই বিক্রি হয়ে যাবে৷ কেবল লাভের জন্য এটা করছি না৷ পাহাড়ের গ্রামের কী অবস্থা হয়েছে তা না -দেখলে বুঝবেন না৷ সব জিনিসই বাকিতে বিক্রি হবে৷ পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে লোকে হয়তো টাকা দেবে৷ ’


ধীরে হলেও ছন্দে ফিরছে বসিরহাট

$
0
0

অনির্বাণ ঘোষ, বসিরহাট

জুম্মাবারে নমাজ সেরেই তড়িঘড়ি লোক জুটিয়ে বেরিয়ে পড়লেন ঘোজাডাঙার সরিফুল মণ্ডল৷ শান্তিমিছিল আছে যে! সেই মিছিলে পানিতরের রজত ভৌমিকের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল সরিফুলের৷ রজত অবশ্য তখন একটু তাড়ায়৷ সন্তোষী পুজোর জোগাড় করতে হবে তো! কিন্ত্ত দোকানপাট বাজারহাট যে খোলার নামই নেই৷ পর পর দু’দিন নানা অশান্তির জেরেই ভেস্তে গিয়েছিল যৌথ শান্তিপ্রক্রিয়া৷ শুক্রবার আর সুযোগ নষ্ট করতে চায়নি কেউ৷ বৃথা যায়নি চেষ্টা৷ বসিরহাটের সীমান্তবর্তী এলাকা ঘোজাডাঙা, পানিতরে দলে দলেই লোকজন মিলেমিশে পা মিলিয়েছেন শান্তিমিছিলে৷ বসিরহাট পুর এলাকার ১ নম্বর আর ২৯ নম্বর ওয়ার্ডেও হয়েছে চিত্রা ঘোষের নেতৃত্বে শান্তিমিছিল৷ যেখানে সবচেয়ে বড় হাঙ্গামাটা হয়েছিল, থমথমে সেই ময়লাখোলায় অবশ্য মিছিলের পথে হাঁটেননি স্থানীয় কাউন্সিলর অসিত মজুমদার৷ ভোট চাওয়ার কায়দাতেই হাতজোড় করে তিনি বাড়ি বাড়ি ঘুরেছেন আর নাগাড়ে সকলকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার আবেদন জানিয়ে গিয়েছেন৷ তখনই বোঝা গিয়েছিল, অশান্তির আবহ আর টেকার নয়৷ ধীরে হলেও শান্তি প্রতিষ্ঠা হচ্ছে এলাকায়৷ বেলা বাড়তেই খুলতে শুরু করেছে দোকানপাট৷ টায়ার পোড়ার ফিকে হতে বসা কালো দাগ কাটিয়ে চলতে শুরু করেছে রিকশা, টোটোও৷ রজতদের আর কোনও সমস্যা হয়নি বাড়ির জন্য সন্তোষী মায়ের পুজোর জিনিসপত্র কেনাকাটায়৷ পুলিশ, র্যাফ, রোবোকপ আর বিএসএফ জওয়ানদের বুটের শব্দ ছিল বটে এলাকায়৷ কিন্তু বসিরহাটের আমজনতাও এখন লজ্জিত৷ ফলে সংযতও৷


বসিরহাট স্টেশন রোডের বাসিন্দা শঙ্কর মৈত্র ও তাঁর বন্ধু সিরাজুল মণ্ডল বলছিলেন, ‘এমন কালির দাগ কোনও দিন লাগেনি বসিরহাটের গায়ে৷ তিন-চার দিনে কী করে যে কী হয়ে গেল!’ অথচ ৪৮ ঘণ্টা আগেও খোলাপোতা, ইটিল্লাঘাট, দিঘির পাড়, পাইকপাড়া এলাকায় বিভাজন ছিল স্পষ্ট৷ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে যদিও বসিরহাট, দেগঙ্গা, স্বরূপনগর, বেড়াচাঁপা, বাদুড়িয়ার বিস্তীর্ণ এলাকার তাপ কমে আসছিল৷ আচমকা কিছু গ্রেপ্তারি ঘিরে ফের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে৷ হানাহানি না-হলেও দুষ্কৃতীদের হাঙ্গামায় ফের অশান্ত হয়ে ওঠে বসিরহাট৷ এ দিন সকালে আর কোনও ইন্ধনে ভুল করেনি বসিরহাট মহকুমা৷ পুলিশে ছয়লাপ শহর-গাঁয়ের মানুষ তিন দিন পর বেরিয়েছে ঘর থেকে৷ ভাঁড়ার বাড়ন্ত সকলেরই৷ ক্রেতার মতো দশা বিক্রেতারও৷ ফলে পসার তেমন সাজেনি৷ কিন্ত্ত বিকিকিনি হয়েছে স্বাভাবিক ছন্দেই৷ আইসক্রিমের গাড়ি ঘুরেছে পাড়ায়৷ ঘুগনি বিক্রি শুরু হয়েছে পথেঘাটে৷ এ সব ছবিতেই স্পষ্ট, হরিশপুর, ফাল্গুনী, ত্রিমোহিনী, মৈত্রবাগান, পুরোনো বাজার, সাঁইপালা, থানার মোড়, রেজিস্ট্রি অফিস, ময়লাখোলা, মায়ের বাজার, দণ্ডিরহাটখোলা এলাকাগুলোয় ক্রমেই ফিরে আসছে শান্তি৷ স্বাভাবিক হওয়ার পথে জনজীবন৷ না-হয়েই বা উপায় কী! লজ্জা, আক্ষেপ আর অনুতাপ এখন এলাকার প্রতি ইঞ্চিতে৷

বিমর্ষ তল্লাটগুলো তো একসঙ্গেই থেকে আজন্ম অভ্যস্ত৷ ঈদের দাওয়াত থেকে সত্যনারায়ণের সিন্নি, নিকাহ থেকে বউভাতের নেমন্তন্ন---সবই তো ভাগাভাগি করে হত বরাবর! বৃষ্টিভেজা দুপুরে দেগঙ্গার কালীতলা মোড়ে দাঁড়িয়ে গোবরাপাড়ার বাসিন্দা বাবলু শেখ বলছিলেন, ‘রাধারানি ফুড সেন্টারের ভেজিটেবল চপ আমার বাড়িতে রোজ আসা চাই-ই৷ কী হল বলুন তো, এ সব!’ এক সুর স্বরূপনগরের কচুয়াপাড়ার বাসিন্দা দীনেশ পাত্রের গলাতেও৷ ‘ছোট থেকেই সামসুল মিয়ার দোকান থেকে বিরিয়ানি খেয়ে বড় হয়েছি৷ বিশ্বাস করুন, চোখ ফেটে জল বেরিয়ে গেল বুধবার সকালে যখন দেখলাম, চাচার দোকান ভেঙে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা৷’ পুলিশ, প্রশাসন অবশ্য আর ঢিলে দিতে নারাজ৷ বসিরহাট শহরে ঢোকার বেশ আগেই ত্রিস্তরীয় পুলিশি ব্যারিকেড রঘুনাথপুরে৷ টাকি রোড বরাবর হরদম পুলিশের টহলদারি আর বিএসএফের রুটমার্চ শুরু অশান্ত এলাকার ঢের আগে৷ কাচকল মোড় থেকেই৷ বসিরহাট থানার আইসি নাসিম আখতারকে সরিয়ে তাঁর জায়গায় এ দিন নবান্ন এনেছে দত্তপুকুর থানার আইসি বিশ্বজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়কে৷ তার আগেই অবশ্য স্থানীয় প্রশাসনের তরফে এলাকার তামাম পুরোহিত আর ইমামদের নিয়ে শান্তিবৈঠক আয়োজন করা হয় এসডিও অফিসে৷ সেখান থেকে বেরিয়েই দুই সম্প্রদায়ের তরফেই টেটো ভাড়া করে শুরু হয়ে যায় মাইকিং --- ‘শান্তিতে থাকুন, দয়া করে কেউ আর গুজবে কান দেবেন না৷’

কলেজে মার, গোষ্ঠী হিংসা বেথুয়াডহরিতে

$
0
0

এই সময়, কৃষ্ণনগর: গণ্ডগোল হল কলেজে৷ আর তা নিয়ে অশান্তি ছড়াল এলাকায়৷ উত্তেজনা তৈরি হল দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে৷ খুবই তুচ্ছ একটি মারপিট থেকে ওই অশান্তি ছড়িয়ে পড়ায় নদিয়ায় নাকাশিপাড়া থানার বেথুয়াডহরিতে বেশ কিছু দোকানে ভাঙচুর হয় বৃহস্পতিবার রাতে৷ মারামারিও হয় দুই গোষ্ঠীতে৷ বিজেপির উস্কানিতেই এমন ঘটনা হয়েছে বলে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক কল্লোল খাঁ অভিযোগ করলেও বিভিন্ন পরস্পরবিরোধী মন্তব্য শোনা গিয়েছে শাসক শিবিরের নেতাদের মুখে৷

বিজেপির পাল্টা অভিযোগ, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের পরিণামেই এমন উত্তেজনা ছড়ায়৷ দলের নদিয়া জেলা সাধারণ সম্পাদক মহাদেব সরকার বলেন, ‘বেথুয়াডহরি কলেজে তৃণমূল ছাত্র নেতাদের মধ্যে মারপিটের পর এলাকায় উত্তেজনা বাড়ে৷ আমাদের নামে অভিযোগ তুলে তৃণমূল নিজেদের দোষ আড়াল করছে৷ ’

এলাকার তৃণমূল বিধায়ক কল্লোল খাঁ বলেন, ‘এই এলাকা এমনিতে শান্তিপুর্ণ৷ বিজেপির একটি মঞ্চের উস্কানি না -থাকলে এখানে কিছুই ঘটত না৷ তবে আমরা সম্প্রীতির আবেদন জানিয়ে এলাকাবাসীকে বোঝাতে পেরেছি৷ ভালো সাড়াও পেয়েছি৷’ বিজেপির অবশ্য অভিযোগ , বেথুয়াডহরি কলেজে এক ছাত্রীকে উত্যক্ত করাকে কেন্দ্র করে মারপিট হয়েছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দুই নেতার মধ্যে৷ ওই দুই নেতা দুই গোষ্ঠীর বলে সেই উত্তেজনা হিংসার চেহারা নেয়৷ যদিও পুলিশ প্রথম থেকেই গণ্ডগোল থামাতে সক্রিয় ভূমিকা নেয়৷ অল্প সময়ের মধ্যে বিরাট পুলিশ বাহিনী সেখানে মোতায়েন করা হয়৷ নদিয়ার বিভিন্ন থানা থেকে আধিকারিকদের তুলে আনা হয়৷ ফলে গণ্ডগোল আর ছড়াতে পারেনি৷ রাতেই নিয়ন্ত্রণে আসে পরিস্থিতি৷

নদিয়ার পুলিশ সুপার শিসরাম ঝাঝরিয়া বলেন , ‘শুক্রবার পরিস্থিতি শান্তিপুর্ণই আছে৷ বৃহস্পতিবার রাতের মারপিটে যুক্ত থাকার অভিযোগে ১০ জনকে গ্রেন্তার করা হয়েছে৷ ’ বেথুয়াডহরি কলেজে মারপিট সম্পর্কে অবশ্য পুলিশ বা কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনও মন্তব্য করেননি৷ এক ছাত্রীকে উত্যক্ত করাকে কেন্দ্র করেই যে গণ্ডগোল ছড়িয়েছে , তা স্বীকার করছেন এলাকার বিধায়ক কল্লোল খাঁ৷ কিন্ত্ত তিনি দলের দ্বন্দ্ব মানতে নারাজ৷ যদিও কলেজ সূত্রে জানাগিয়েছে , ছাত্র সংসদে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পারভেজ শেখের সঙ্গে একই সংগঠনের আকাশ সরকারের অনুগামী দুই ছাত্রের মারপিটের পরেই হিংসা ছড়ায় নাকাশিপাড়ায়৷ ওই দুই নেতার প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি৷

তবে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নদিয়া জেলা সভাপতি অয়ন দত্ত বলেন , ‘কলেজের ঘটনার সঙ্গে বাইরের ঝামেলার কোনও সম্পর্ক নেই৷ পারভেজ ও আকাশের মধ্যেও কোনও দ্বন্দ্ব নেই৷ কলেজের ঘটনা কলেজেই সীমাবদ্ধ ছিল৷ ’ নেতারা এমন সাফাই দিলেও বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই এলাকায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে৷ রাতে দু’দফায় স্থানীয় কাঁঠালবেড়িয়া ও ষষ্ঠীতলায় হামলা হয় কিছু দোকানে৷ দু’পক্ষের মধ্যে মারপিটও চলে৷ প্রথমে যে পক্ষ মার খেয়েছিল , তারা আবার পরে আরও লোক নিয়ে এসে হামলা চালায়৷ গভীর রাত পর্যন্ত চলে বিক্ষিন্ত হিংসা৷ নতুন করে অশান্তি না -হলেও শুক্রবার গোটা এলাকা ছিল থমথমে৷ স্থানীয় বাসিন্দাদের মুখে -চোখে ছিল ভয়ের ছাপ৷ আতঙ্কে কেউই মুখ খুলতে চাননি সংবাদ মাধ্যমের কাছে৷ কিছু লোক এলাকা ছেড়ে আত্মীয়দের বাড়ি চলে গিয়েছেন৷

স্টেশনে-থানায় আগুন দিয়ে পাহাড়ে ফের তাণ্ডব মোর্চার! নামল সেনা

$
0
0

এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: ফের অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল পাহাড়। পুলিশের গুলিতে শুক্রবার রাতে এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পাহাড়ের পরিস্থিতি। বিক্ষুব্ধ মোর্চা সমর্থকরা সোনাদা থানায় আগুন ধরিয়ে দেয় বলে জানা গিয়েছে। আগুন লাগানো হয় সোনাদার একটি ট্র্যাফিক পুলিশ কিয়স্কেও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পাহাড়ে ফের নামানো হল সেনা। মোট ২ কোম্পানি সেনা আপাতত সেনা নামানো হয়েছে। এর মধ্যে এক কোম্পানি দার্জিলিং ও এক কোম্পানি সোনাদায় মোতায়েন করা হয়েছে।





শুক্রবার রাতে মৃত্যু হয় তাসি ভুটিয়া নামে এক জিএনএলএফ সমর্থকের। রাত ১১টা নাগাদ ওষুধ কিনে বাড়ি ফেরার সময় পুলিশের গুলিতে তাঁর মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেছেন মোর্চা নেতা বিমল গুরুং। এদিন সকালে শুরু হয় মৃতদেহ নিয়ে মিছিল। সেই মিছিল থেকেই গোলমাল ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি করতে থাকে মোর্চা কর্মীরা। সোনাদা থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। থানা থেকে চেয়ার-টেবিল বের করে ভাঙচুর চালায় আন্দোলনকারীরা। আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়। দার্জিলিং স্টেশনের সামনেও একটি গাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠি ও টিয়ার গ্যাস চার্জ করে পুলিশ।

দার্জিলিং-এর চকবাজারও মোর্চা-পুলিশ সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে চেহারা নেয়। সুরয সুনদাস নামে আরও এক মোর্চা কর্মীর মৃত্যু ঘিরে দার্জিলিঙে উত্তেজনা চরমে পৌঁছয়। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় সোনাদা রেল স্টেশনেও।আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় সোনাদা পুলিশ স্টেশনেও। আগুন ধরানো হয় দার্জিলিং-এ খাদ্য সরবরাহ অফিস এবং ডিএসপি টাউন অফিসেও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করছে পুলিশ। পুলিশের তরফে শান্তি বজায় রাখার আবেদন করা হয়েছে। পুলিশ সুপার অখিলেশ চতুর্বেদী নিজে বিক্ষোভকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন৷ গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে বলে দাবি করেছেন রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব।

​BJP-TMC সংঘর্ষে উত্তপ্ত চোপড়ায় চলল গুলি, মৃত ১

$
0
0

এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: টিএমসি ও বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে জেরে শনিবার উত্তর দিনাজপুরে চোপড়ায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।

জানা গিয়েছে, চোপড়ায় বিজেপির 'বিস্তারক যাত্রা'কে কেন্দ্র করে অশান্তির সূত্রপাত্‍‌। বিস্তারক যাত্রা চলাকালীন, তাতে শামিল বিজেপি সমর্থকদের সঙ্গে শাসকদলের কিছু লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।

উত্তর দিনাজপুর জেলা বিজেপির সম্পাদক সঞ্জয় চক্রবর্তী দাবি করেন, চোপড়ায় তাঁদের সভা চলছিল। সেখানে শাসকদলের লোকজন গুলি চালালে, বিজয় সিংহ নামে তাঁদের এক সমর্থক প্রাণ হারান। আরও ৪ সমর্থক গুরুতর জখম হয়েছেন বলেও তিনি দাবি করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁদের উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঘটনার প্রতিবাদে উত্তর দিনাজপুরে ১২ ঘণ্টার বন্‌ধ ডেকেছে বিজেপি।

শাসকদল টিএমসির জেলা নেতৃত্ব অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতা হামিদুর রেহমানের পালটা অভিযোগ, তাঁদের সভা চলাকালীন বিজেপি সমর্থকরা অতর্কিতে হামলা চালায়।

ঘটনার জেরে এলাকায় উত্তেজনা থাকায় র‌্যাফ নামানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে রয়েছে চোপড়া থানার পুলিশও।

৩ জনের মৃত্যুতে উত্তেজনা চড়ল পাহাড়ে, মোর্চার রোষে ছাই তৃণমূলের পার্টিঅফিস

$
0
0

এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: পাহাড়ে পুলিশের গুলিতে শনিবার কমপক্ষে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও, সরকারি ভাবে একজনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করা হয়েছে এবং তা 'দুর্ঘটনা' বলেই উল্লেখ করেছে প্রশাসন।

গোর্খাল্যান্ড অন্দোলনের নামে পাহাড়ে মোর্চার তাণ্ডব চলছেই। এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের একটি পার্টি অফিসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। বিক্ষোভকারীরা আগুন দেয় পুলিশের একটি জিপেও। এমনকী 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ' টয় ট্রেনেও আগুন দিতে গিয়েছিল মোর্চার সমর্থকরা।

গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার তরফে দাবি করা হয়, এদিন তিন জন পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছেন। নিহতদের পরিচয়ও উল্লেখ করেছে মোর্চা। তাশি ভুটিয়া, সুরজ সুন্দাস ও বছর চল্লিশের সমীর গুরুং।

গোর্খা জনমুক্তি যুব মোর্চার প্রেসিডেন্ট প্রকাশ গুরুং দাবি করেন, সম্ভবত সিআরপিএফের গুলিতেই মারা গিয়েছেন সমীর গুরুং। সুন্দাসকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে যাচ্ছিলেন গুরুং। সেসময় মাথায় গুলি খেয়ে প্রাণ হারান।

এই ঘটনার জেরে পাহাড়ে নতুন করে অশান্তির আগুন ছড়িয়ে পড়ে। দার্জিলিঙের কাছে সোনাডায় দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে (টয় ট্রেন)-র স্টেশন ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। ওয়েটিং রুমেও আগুন ধরায় বিক্ষোভকারীরা। গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের নামে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ টয় ট্রেনকে টার্গেট করল মোর্চা।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার জানিয়েছেন, আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে দার্জিলিঙে শান্তি ফিরলে, পাহাড়ের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তিনি কথা বলতে প্রস্তুত। কিন্তু, মোর্চা সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে। তাদের বক্তব্য, নিরাপত্তা বাহিনী না-সরলে আলোচনার প্রশ্নই নেই। এজেন্ডায় 'গোর্খাল্যান্ড'-এর দাবিও রাখতে হবে।

মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, পাহাড়ে এবং বসিরহাটে অশান্তির পিছনে বিজেপির ইন্ধন রয়েছে।

Viewing all 41318 articles
Browse latest View live