Quantcast
Channel: Eisamay
Viewing all 41318 articles
Browse latest View live

নিভৃতে সবুজায়নে ব্রতী যুগীপুকুরের গাছপাগলা

$
0
0

রণবীর দেব অধিকারী ■ কালিয়াগঞ্জ
অনন্ত সবুজ৷ আম , কাঁঠাল , লিচু, জাম , জারুল , কামরাঙা , কদম , তেঁতুল - কী নেই ? বাংলার যাবতীয় গাছের সম্ভার পবেন যুগীপুকুর গ্রামে৷

সৌজন্যে নারায়ণ সরকার৷ উত্তর দিনাজপুরে কালিয়াগঞ্জ থানার এই যুগীপুকুরের বাসিন্দা তিনি৷ লোকে তাঁকে ‘গাছপাগলা ’ বলে ডাকেন৷ গত চল্লিশ বছর ধরে শুধু যুগীপুকুর নয় , আশপাশের গ্রামগুলিতে কার্যত নিঃশব্দে সবুজ বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছেন ষাট ছুঁই ছুঁই মানুষটি৷ প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক থেকে গ্রামের দিকে চলে যাওয়া কাঁচা রাস্তার দু’ধারে কলাবাগান , বাঁশবাগান , অজস্র ঝোপঝাড় -লতাগুল্ম , এমনকী বড় রাস্তাতেও গাছের সারি , সবই তাঁর সৌজন্যে৷ যুগীপুকুরের ধীরেন্দ্রনাথ সরকার বললেন , ‘এই যে রাস্তার ধারে যত গাছ দেখছেন , তার সবই ওঁর লাগানো৷ শুধু কি রাস্তা , গ্রামের পুকুড়পাড় , মন্দিরতলা , স্কুল যেখানেই গাছ দেখবেন , বুঝবেন সবই গাছপাগলার লাগানো৷ আশপাশের সব গ্রাম সবুজ হয়েছে ওঁর হাতে৷ এ বার বুঝে নিন , কত গাছ লাগিয়েছেন উনি৷ ’আর এক গ্রামবাসী ভগেন্দ্রনাথ সরকার বলেন , ‘মানুষটা নিজের জমিতে কৃষিকাজ সামলে যেটুকু সময় পান , তার সবটাই খরচ করেন গাছের পিছনে৷ কখনও দেখবেন , গাছ লাগাচ্ছেন৷ কখনও দেখবেন গাছের গোড়ায় জল ঢালছেন , আবার কখনও অন্য কোনও ভাবে পরিচর্যা করছেন৷ ’ বন দপ্তর কি তাঁর খবর রাখে ? রাজ্য জুড়ে যখন অরণ্য সপ্তাহের আয়োজন , তার কোথাও কিন্ত্ত নারায়ণের ডাক পড়েনি৷ উত্তর দিনাজপুরের বিভাগীয় বনাধিকারিক দ্বিপর্ণ দত্ত বলেন, ‘ওঁর কথা প্রথম শুনলাম৷ এ বার আর কিছু করার নেই৷ এর পর ওঁকে সম্মানিত করার প্রস্তাব দেব৷’ তাতে অবশ্য ‘গাছপাগলার ’ ভ্রুক্ষেপ নেই৷ তিনি ব্যস্ত নিজের কাজে৷ দেখা হতে শুধু গাছের গল্প জুড়লেন ‘এই সময় ’-এর সঙ্গে৷

বললেন , ‘গাছ যে আমাদের বিশুদ্ধ ছায়া দেয় , তা আর কোথায় পাবেন বলুন তো ? এ বার নিমের চারা লাগাবো ঠিক করেছি৷ হাজার খানেক চারা জোগার করার চেষ্টা করছি৷ নিমের ছায়ায় থাকলে শরীর সুস্থ থাকে৷ ’ বন দন্তর বা প্রশাসন তাঁর খবর রাখুক, না -রাখুক, যুগীপুকুর তাঁর কাজের কদর করে৷ এলাকার বাসিন্দা নির্মল সরকার বলেন , ‘চায়ের দোকান হোক আর গ্রামের গাছতলার আড্ডা , নারায়ণবাবু থাকলে গাছের প্রসঙ্গ উঠবেই৷ গাছই তাঁর ধ্যানজ্ঞান৷ ’ এমন নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ান কেন ? একগাল হেসে নারায়ণ পাল্টা প্রশ্ন করেন , ‘গাছ ছাড়া বাঁচতে পারবেন ? গাছই তো আমাদের অক্সিজেন দেয়৷ দেখছেন না , বলা হচ্ছে দেশ এগোচ্ছে৷ যত এগোচ্ছে , তত পরিবেশ দূষণ বাড়ছে৷ পৃথিবীকে উষ্ণায়ণের হাত থেকে বাঁচাতে বিজ্ঞানীরাও তো বেশি করে গাছ লাগানোর কথা বলছেন৷ সেই কাজটাই তো করছি৷ ’যিনি এমন বিজ্ঞানের কথা বলেন , তার বিদ্যে কিন্ত্ত ক্লাস থ্রি পাশ৷ তাহলে গাছের উপযোগিতা নিয়ে এত কথা জানলেন কী করে ? নারায়ণ বলেন , ‘তখন ক্লাস থ্রি -তে পড়ি | স্কুলের মাস্টারমশাই রজনীকান্ত সরকার একদিন ক্লাসে বুঝিয়েছিলেন , গাছ আমাদের কত প্রয়োজন | একটি গাছ একটি প্রাণ - এই শিক্ষা প্রথম তাঁর কাছেই পেয়েছিলাম৷ ’ সেই শিক্ষায় অনুপ্রাণিত নারায়ণের ১৮ বছর বয়স থেকে গাছ লাগানো নেশা হয়ে দাঁড়ায়৷ নিজেই বাড়িতে বাংলার বিভিন্ন ফলফলালির গাছ ছাড়াও তেজপাতা , শিশু , মেহগনি , আকাশমণি ইত্যাদি নানা রকম গাছের কলম তৈরি করেন৷ তার পর সেই চারা লাগান গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে , রাস্তার দু’ধারে৷ নিজের বিশ্বাস ও বিজ্ঞান শিক্ষাকে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটাও করেন নীরবে৷

নিজের বাড়ির সামনে শতাব্দী প্রাচীন একটি কামরাঙা গাছের তলা যেন তাঁর পরিবেশ -পাঠশালা৷ গ্রামের কচিকাঁচাদের ডেকে সেখানে নিয়মিত গাছের প্রয়োজনীয়তা বোঝান৷ নিভৃতে কাজ করে যাওয়া মানুষটি কোনও স্বীকৃতির ধার ধারেন না৷ প্রশ্ন করলে বললেন , ‘একদিন আমি থাকবো না৷ কিন্ত্ত গাছগুলো গ্রামের বাসিন্দাদের ছায়া দেবে৷ অক্সিজেন দেবে৷ কেউ মনে না -রাখুক, এই গাছগুলি তো মনে রাখবে যে আমি ওদের ভালোবেসে বড় করেছিলাম৷ ’


কেন্দ্রের ষষ্ঠ তফসিলের প্রস্তাব, বিপাকে মোর্চা

$
0
0

সঞ্জয় চক্রবর্তী ■ শিলিগুড়ি
নিজেদের তৈরি জালে জড়িয়ে এখন দিশাহীন মোর্চা নেতৃত্ব৷ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়া করতে জিটিএ ছেড়ে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলনে পড়েছিলেন তাঁরা৷ সেই দাবিতে লাগাতার পাহাড় বনধের এক মাস পুর্ণ হল শুক্রবার৷ মোর্চার দাবিতে সমর্থন করে জোট বেঁধেছে পাহাড়ের অন্য দলগুলি৷ গোর্খাল্যান্ড প্রশ্নে গোটা পাহাড়কে পাশে পেলেও কিন্ত্ত স্বস্তিতে নেই মোর্চা নেতারা৷ তাঁরা এখন বুঝতে পারছেন , রাজ্য তো দূরের কথা , কেন্দ্রও পাহাড়ে পৃথক রাজ্য গড়তে আদৌ আগ্রহী নয়৷ মোর্চা সূত্রে জানা গিয়েছে , কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের যে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন , তাতে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকার কথা বলা হলেও মোর্চা নেতৃত্বের খুশি হওয়ার কিছু নেই৷ কেননা , ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে আদৌ গোর্খাল্যন্ডের দাবি রাখবে না বলে কেন্দ্র জানিয়ে দিয়েছে৷

এই অবস্থায় আর কতদিন বন্ধ চালানো হবে , সেটা নিয়ে যেমন মোর্চা নেতারা ধন্দে , তেমনই ভবিষ্যত্ কর্মপন্থা নিয়েও দিশেহারা৷ কিন্ত্ত কেন্দ্রের পরামর্শে তাঁরা ইতিমধ্যে আন্দোলনে রাশ টানতে শুরু করেছেন৷ শনিবার থেকে যে আমরণ অনশন শুরু হওয়ার কথা ছিল , তা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে৷ শুক্রবার দার্জিলিংয়ে জেলাশাসকের দন্তরে ধর্ণা কর্মসূচিও বাতিল করে চকবাজারে সভা করেছে মোর্চা৷ দলের শীর্ষ নেতারা বুঝতে পারছেন , জিটিএ ছাড়ার পর আর তাতে ফেরার আলোচনায় গেলে পাহাড়ের অন্য দলগুলি তো বটেই , নিজের দলের সাধারণ কর্মীদেরও রোষের মুখে পড়বেন তাঁরা৷ গোর্খাল্যান্ডের দাবি অন্তত আলোচনায় রাখার জন্য তাই দিল্লিতে মোর্চা নেতারা কার্যত ঝোলাঝুলি করেছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে৷

কিন্ত্ত মোর্চা সূত্রেই জানা গিয়েছে , কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে যে উত্তরবঙ্গ এবং উত্তর -পূর্বাঞ্চলে আর নতুন কোনও রাজ্যের পক্ষপাতী নয় তারা৷ কেন্দ্রীয় সরকারের আশঙ্কা , গোর্খাল্যান্ড দিলে কামতাপুর , বোড়োল্যান্ডের দাবিও মাথাচাড়া দেবে৷ ত্রিপুরার আদিবাসীদের আন্দোলনও উত্সাহিত হবে৷ কেন্দ্র তাই ষষ্ঠ তফসিলের অধীনে স্বশাসন মেনে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে৷ এতেই ফাঁপড়ে পড়েছেন মোর্চা নেতারা৷ ২০০৬-এ প্রয়াত সুবাস ঘিসিংয়ের দাবি মেনে কেন্দ্রীয় সরকার , রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকার এবং জিএনএলএফ পাহাড়ে ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় স্বশাসন দেওয়ার চুক্তি করে ফেলেছিল৷ মোর্চার বাধায় তা কার্যকর করা যায়নি৷ এখন নতুন সেই প্রস্তাবে রাজি হলে সেই কৃতিত্ব দাবি করবে জিএনএলএফ৷

যদিও বর্তমান জিএনএলএফ নেতৃত্ব আর ষষ্ঠ তফশিলে ফিরতে নারাজ৷ দলের সাধারণ সম্পাদক মহেন্দ্র ছেত্রী বলেন , ‘ষষ্ঠ তফসিলের দাবি ছেড়েই তো আমরা গোর্খাল্যান্ডের জন্য পথে নেমেছি৷ আমরা গোর্খাল্যান্ডই চাই৷ ’ একই অভিমত সিপিআরএমেরও৷ পাহাড়ে পৃথক রাজ্যের দাবিতে চলতি আন্দোলনে লাভবান তারাও৷ এই আন্দোলনে সামিল হওয়ায় তাদের ভেঙে পড়া সংগঠন ফের মজবুত হচ্ছে৷ সিপিআরএমের নেতা গোবিন ছেত্রী বলেন , ‘কেন্দ্রীয় সরকার কেনও পৃথক রাজ্য দেবে না ? আমরা তো সংবিধানের আওতার মধ্যেই আলাদা রাজ্য চাইছি৷ ’ মোর্চা নেতা তিলকচাঁদ রোকা অবশ্য এ দিন দার্জিলিংয়ের চকবাজারের সভায় বলেন , ‘পৃথক রাজ্য আদায় না -করা পর্যন্ত আন্দোলন থামবে না৷ ’ কিন্ত্ত তাঁর কথাতেই পিছিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত স্পষ্ট৷

জেলাশাসকের দন্তরে অবস্থান সোমবার করা হবে জানালেও তিলকচাঁদ বলেন , অনশন পাহাড়ের বদলে দিল্লিতে হতে পারে৷ অথচ বৃহস্পতিবার দলের সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেছিলেন , রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য অনশন পিছিয়ে দেওয়া হল৷ তবে পাহাড়ে নিয়ন্ত্রহীন হিংসায় এখনও লাগাম নেই৷ বৃহস্পতিবার রাতে মিরিকের একটি গ্রামীণ লাইব্রেরি , সুখিয়াপোখরিতে বন দন্তরের চেকপোস্টে আগুন লাগানো হয়েছে৷ কার্শিয়াংয়ে দার্জিলিং -হিমালয়ান রেলওয়ের সদর দন্তরেও আগুন লাগানোর চেষ্টা হয়৷ তবে রেল সুরক্ষা বাহিনী সজাগ থাকায় দুষ্কৃতীরা পালাতে বাধ্য হয়৷ দুধিয়ায় জিটিএ -র একটি পর্যটক রেস্তোরাঁতেও আগুন লাগানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে৷ মোর্চা অবশ্য দাবি করেছে , অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তারা জড়িত নয়৷ পুলিশ কিন্ত্ত প্রতিটি ঘটনাতেই মোর্চা নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে৷ একই মধ্যে এ দিন সড়কি উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান কুমার মঙ্গরাতি পদত্যাগ করেছেন৷

পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে ভরসা চা-বাগান

$
0
0

তাপস প্রামাণিক
হিংসা কবলিত দার্জিলিংয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তুরুপের তাস হয়ে উঠতে পারে বন্ধ চা -বাগান৷ রাজ্য পুলিশের শীর্ষকর্তারা জানাচ্ছেন , পাহাড়ে বেশির ভাগ গোলমালের ঘটনায় জড়িতদের অধিকাংশই বন্ধ চা -বাগানের শ্রমিক৷ তাঁদের অভিযোগ , মূলত বন্ধ চা-বাগানের বেকার শ্রমিকরাই গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের নামে ঘর -বাড়িতে আগুন লাগাচ্ছেন৷ দোকানপাট লুঠ করছেন৷ কেউ রাস্তায় গাড়ি ভাঙচুর করছেন৷ তাই আন্দোলনে রাশ টানতে জরুরি ভিত্তিতে বন্ধ চা -বাগান খোলার উদ্যোগ নিচ্ছে রাজ্য প্রশাসন৷ তার পাশাপাশি গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা-সহ পাহাড়ে বিরোধী দলগুলিকে আলোচনার টেবিলে বসাতে তত্পরতা শুরু হয়েছে৷

পুলিশ সূত্রের খবর , সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে আজ -কালের মধ্যেই পাহাড়ে অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী পৌঁছে যাবে৷ তার পরই পাহাড়ে হিংসাত্মক আন্দোলনে লাগাম টানতে বন্ধ চা -বাগান খোলার প্রক্রিয়া শুরু করবে স্থানীয় প্রশাসন৷ সেই মতো চা -বাগান মালিকদের সঙ্গে প্রাথমিক কথাবার্তা শুরু করেছেন প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকরা৷ তৃণমূল নেতারাও বাগান মালিকদের উপর চাপ বাড়াচ্ছেন৷ সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে , দার্জিলিংয়ে সব মিলিয়ে মোট ১৪৪টি চা -বাগান রয়েছে৷ তার মধ্যে ৮৭টি বোর্ডের নথিভুক্ত৷ তাতে গড়ে দেড় থেকে দু’হাজার কর্মচারী যুক্ত থাকেন৷ সবমিলিয়ে দার্জিলিংয়ে চা -বাগানের সঙ্গে প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে যুক্ত৷ মোর্চার ডাকে পাহা‌ে .ড বন্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে চা -বাগানের কাজকর্ম সব শিকেয় উঠেছে৷ হাজার হাজার কর্মহীন শ্রমিক ঘরে বসে দিন কাটাচ্ছেন৷ তাঁদেরই একটা বড় অংশ পাহাড়ে গোলমাল পাকাচ্ছেন৷ পাহাড়ের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে যে গোয়েন্দা রিপোর্ট জমা পড়েছে তাতেও বলা হয়েছে , গোলমালের ঘটনায় জড়িতদের অনেকেই বন্ধ চা -বাগানের শ্রমিক৷

তাঁরাই বেশি হাঙ্গামা করছে৷ জম্মু-কাশ্মীরে সেনাবাহিনীর উপর পাথর ছোড়ার জন্য সন্ত্রাসবাসী সংগঠনগুলি যেরকম বেকারদের নগদ পারিশ্রমিক দিয়ে থাকে , তেমন ভাবে দার্জিলিংয়ের বন্ধ চা -বাগানের শ্রমিকদের জঙ্গি আন্দোলনের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে৷ বিনিময়ে নিজেদের লঙ্গরখানায় আন্দোলনকারীদের নিখরচায় খাওয়া -দাওয়ার ব্যবস্থা করেছে মোর্চা৷ তাই আন্দোলন দমন করতে বন্ধ চা -বাগান খোলা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন প্রশাসনের কর্তারা৷ সেই জন্য রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক উভয় দিক থেকেই তত্পরতা শুরু হয়েছে৷ পরিকল্পনা অনুযায়ী , চা -বাগান খোলার জন্য প্রথমে মালিকদের অনুরোধ করা হবে৷ চা -বাগানের নিরাপত্তায় বসানো হবে পুলিশ প্রহরা৷ দরকার হলে সেখানে সিআরপি মোতায়েন করা হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন , হিংসার পথ ছেড়ে পাহাড়ের দলগুলি সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসুক৷ বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও একই আহ্বান জানিয়েছেন৷

মুখ্যমন্ত্রী সবুজ সঙ্কেত দেওয়ার পরই পাহাড়ের দলগুলিকে আলোচনার টেবিলে বসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে প্রশাসন৷ তৃণমূল ঘনিষ্ঠ এক বুদ্ধিজীবী এ ব্যাপারে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিচ্ছেন৷ তাতে মোর্চার তরফে প্রাথমিক ভাবে সাড়া মিলেছে বলে জানা গিয়েছে৷ যদিও এই মুহূর্তে পাহাড়ের যা পরিস্থিতি , তাতে শান্তি আলোচনা কতটা ফলপ্রসূ হবে , তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন পুলিশকর্তারা৷ দার্জিলিংয়ের দায়িত্বে থাকা রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষকর্তা বলেন, মোর্চা আগুন জ্বালালেও তার আঁচে পুড়ছে তারাও৷

এবার ব্যবসায়ীদের বন্‌ধ ঘিরে রণক্ষেত্র রায়গঞ্জ

$
0
0

এই সময়ঃ গতকাল আদিবাসীদের আন্দোলনের পর শনিবারও রায়গঞ্জ উত্তপ্ত। আজও আগুন জ্বলছে শহরের রাস্তায়। গতকাল আদিবাসীদের আন্দোলনের জেরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বহু দোকানদার ও বব্যবসায়ীর। পুলিশের সামনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটানো হলেও পুলিশ তাঁদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ বলে আজ ক্ষোভ উগড়ে দেন ব্যবসায়ীরা।

স্বগোষ্ঠীর চার মেয়ের শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের প্রতিবাদ ও অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলনে নেমে শুক্রবার রায়গঞ্জে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছিল উত্তেজিত আদিবাসীরা। এর জেরে বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়েন রায়গঞ্জের ব্যবসায়ীরা। এরই প্রতিবাদে এবং পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই পথে নেমেছেন সাধারণ ও পরিবহন ব্যবসায়ীরা। শনিবার তাঁরা রায়গঞ্জ শহরে ২৪ ঘন্টার ব্যবসায়ী ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। সেই ধর্মঘট আজ সকাল থেকেই জোরদারভাবে চলছে। আজও প্রায় স্তব্ধ গোটা শহর। শহরের একাধিক জায়গায় টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। অবরোধ তুলতে গেলে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় বচসা বাধে আন্দোলনকারী ব্যবসায়ীদের। শহরের গীতাঞ্জলী মোড় এলাকায় লাঠি উঁচিয়ে অবরোধ তুলতে গেলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। নিরাপত্তাহীনতা, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন ব্যবসায়ীরা

এদিকে কিছুক্ষণ আগে ব্যবসায়ীদের বনধ তুলতে এসে চরম বিক্ষোভের মুখে পড়েন উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠোর। সুপার মার্কেট এলাকায় বনধ সমর্থকদের সাথে বচসায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। পৌর বাসস্ট্যান্ড এলাকাতেও ধর্মঘট সমর্থকদের হঠাতে ব্যর্থ হয় পুলিশ। বিক্ষোভের মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন পুলিস সুপার।

হীরক রাজার স্কুল! সপ্তাহে তিন দিন ছেলে ও তিন দিন মেয়েরা করবে ক্লাস!!

$
0
0

এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: আকছার ইভটিজিংয়ের অভিযোগ আসছিল। এমনকী ছাত্রদের বিরুদ্ধে ক্লাসে বসেই পর্ন দেখার অভিযোগ উঠেছিল। বকুনি-পিটুনি’তেও সমস্যা সমাধান হচ্ছিল না। নিত্য অভিযোগের সমাধান খুঁজতেই ব্যস্ত কো-এড স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা।

অবশেষে সমাধান বের হল। সপ্তাহে তিন দিন স্কুলে এসে ক্লাস করবে ছাত্ররা। আর বাকি তিন দিন ক্লাস করবে ছাত্রীরা। আর এতেই নাকি ইভটিজিং সহ-সমস্যার সমাধান হবে।আজব এই নিদান বীরভূমের কাঁকরতলা বড়রা হাইস্কুলের।

ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে জানতে পেরে রিপোর্ট তলব করেছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। উচ্চ শিক্ষা সংসদও এই ঘটনা ‘মেনে নেওয়া যায় না’ বলে জানিয়েছে।

পর্ষদের তরফে ইতিমধ্যেই জেলা স্কুল পরিদর্শককে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্কুল পরিদর্শকও সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। সত্যি হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শতবর্ষের পুরোনো এই স্কুলের এহেন নিদান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। স্কুল কর্তৃপক্ষ কীভাবে এমন সিদ্ধান্ত নিল, তা নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে পড়ুয়াদের শিক্ষাবর্ষের ক্যালেন্ডার বিঘ্নিত হবে বলেও অভিযোগ। যার ফলে আখেরে পড়ুয়ারদেরই ক্ষতি হবে। এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে বীরভূমের কাঁকরতলা বড়রা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধেও। যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষ এই নিয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করেনি।

ধর্ষণ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যে রূপার বিরুদ্ধে FIR

$
0
0

এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে আপত্তিজনক মন্তব্য করায় বিজেপির রাজ্যসভার সদস্য রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে FIR করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের অধীন নিমতা থানায় শুক্রবার রাতেই অভিযোগ দায়ের হয়েছে।

রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে আক্রমণ করতে গিয়ে রূপা বলেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যাঁরা প্রশস্তি করছেন, তাঁদের বলছি, আপনাদের বউ-মেয়েকে একাবার বাংলায় পাঠান। পনেরো দিনের মধ্যে তাঁরা যদি ধর্ষণের শিকার না-হন, তার পর আমায় বলবেন।'

রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের এই কুরুচিকর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'গোটা রাজ্যকে এ ভাবে বদনাম করার আগে ওনার এটা বলা উচিত বাংলায় তিনি কতবার ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তা হলেই তাঁর বক্তব্যের সত্যতা জানা যাবে।

গত মাসে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে তিন আদিবাসী মহিলা ধর্ষিত হয়েছেন। দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আদিবাসীরা রাস্তায় নেমে আসেন। তাঁদের বিক্ষোভের জেরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রায়গঞ্জ। যার প্রেক্ষিতে পুলিশকে দোষারোপ করতে থাকে বিজেপি। বিজেপি নেতাদের অভিযোগ, পুলিশ তৃণমূল কংগ্রেসের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করছে। যার জন্য ধর্ষকরা এখনও অবধি গ্রেপ্তার হয়নি।

রায়গঞ্জের এই ধর্ষণ প্রসঙ্গ টেনেই বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেন রূপা। তাঁর দাবি, মমতার রাজত্বে গণতন্ত্র বলে কিছু নেই। বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য তাঁদের নেত্রীরই পাশে দাঁড়িয়েছেন। নেতৃত্বের বক্তব্য, আক্ষরিক অর্থ নিয়ে এত হইচই না-করে, ধর্ষণের ঘটনাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

এদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়ায়, রাজ্য় বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধেও এদিন সিঁথি থানায় এফআইআর হয়েছে।

শুক্রবার খড়গপুরের এক সভায় দিলীপ ঘোষ বলেন, মিথ্যে অভিযোগে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করলে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি তিনি জ্বালিয়ে দেবেন। রাজ্য বিজেপি সভাপতির এই হুমকির প্রেক্ষিতে পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করতে চলেছে।

ক্রমাগত প্রশ্ন, কোথায় যাবেন?

$
0
0

অমিত চক্রবর্তী ■ সুকনা
আশ্চর্য, পথটা আচমকা এত শুনশান হয়ে গেল কী করে ? এতটাই যে , হাঁটতে হাঁটতে গা ছমছম করে৷ সুকনা ফাঁড়ি পর্যন্ত অটোতে যাওয়ার কথা , তা -ও বহু সাধ্যসাধনা করে৷ তা ছাড়া , অন্য সময় যেটা টাকা তিরিশেকের ভাড়া , সেখানে সাড়ে তিনশো টাকা কবুল করে , তবেই৷ কোনও গাড়ি আজ পাহাড়ে যেতে রাজি নয়৷ মিরিক থেকে ফেরার পথে শিলিগুড়ির উপ -নগরপাল গৌরব লালের কনভয় যে আক্রান্ত , সেই খবরে অবস্থা আরও থমথমে৷ শেষে নিরুপায় হয়ে অটো৷ সেই অটো অবশ্য নামিয়ে দিল সুকনা ফাঁড়ি থেকে আন্দাজ ১ কিলোমিটার দূরে৷ সাফ কথা , নেহি যায়েগা সাব৷

হাঁটতে গিয়ে বুঝলাম , কেন৷ চারপাশের ছবিটা বদলে গিয়েছে আমূল৷ একে তো পথঘাটের ওই ফাঁকা চেহারা , তার উপর ক্রমাগত প্রশ্ন, কোথায় যাবেন ?বাংলার প্রশ্নই ওঠে না , যদিও যাঁরা প্রশ্নটা করছেন , তাঁরা এমনিতে বাংলায় যথেষ্ট সড়গড়৷ কিছুকাল আগেও বাঙালি পর্যটক দেখলে হয়তো খানিক হেসে বাংলাতেই প্রশ্ন করতেন৷ এখন ছবিটা বদলেছে , তাই চোস্ত হিন্দিতে কথা৷ রুক্ষ্ম সুরে , এবং স্বরে৷ এমনিতে শ্রাবণের পাহাড় চোখের সামনে দারুণ মায়াময় হয়ে জেগে আছে , যেমন থাকে৷ হাঁটার সময় দেখছি বাঁ দিকে শাল জঙ্গল , ডান দিকে চা বাগান , তার পিছনে পর্বত জলছবির মতো হাজির৷ যেমন থাকে৷ কিন্ত্ত বর্ষা তো পাহাড়ের এই সানুদেশে ঠিক এতটা নির্জন , থমথমে থাকে না৷

পর্যটকের চিহ্নমাত্র নেই৷ উঁচু গলায় কথা বলা নেই৷ শুধু মাঝে মাঝে এ দিক ও দিক ‘গোর্খাল্যান্ড গোর্খাল্যান্ড ’ ধ্বনি৷ ফাঁকা রাস্তায় মাঝে মাঝেই গার্ডরেল৷ সুকনা ফাঁড়ি পৌঁছে অবশ্য ভিড় চোখে পড়ল৷ বিভিন্ন গাড়ি যারা পাহাড়ে যাবে , কিন্ত্ত ভয়বশত যেতে পারছে না , তেমনই গাড়ির দঙ্গল৷ গুনতিতে প্রায় গোটা চল্লিশেক হবে৷ এরা কেউ দার্জিলিং যাবে , কেউ সোনাদা , কেউ ঘুম৷ এর মধ্যে পুলিশের গাড়ি যেমন , তেমনই ব্যক্তিগত গাড়িও৷ শেষে রাত আটটা নাগাদ গাড়িরা ছাড়ল৷ গাড়িরাই , কারণ অতগুলি গাড়ি কনভয় তৈরি করেছে৷ তার সামনে এবং পিছনে কাউন্টার ইনসার্জেন্সি ফোর্স অর্থাত্ সিআইএফ -এর গাড়ি৷ নিরাপত্তার বন্দোবস্ত যথাসম্ভব কঠোর করে তবেই অ্যাক্সিলারেটরে চাপ৷ এর মধ্যে বেশ কিছু গাড়িতে আছে চাল -ডাল -সব্জি , এমনকী জলও৷

উপায় কী , পাহাড়ে বিভিন্ন সরকারি দন্তরে অনেক সময়ই জল মিলছে না৷ রাত্রিবেলা ওই গাড়ির দলের দিকে আচমকা দেখলে মনে হবে , দিব্যি কোনও থ্রিলার ছবি৷ ফারাকটা শুধু, এখানে পপকর্ন নেই , গদিওলা সিট নেই৷ আতঙ্ক আছে৷ পাহাড়চূড়ায় আতঙ্ক৷

মূর্তি না বসালে আমাকে দিন , বাগানেই রাখব

$
0
0

মানস রায় ■ বালুরঘাট
ব্রিসবেনের বাইশ গজে দাদার কীর্তি মূর্তি হয়ে উঠে এসেছিল বালুরঘাটে৷ কিন্ত্ত সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই মূর্তি যথাস্থানেই বসল না৷ শনিবার স্টেডিয়ামের পাশে অস্থায়ী জায়গায় নিজে হাতে নিজের মূর্তি উদ্বোধন করতে গিয়ে সৌরভকে বোল্ড হতে হল বালুরঘাটের রাজনীতির কাছে৷

অস্বস্তির পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেন সৌরভ নিজেই৷ গলায় রসিকতা , ‘এখানে মূর্তি বসাতে না -দিলে আর কী করব ? আমাকে দিয়ে দিন৷ আমার বেহালার বাড়ি নিয়ে যাব৷ ওখানে বাগান আছে৷ সেখানেই বসাব৷ ’ বালুরঘাটে দাদাকে চাক্ষুষ করতে হাজার দশেক মানুষের মধ্যে তখন হাসির রোল৷ কেন এমন হল ? স্থানীয় মানুষের কথায় ঘুরে ফিরে আসছে জেলার ক্ষমতাসীন তৃণমূল বনাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার বাম রাজনীতির টানাপোড়েন৷

অভিযোগের তির দক্ষিণ দিনাজপুর তৃণমূল জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রের দিকে৷ আসলে যাঁর উদ্যোগে এই মূর্তি, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সেই বড় কর্তা গৌতম গোস্বামী আরএসপি -র নেতা৷ অভিযোগ গৌতমদের দিকেও৷ কেন অনুমতি না পেলেও সৌরভকে এতদূর নিয়ে যাওয়া হল ?জেলা ক্রীড়া সংস্থার উদ্যোগে সৌরভের আট ফুটের ফাইবারের তৈরি মূর্তি স্টেডিয়ামের প্রধান গেটের পাশে বসানোর কথা ছিল৷ কিন্ত্ত অনুমতি দেয়নি জেলা প্রশাসন৷ ফলে শনিবার সকালে স্টেডিয়ামের মধ্যে মঞ্চের সামনে অস্থায়ী বেদি বানিয়ে মূর্তি উদ্বোধন করলেন সৌরভ৷ সেই মূর্তি অবশ্য ওই জায়গা থেকে সরে যাবে৷ বালুরঘাটের এমন লজ্জা কেন ? তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লববাবুর মুখে দু’রকম কথা৷ প্রথমে ফোনে তিনি বলেন , ‘মূর্তি আসল জায়গায় বসেনি ’৷ পরক্ষণেই , ‘আমি ছিলাম না৷ তাই জানি না , কী হচ্ছে৷ আমাদের কোনও হাত নেই৷ ’ বিতর্কে যোগ দেননি আরএসপি নেতা গৌতমবাবুও৷ তিনি বলেন , ‘এই পরিস্থিতিতে কারও সম্পর্কে কিছু বলে আর বিতর্ক বাড়াতে চাই না৷ ’ সঙ্গে কটাক্ষ করে সংযোজন , ‘যারা বিরোধিতা করছে , তারাই কিন্ত্ত আবার সৌরভের সঙ্গে ছবি তুলতে চায়৷ ’ এ দিন বালুরঘাটের মঞ্চে মোট ২৭টি সংগঠন সৌরভকে সংবর্ধনা দেয়৷ অনুষ্ঠানে ছিলেন না দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক সঞ্জয় বসু৷ তাঁর অফিস থেকেই পাওয়া যায়নি স্টেডিয়ামের বাইরে মূর্তি বসানোর অনুমতি৷ আবার পদাধিকার বলে সঞ্জয়ই জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রেসিডেন্ট৷ অনেক চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি৷

সিএবির ভোট ব্যাঙ্ক মজবুত করার জন্য প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন জেলায় সফর করেছেন সৌরভ৷ এ দিন ভোরে পদাতিক এক্সপ্রেসে মালদহ স্টেশনে নেমে বালুরঘাটে পৌঁছন৷ মাঝে গঙ্গারামপুর এবং বুনিয়াদপুর স্টেডিয়াম ঘুরে যান৷ তার আগে মালদহ স্টেশনে দেখা যায়নি মালদহ জেলা সংস্থার শীর্ষ কর্তাদের৷ এর মধ্যে সিএবির সৌরভ -বিরোধী অঙ্ক দেখছেন অনেকে৷ দীর্ঘ দিন পর সৌরভের সফরেও ছিল সিএবির প্রচার৷ বালুরঘাট স্টেডিয়ামেই তিনি জগমোহন ডালমিয়ার নামে নতুন ইন্ডোর স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করেন৷ আশ্বাস দেন , বোলিং মেশিন দেওয়ার৷


সুচ ফুটিয়ে শিশুকে নির্যাতন পুরুলিয়ায়

$
0
0

এই সময়, পুরুলিয়া ও কলকাতা : শুধু যৌন নিপীড়ণ নয় , পুরুলিয়ার নদীয়াড়া গ্রামের তিন বছরের শিশুকন্যাটিকে অকথ্য অত্যাচার করে খুনের চেষ্টা হয়েছিল বলে মনে করছেন চিকিত্সকরা৷ শিশুটির পেটে ও যৌনাঙ্গের কাছে ৭টি সুচ গেঁথে দেওয়া হয়েছিল৷ শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় কলকাতার এসএসএমে আনার পর এক্স -রে করে শিশুটির দেহে এখনও সূচগুলি গেঁথে থাকার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে৷ মা -সহ শিশুটিকে আশ্রয় দিয়ে প্রাক্তন এক হোমগার্ড সনাতন গোস্বামী ওই অপকর্ম করেছে বলে অভিযোগ৷ পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের চিকিত্সকরা জানিয়েছেন , মেরে শিশুটির দুই হাতের হাড় ভেঙে দেওয়া হয়েছে৷ অথচ জ্বর হয়েছে জানিয়ে তার মা গত মঙ্গলবার বিকেলে ওই হাসপাতালে শিশুটিকে ভর্তি করেছিলেন৷

কিন্ত্ত শিশুটির দেহে প্রচুর আঁচড়, আঘাত ও যৌনাঙ্গে রক্তক্ষরণের চিহ্ন দেখে চিকিত্সকদের সন্দেহ হয়৷ তড়িঘড়ি মেডিক্যাল বোর্ড বসিয়ে যৌন নির্যাতন ও অকথ্য অত্যাচারের প্রমাণ পান চিকিত্সকরা৷ পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ শিবশঙ্কর মাহাতো বলেন , ‘চিকিত্সক হিসাবে আমরা স্থম্ভিত৷ এমন নারকীয় নির্যাতন ভাবা যায় না৷ বিকৃত মনের মানসিক ভাবে অসুস্থ কোনও লোক ছাড়া এমন কাজ কেউ করতে পারে না৷ ’ শিশুটির দেহ থেকে শনিবার সন্ধে পর্যন্ত সূচগুলি বের করা যায়নি৷ জ্ঞান থাকলেও সে যন্ত্রণায় ছটফট করছে বলে এসএসকেএম সূত্রে জানা গিয়েছে৷ এসএসকেএমে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ আর পাত্র তার চিকিত্সা করছেন পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে৷ ’ ঘটনাটি জেনে শিশুকে এসএসকেএমে আনার নির্দেশ দেন খোদ নারী ও শিশুকল্যাণমন্ত্রী শশী পাঁজা৷

যদিও অভিযুক্ত সনাতন গোস্বামীকে এখনও পুলিশ গ্রেন্তার করতে পারেনি৷ পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস বলেন , ‘অভিযুক্তকে ধরতে সব রকম ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ অভিযোগ হতে দেরি হওয়ায় সে গা -ঢাকা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে৷ সে ভিন রাজ্যে চলে গিয়ে থাকতে পারে৷ ’ পুরুলিয়ার জেলাশাসক অলোকেশপ্রসাদ রায় বলেন , ‘শিশুটির উপযুক্ত চিকিত্সার সমস্ত রকম ব্যবস্থা হবে৷ ’ সুচ বের করার পরিকাঠামো নেই বলে এ দিন সকালে

শিশুকন্যাটিকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছিল৷ কিন্ত্ত সেখানেও সুচ বের করা যায়নি৷ এদিকে শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকায় শেষপর্যন্ত তাকে আনা হয় কলকাতায়৷ পুলিশ থেকে শুরু করে চিকিত্সক ও চাইল্ড লাইনের কর্তারা স্থম্ভিত শিশুটির মায়ের আচরণে৷ যৌন নিপীড়ণ এবং অত্যাচারের সমস্ত ঘটনা জানা সত্ত্বেও তিনি তা চেপে রেখে জ্বর হয়েছিল বলে সন্তানকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন৷ পুরুলিয়া চাইল্ড লাইনের জেলা কো -অর্ডিনেটর দীপঙ্কর সরকার বলেন , ‘চোখের সামনে মেয়ের সর্বনাশ হচ্ছে , তাকে খুন করার চেষ্টা হচ্ছে দেখেও মা বাধা দেওয়া দূরের কথা , ঘটনাটি চেপে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন৷ ’ পরে চাইল্ড লাইন কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে , অভিযুক্ত সনাতন গোস্বামীর সঙ্গে শিশুটির মায়ের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল৷ স্বামী পরিত্যাগ করার পর থেকে সনাতনের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন মহিলা৷ সেখানেই সনাতন নিয়মিত তাঁর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করত৷

শারীরিক সম্পর্কের সময় শিশুটি কেঁদে উঠলে ক্ষিন্ত হত সনাতন৷ সেই রাগেই সে শিশুটিকে অত্যাচার করে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল বলে পুলিশ মনে করছে৷

এই ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছে সমাজের বিভিন্ন স্তরে৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনা শুরু হয়েছে৷ রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায় ঘটনাটিকে স্থম্ভিত৷ তিনি এমন ঘটনার নিন্দা করেছেন৷ মায়ের এমন আচরণে তাঁর উপর ভরসা না -করে পুরুলিয়ার চাইল্ড লাইন কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে৷ জেলা প্রশাসনও সব রকম সহযোগিতা করছে৷

পাপক্ষালনে অরণ্য সপ্তাহে গাছে হাত দেন না রজব-জাকিররা

$
0
0

সমীর মণ্ডল ■ মেদিনীপুর
ওঁদের বাল্মিকী হওয়ার উপায় নেই৷ যে মনস্তাপে দস্যুগিরি ছেড়েছিল রত্নাকর , তেমন মনকষ্টে ভোগেন এঁরাও৷ রজব , আব্দুল , জাকির , আসেদ৷ বেআইনি বৃক্ষনিধনে যুক্ত না-থাকলেও প্রায় রোজই এঁরা গাছ কাটেন৷ কাটা গাছ চেরাই করেন৷ সবাই ওঁদের চেনে করাতি বলে৷ কেউ ডাকলেও ওঁরা গাছ কেটে দেন৷ তা সে স্থানীয় কোনও বাসিন্দাই হোন , ঠিকাদারই হোন বা সরকারি কোনও দপ্তরই হোক৷ কেউ তাঁদের না -বললেও অরণ্য সপ্তাহের ৭টি দিন কিন্ত্ত ওঁরা হাতে করাত -কুড়ুল নেন না৷ স্বেচ্ছায় সংযমী হোন তাঁরা৷ অরণ্য সন্তাহে ডাকলেও গাছে হাত দেন না তাঁরা৷ এজন্য তাঁদের কেউ বাহবা দেন না বটে৷ কিন্ত্ত তাতে ওঁদের আক্ষেপও নেই , ভ্রুক্ষেপও নেই৷

আব্দুল বারিক বলেন , ‘আমাদের কোনও উপায় নেই৷ গাছ কাটা আমাদের পেশা৷ গাছ কেটে পাওয়া মজুরিতে সংসার চলে৷ ছেলেমেয়ের পড়াশোনা হয়৷ অন্তত ৭টি দিন গাছ কাটা বন্ধ রেখে নিজেদের পাপক্ষালন করার চেষ্টা করি৷ ’ বছর ষাটের রজব খান বলেন , ‘জানি , এই সংযমের কোনও মূল্য নেই৷ কিন্ত্ত আমরাও তো মানুষ৷ আমাদেরও মন বলে কিছু আছে৷ লেখাপড়া জানি না বটে৷ তাবলে কি জানি না যে গাছের প্রয়োজন কী ? আমাদের ঘরের ছেলেমেয়েরাও ‘একটি গাছ -একটি প্রাণ ’ লেখা পোস্টার নিয়ে অরণ্য সন্তাহে মিছিলে যাচ্ছে৷ আমরা না -হয় এই ক’টা দিন গাছে হাত না -দিয়ে ওদের শপথে সামিল হলাম৷ ’ এঁরা সবাই মেদিনীপুর শহরের কাছে রামনগর এলাকার বাসিন্দা৷ গোটা গ্রামের বাসিন্দারাই প্রায় করাতি৷ গাছ কাটা ছাড়া অন্য পেশা নেই৷ ওঁদের মনোভাবের তারিফ করছেন বনকর্তারা৷

মেদিনীপুরের বিভাগীয় বনাধিকারিক রবীন্দ্রনাথ সাহা বলেন , ‘ভীষণ ভালো কথা৷ এই ক’টা দিন ওঁরা বিবেকের ডাকে সাড়া দেন অন্তত৷ এটাও কম কী ? ঘটনাটি আমাদের কাছে উদাহরণ হয়ে রইল৷ ’ এঁরা অবশ্য কেউ জোর করে কিংবা লুকিয়ে গাছ কাটেন না৷ বৈধ ভাবে কাটার অনুমতি থাকলে সেখানে শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন মাত্র৷ তবু গাছ কাটাতেও যে কষ্ট আছে , অকপটে স্বীকার করেন জাকির৷ তিনি বলেন , ‘যখন বহু বছরের পুরোনো কোনও গাছ কেটে ফেলি , তখন ভীষণ কষ্ট হয়৷ মন খারাপ হয়৷ কিছু তো করার থাকে না৷ নীরবে করাত চালাই শুধু৷ জোর করে তো কাটি না৷ অরণ্য সন্তাহে সবাই গাছ লাগানোর কথা বলছে৷ তার মধ্যে আমরা গাছ কাটতে যাব , ভাবতেই পারি না৷ এতে আমাদের আর্থিক ক্ষতি হয় ঠিকই৷ কিন্ত্ত মনের সায় পাই৷

গাছ না -কেটেও যে আনন্দ আছি , টের পাই৷’রাজ্য জুড়ে অরণ্য সন্তাহ উদ্যাপনের মধ্যে হয়তো এঁদের কথা মনে রাখার প্রয়োজন কেউ বোধ করেন না৷ কিন্ত্ত নীরবে গাছ কাটা থেকে বিরত থাকার এমন শপথকেও তারিফ না -করার কারণ নেই৷ এঁদের অনেকে ৩০ -৪০ বছর ঘরে গাছ কাটছেন৷ সকাল হতেই সাইকেলে কিংবা হেঁটে কাঁধে করাত , কুড়ুল , দড়ি , ছেনি ইত্যাদি নিয়ে বেরিয়ে পড়াই এঁদের রোজনামচা৷ গ্রামে কিংবা শহরে হাঁক পাড়েন , ‘কেউ গাছ কাটবে গো ?’ কেউ ডাকলে সেদিন তাঁর গাছ কেটে দেন ওঁরা৷ রজব জানালেন , ‘আমাদের কেউ কেউ হয়তো জীবনে হাজার গাছও কেটে ফেলেছেন৷ কিন্ত্ত কাউকে তো বোঝাতে পারব না যে কত গাছ কাটতে গিয়ে চোখের জল আটকাতে পারিনি৷ সংসারের কথা ভেবে চোখের জল মুছে আবার করাত চালাতে হয়েছে৷

কী করার আছে আমাদের বলুন ?’আসেদ বলেন , ‘আমাদের কথা বলব কাকে ? কেউ তো বিশ্বাস করে না যে আমরাও গাছ কাটতে কষ্ট পাই৷’ বনকর্তারা বলছেন , এই বোধটাই আগামিদিনের প্রেরণা৷ এমন মনোভাব যত তৈরি হবে , ততই সফল হবে অরণ্য সন্তাহ পালনের উদ্দেশ্য৷ কিন্ত্ত আলাদা করে জাকিব -রজবদের এই এক সন্তাহের সংযমের মূল্য কি কেউ মনে রাখবে তখন ?

অপর্ণাকে খুনে ফাঁসির বদলে যাবজ্জীবন দণ্ড

$
0
0

এই সময়, কৃষ্ণনগর : হাইকোর্ট ঘুরেও সাজা এড়াতে পারল না কৃষ্ণগঞ্জে অপর্ণা বাগ খুনে অভিযুক্তরা৷ শাস্তি লঘু হলেও রেহাই হল না তাদের৷ ফাঁসির বদলে এ বার অভিযুক্ত ১১ জনকেই সারাজীবনের জন্য কারাদণ্ড দিল কৃষ্ণনগর জেলা আদালত৷ সরকার পক্ষ অপরাধের ধরণ সম্পর্কে ভিন্ন ব্যাখ্যা হাজির করার পরেই আদালত সাজা বদল করেছে বলে আইনজীবীরা মনে করছেন৷ আসামিরা অবশ্য লঘু সাজাতেও সন্ত্তষ্ট নয়৷ এজলাসে দাঁড়িয়েই এই রায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেয় তারা৷ তবে সাজা লঘু হলেও আদালতের নির্দেশে সন্তোষ প্রকাশ করেছে সিপিএম ও নিহত অপর্ণা বাগের পরিবার৷ মূল অভিযুক্ত লঙ্কেশ্বর ঘোষ তৃণমূলের কর্মী বলে অভিযোগ থাকলেও শাসকদল ঘটনা থেকে দূরত্ব তৈরি করেছে৷ কৃষ্ণনগর জেলা আদালতে এই মামলার রায় জানতে শনিবার ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো৷

শুক্রবারই নতুন করে অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন জেলা ও দায়রা (তৃতীয় ) আদালতের বিচারক মধুমিতা রায়৷ শনিবার তাদের আমৃত্যু কারাদণ্ড ঘোষণা করেন তিনি৷ এর আগে এই আদালতই ২০১৬ -এর ৪ ফেব্রুয়ারি ওই ১১ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল৷ নিম্ন আদালতের ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে আসামিরা হাইকোর্টে আবেদন করেছিল৷ হাইকোর্ট কিন্ত্ত মামলাটি জেলা আদালতেই ফেরত পাঠিয়ে নতুন ভাবে শুনানি করতে বলে৷ সেই শুনানি শেষেই এ দিন রায় দিলেন বিচারক৷ ইতিমধ্যে আসামিদের আবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল যে আগের রায়ের প্রভাব যেন নতুন করে শোনা মামলায় না -পড়ে৷

কৃষ্ণনগর জেলা আদালতের সরকারি আইনজীবী অশোক মুখোপাধ্যায় জানান , ২০১৬ -এর ১৬ অগস্ট সুপ্রিম কোর্টের সেই নির্দেশ মানা হয়েছে৷ তিনি বলেন , ‘শুনানির সময় যখন আমাকে আদালত ডেকেছিল , তখন আমি বলেছিলাম যে ভারতীয় দণ্ডবিধিতে ৩০২ ধারায় খুনের মামলায় দু’টি সাজার কথা আইনে আছে৷ একটি ফাঁসি , অন্যটি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড৷ ফাঁসি দেওয়া হয় বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধ হলে৷ এই মামলায় অপরাধ সেই পর্যায়ে পড়ে কিনা , সেটা আদালতের বিচার্য বিষয়৷ তাছাড়া এটাও বলি , সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ ছে যে আগের রায়ের প্রভাব যেন এক্ষেত্রে না -থাকে৷ আগের রায় বহাল থাকলে আসামি পক্ষের আইনজীবী বলতে পারেন , বিচারক আগের রায় দ্বারা প্রভাবিত৷ বিচারক সব শোনার পর ১১ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন৷ ’ নির্দেশ দিয়ে বিচারক চেয়ার ছেড়ে উঠে যেতেই প্রায় সমস্বরে ক্ষোভ জানাতে শুরু করে আসামিরা৷ নেপাল ঘোষ নামে এক আসামিকে বলতে শোনা যায় , ‘আমাদের দেখে কি মনে হয় আমরা ক্রিমিনাল ? মামলায় আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী ঠিক মতো ছিল না৷ তবু আমাদের সাজা দেওয়া হল৷ ’ পরে আসামিদের আইনজীবী কাজল ঘোষ বলেন , ‘আমার মক্কেলরা এই নির্দেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যাবে বলে জানিয়েছে৷ ’

২০১৪ -এর ২৩ নভেম্বর নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ থানার ঘুঘুরাগাছি গ্রামের বধূ অপর্ণা বাগকে খুনের মামলায় এই ১১ জন অভিযুক্ত হয়েছে৷ লঙ্কেশ্বর ঘোষ নামে মূল অভিযুক্তের নেতৃত্বে তারা ওই গ্রামের ৫২টি পরিবারের জমি দখল করতে গিয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে৷ ট্র্যাক্টর দিয়ে ফসল মাড়িয়ে জমি দখলের চেষ্টা করে তারা৷ গ্রামবাসীরা মহিলাদের এগিয়ে দিয়ে জমি মাফিয়াদের ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলেন৷ কিন্ত্ত দুষ্কৃতীরা মহিলাদের লক্ষ করেই গুলি ছোঁড়ে৷

গুলিতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছিল এক বধূ অপর্ণা বাগের৷ তখন অভিযোগ ছিল যে মূল অভিযুক্ত লঙ্কেশ্বর ঘোষ এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত৷ যদিও তৃণমূলের কৃষ্ণগঞ্জ ব্লক সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোষ চৌধুরী শনিবার বলেন , ‘আগেও বলেছি , এখনও বলছি , লক্ষ্মণ ৮ -১০ বছর আগে আমাদের দল করত৷ কিন্ত্ত খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ায় আমরা ওকে দল থেকে বিচ্ছিন্ন করেছিলাম৷ আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার হয়েছিল৷ বিচারক যা রায় দিয়েছেন , তাতে আলাদা ভাবে আমাদের কিছু বলার নেই৷ ’ সিপিএমের কৃষ্ণগঞ্জ লোকাল কমিটির সম্পাদক সুকুমার দাস বলেন , ‘রায় বদলে গেলেও আমরা অখুশি নই৷ আমরা চাই আসামিরা জীবনভর কারাদণ্ড ভোগ করুক৷ মাঝপথে যেন ছাড়া না -পায়৷ ’

বিচ্ছিন্ন দ্বীপ পাহাড়ে অস্ত্র উপেক্ষাই

$
0
0

অমিত চক্রবর্তী ■ দার্জিলিং
রাজনীতিতেই দার্জিলিং যেন পৃথক ভূখণ্ড৷
মোর্চার আন্দোলন এবং বন্ধের ৩২ দিন পেরোল রবিবার৷ লাগাতার আগুন , ভাঙচুরের মতো ধ্বংসাত্মক বিশৃঙ্খলার সঙ্গে নতুন সংযোজন উপেক্ষা৷ পুলিশ প্রশাসন , মিলিটারি সিআরপিএফের ভারী বুটের শব্দ , তাক করা বেয়নেট গা -সওয়া গোর্খাল্যান্ডের দাবিদারদের কাছে৷ এক মাস ধরে বন্ধ দোকানপাট , যান চলাচল , স্কুল -কলেজ৷ সরকারি অফিস খোলা থাকলেও , কর্মীর দেখা নেই৷ বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবাও৷ কিন্ত্ত এই জগত্ বিছিন্ন এক দ্বীপেও কোনও হেলদোল নেই পাহাড়বাসীর৷ ভাঙচুর -আগুনের তীব্রতা কমিয়ে আন্দোলন এখন উপেক্ষার৷ আইনের শাসনকে বুড়ো আঙুল দেখানোর৷ সূত্রের খবর , গত এক মাসে দার্জিলিং সদর , মিরিকের মতো থানায় তেমন কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি স্থানীয় বাসিন্দারা৷ আন্দোলনকারীদের দাবি , কোনও অঘটন ঘটেনি এমন নয় , আসলে রাজ্যের উপর পাহাড়ের ভরসা নেই৷ তাই এও এক ধরনের আন্দোলনের পথ৷

রবিবার সকাল থেকে দার্জিলিং -কালিম্পংয়ে বেশ কিছু এলাকায় আন্দোলনকারীদের পিকেটিং থাকলেও , কোনও বড় অঘটন ঘটেনি৷ শুধু মিরিকে বন দন্তরের একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া ছাড়া৷ রবিবার সকালে দার্জিলিং সদরে আন্দোলনের ভরকেন্দ্র ছিল অন্য রকম৷ সাংস্কৃতিক কর্মীরা গান , পথনাটকের মাধ্যমে গোর্খাল্যান্ডের দাবির পাশে দাঁড়িয়েছেন৷ পাহাড়ের স্কুলের শিক্ষকরা মিছিল করেছেন৷ মিছিলে হাঁটেন ক্রীড়াবিদরাও৷ এ দিনই ২০১২ সালে রাজ্য সরকারের দেওয়া সঙ্গীত সম্মান পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন এক নেপালি সঙ্গীত শিল্পী৷ সোনাদার স্কুলশিক্ষক প্রেম রাইয়ের বক্তব্য , ‘দাবি না -মেটা পর্যন্ত আন্দোলন চলবেই৷ আগেও গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলন হয়েছে৷ কিন্ত্ত সে সময় মাঝেমাঝে বন্ধে ছাড় দিয়ে খাদ্যদ্রব্য জোগানের ব্যবস্থা করা হত৷

এ বার তা নেই৷ রাজনৈতিক দল বা নেতারা আন্দোলন শুরু করলেও এখন তার রাশ আমজনতার হাতে৷ নেতারা চাইলেও , জনতাই তাঁদের এখন আন্দোলন থেকে সরতে দেবে না৷ ’কলেজ পড়ুয়া ভুবন শেরপাও বলেন , আগের যে কোনও আন্দোলনের তুলনায় এ বারের আন্দোলনে যুব সমাজের অংশগ্রহণ বেশি৷ তাঁর কথায় , ‘গোটা রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে পাহাড়ের সিলেবাস রাজ্য সরকার এক করে দেওয়াতেই পড়ুয়ারা ক্ষিন্ত হয়ে উঠেছে৷ ’ পাহাড়ের রানি , পর্যটকশূন্য৷ বন্ধ পাব , পানশালা বা শপিং মল৷ ইন্টারনেট না -থাকাতেও ‘কুছ পরোয়া নেহি ’ বলে উড়িয়ে দিচ্ছে তরুণ প্রজন্ম৷ শৈলশহর এখন দু’টি ভাগে বিভক্ত৷ একদিকে নিরাপত্তা বাহিনী -প্রশাসন তাদের মতো রয়েছে৷ অন্যদিকে , রয়েছে গোটা পাহাড়বাসী৷ এ দিনও আন্দোলনে যুক্ত দল ও গণসংগঠনগুলির তরফে বিভিন্ন মহল্লায় সব্জি , চাল বিলি করা হয়৷ লঙ্গরখানা খুলে খাওয়ানো হচ্ছে খিচুড়ি , তরকারি৷

পাহাড়বাসীর উপেক্ষার পাশেই রয়েছে সরকারের ধীরে চলো নীতি৷ এ দিনই হাইকোর্টের নির্দেশে মেনে বাড়তি চার কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী পৌঁছেছে পাহাড়ে৷ সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করলে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করছে ঠিকই৷ কিন্ত্ত ওই পর্যন্তই৷ আন্দোলনকারীদের প্রতি এই ‘উপেক্ষা ’ ভবিষ্যতে আইনের শাসন ফিরিয়ে আনতে ব্যুমেরাং হবে কি না তা নিয়ে প্রমাদ গুনছেন আমলারা৷ পাহাড়বাসীও যত কষ্টই হোক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে অনড়৷ তাই সেন্ট যোসেফ কলেজে তাঁদের অনুমতি না নিয়ে কেন সিআরপিএফ ক্যাম্প করা হচ্ছে , তা নিয়েও প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে৷ সোনাদা , সিংমারি , ঘুম কালিম্পয়ে বাড়তি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে চাপ বাড়ানোর প্রশাসনের পরিকল্পনাও এখন আন্দোলনের নেতাদের নজরে পড়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গ বা ভারত নয় , গোটা শৈল শহর এখন এক নেই রাজ্য৷

কুয়েতে গিয়ে বিপাকে ডুয়ার্সের জ্যোতি

$
0
0

জয়া চক্রবর্তী ■ আলিপুরদুয়ার
সংসারের অভাব মেটাতে কুয়েতে কাজ করতে বিপাকে পড়েছেন বন্ধ চা-বাগানের এক মহিলা৷ দেশে ফেরা দূরস্থান , কুয়েতে তিনি এখন গ্রেপ্তার হওয়ার বিপদের মুখে৷ যে দালাল চক্রের হাত ধরে তিনি বিদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন , তাদের প্রতারণাই এখন তাঁকে পথে বসিয়েছে৷ মেয়ের মৃত্যু সংবাদ ভেবে দেশে ফেরার চেষ্টা করতে গিয়ে ফাঁস হয় ওই প্রতারণা৷

মহিলা ভারতীয় নাগরিক হলেও দেখা যায় যে দালাল চক্র তাঁর পাসপোর্ট করে দিয়েছিল নেপালের ঠিকানা দিয়ে৷ দেশে ফেরার জন্য তিনি কিন্ত্ত ভারতীয় নাগরিকত্বেরই প্রমাণপত্র দাখিল করেন কুয়েতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে৷ এতেই কুয়েত সরকার তাঁর দেশে ফেরা আটকে গ্রেপ্তার করেছিল৷ মহিলাটি যাঁর বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন , তিনি মুচলেকা দিয়ে মহিলাকে নিজের বাড়ি রেখেছেন বটে৷ কিন্ত্ত তাঁর দেশে ফেরা অনিশ্চিতই৷

ডুয়ার্সের চা-বলয় বীরপাড়ার থানার বান্দাপানি চা -বাগানের বাসিন্দা বছর ৩৭ -এর ওই মহিলা জ্যোতি মঙ্গর৷ কুয়েত থেকে টেলিফোনে ‘এই সময় ’কে রবিবার জ্যোতি বলেন , ‘লোভের বশে ভুল পথে পা দিয়েছিলাম৷ ঘরের অভাব মেটাতেই এই ঝুঁকি নিয়েছিলাম৷ মালকিন ভালো হওয়ায় বিপদে পড়তে হয়নি৷ বেশি দিন দেরি হলে কী কপালে আছে , জানি না৷ যেভাবেই হোক দয়া করে আমাকে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করুন৷ আর মন টিকছে না এখানে৷ মেয়ের মুখটা সব সময় মনে পড়ছে৷’ বান্দাপানি চা-বাগানের নিউ লাইনের বাসিন্দা তাঁর পরিবার ইতিমধ্যে আলিপুরদুয়ারের জেলা প্রশাসনকে গোটা ঘটনা জানিয়ে জ্যোতিকে দেশে ফেরানোর আর্জি জানিয়েছেন৷ তাতে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসনও৷

আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক দেবীপ্রসাদ করণম বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আমি জেলার পুলিশ সুপারকে লিখিত ভাবে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি৷ রিপোর্ট পাওয়া মাত্রই বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করে জ্যোতিকে দেশে ফেরাতে উদ্যোগ নেওয়া হবে৷ ’ দিদিকে দেশে ফেরাতে নাচার জ্যোতির ভাই এখন ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রশাসনের দরজায় দরজায়৷ তাঁর বক্তব্য , ‘কুলভূষণ যাদবকে ফিরিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ যেভাবে উদ্যোগী হয়েছিলেন , তাতে আমরাও আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছি৷ আমার বিশ্বাস , বিদেশমন্ত্রী যেহেতু একজন মহিলা , তাই দিদির বিষয়টি তিনি জানতে পারলেই চেষ্টা করবেন৷ জেলাশাসকও ঘটনাটি নিয়ে উদ্বিগ্ন৷ ’ বান্দাপানি চা -বাগানে এখন উদ্বিগ্ন জ্যোতির পরিবার৷ দুশ্চিন্তায় আছে চা -বাগানে তাদের প্রতিবেশীরাও৷

জ্যোতির স্বামী কাঞ্ছা বলেন , ‘কুয়েতে চলে যাওয়ার পরে জ্যোতির মালকিন ওঁর সঙ্গে আমার কথা বলিয়ে দেওয়ায় বেশ খানিকটা চিন্তামুক্ত ছিলাম৷ কিন্ত্ত ছোট মেয়ের মৃত্যুর পর দালাল চক্রের প্রতাড়ণার বিষয়টা পরিষ্কার হয়েছে আমাদের কাছে৷ দালালের জালিয়াতির ফলে জানি না শেষপর্যন্ত ও আর দেশে ফিরতে পারবে কিনা৷ ’ পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে , ২০১৩ সালে বান্দাপানির চা -বাগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এক বছর পর সংসারকে অনাহারের বিপদ থেকে বাঁচাতে পরিচারিকার কাজ করতে দিল্লি পাড়ি দিয়েছিলেন জ্যোতি৷ পরে আরও বেশি টাকা আয়ের আশায় দিল্লিতে অন্য কাজ খুঁজতে শুরু করেন তিনি৷ তখনই দালাল চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ হয় তাঁর৷ মোটা টাকা উপার্জনের লোভে সেই চক্রের সঙ্গে চলে যান কুয়েতে৷ সে দেশের এক মহিলা তেল ব্যবসায়ী মোনা ইব্রাহিমের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ জোটে৷

এতদিন সব ঠিকঠাক চললেও চার মাস আগে বান্দাপানি চা -বাগানে ছোট মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে দেশে ফেরার তোড়জোড় করতেই ফাঁস হয় আসল রহস্য৷ তিনি কাগজপত্র দাখিল করলে কুয়েত কর্তৃপক্ষ টের পান যে নেপালের নকল প্রমাণপত্র দিয়ে তাঁর পাসপোর্ট ও ভিসা তৈরি করে দিয়েছে দালাল চক্র৷

হরকাবাহাদুর কি আন্দোলন থেকে সরলেন, জল্পনা

$
0
0

সঞ্জয় চক্রবর্তী ■ শিলিগুড়ি
হরকাবাহাদুর ছেত্রী কোথায়? মোর্চা ত্যাগ করলেও তিনি পাহাড়ের সবচেয়ে পরিচিত মুখ বাঙালির কাছে৷ সজ্জ্বন , শিক্ষিত মানুষটিতে গত এক সন্তাহ ধরে আর কোনও কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে না৷ তাঁর দু’টি মোবাইলই সুইচ অফ৷ তাই জল্পনা ছড়িয়েছে, হরকাবাহাদুর কি গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ালেন ? কিন্ত্ত সরে দাঁড়ানোর কারণই বা কী ? তিনি দীর্ঘদিন আলাদা রাজ্যের দাবির চেয়ে পাহাড়ের উন্নয়নকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন৷ তা নিয়ে মতবিরোধের কারণে কালিম্পংয়ের এই প্রাক্তন বিধায়ক মোর্চা ছেড়ে নতুন দল জন আন্দোলন পার্টি তৈরি করেছিলেন৷ কিন্ত্ত জুনের দ্বিতীয় সন্তাহে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর মোর্চা যখন জিটিএ ছেড়ে গোর্খাল্যান্ড আদায়ের ডাক দেয় , হরকাবাহাদুর তখন সেই দাবিকে সমর্থন করে প্রত্যক্ষ আন্দোলনের নেতৃত্বেই চলে আসেন৷

তার পর আচমকা গত এক সন্তাহ ধরে তাঁর আন্দোলনে অনূপস্থিতি নানা জল্পনার জন্ম দিয়েছে৷ তাঁর তৈরি জন আন্দোলন পার্টির দার্জিলিংয়ের নেতা অমর লামা অবশ্য দাবি করেছেন যে হরকাবাহাদুর ছেত্রী কালিম্পংয়েই রয়েছেন৷ তিনি অসুস্থ বলে বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না৷ যদিও পাহাড়ের অধিকাংশ নেতাই তাঁর বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে কিছু জানেন না৷ গোর্খাল্যান্ড মুভমেন্ট কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক তথা জিএনএলএফ নেতা নীরজ জিম্বা বলেছেন , ‘আমি যতদূর জানি , দিল্লির কর্মসূচির পরে হরকাবাহাদুর ছেত্রী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন৷ তার পরে উনি কোথায় , বলতে পারব না৷ ’ মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন , ‘হরকাবাহাদুর ছেত্রী সম্পর্কে আমি কিছু জানি না৷ ’ এতে জল্পনা শুরু হয়েছে যে তিনি গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন৷

এর আগে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন৷ গত বিধানসভা নির্বাচনে কালিম্পং কেন্দ্রে তাঁকে সমর্থন করেছিল তৃণমূল৷ সেই যোগসূত্র থাকার কারণেই কি হরকাবাহাদুর আন্দোলন থেকে সরে গেলেন ? পাহাড়ের রাজনৈতিক মহলে অবশ্য আলোচনা চলছে মোর্চার হিংসাত্মক আন্দোলনে বিরক্ত হয়েই তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন৷ পৃথক রাজ্যের দাবিতে চলতি আন্দোলনে পাহাড় জুড়ে এখন তাণ্ডব চলছে৷ সরকারি সম্পত্তিতে অগ্নিসংযোগ , হামলা -ভাঙচুর তো চলছেই , আক্রান্ত হচ্ছে পুলিশও৷ পাহাড়ের বিদ্যুত্ উত্পাদন কেন্দ্রগুলিকেও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ সব ক’টি ক্ষেত্রেই অভিযোগ উঠেছে , মোর্চা কর্মীদের একাংশ এই হাঙ্গামায় জড়িত৷ মোর্চা নেতারা সেই বিশৃঙ্খল আচরণে রাশ টানার কোনও চেষ্টা তো দূরের কথা , এর নিন্দাও করেননি৷

এতে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন প্রাক্তন কলেজ শিক্ষক হরকাবাহাদুর৷ হিংসাত্মক আন্দোলনে তাঁর বরাবরই আপত্তি ছিল৷ গত ৩০ জুন কালিম্পংয়ে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় বৈঠকে জন আন্দোলন পার্টির প্রতিনিধিরা দলের সেই অবস্থানের কথা জানিয়েও দেন৷ সে সময় হরকাবাহাদুরও হুমকি দিয়েছিলেন যে আন্দোলনের নামে এমন গুন্ডামি চলতে থাকলে তাঁর দল আন্দোলন থেকে সমর্থন তুলে নেবে৷ তার পরেও পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি৷ রোজই কোনও না -কোনও ভাবে হাঙ্গামা চলছে পাহাড়ে৷ নতুন করে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার পর কিন্ত্ত তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রচার শুরু করে দিয়েছিলেন৷ তার পরও আন্দোলনের নামে এমন তাণ্ডবে ব্যাথিত হয়ে হরকাবাহাদুর কোনও বিতর্কে না -গিয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিলেন বলে জল্পনা চলছে পাহাড়ে৷

তিনি ইতিমধ্যে হওয়া পাহাড়ের দু’টি সর্বদলীয় বৈঠকে ছিলেন না৷ জিএনএলএফ নেতা নীরজ জিম্বা ও মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি তাঁর অবস্থান জানেন না বলায় জল্পনা আরও জোরদার হয়েছে৷ জন আন্দোলন পার্টির পক্ষ থেকে অবশ্য দাবি করা হয়েছে , শুধু হরকাবাহাদুর নন , মোর্চা নেতা বিমল গুরুংকেও তো মিছিল -মিটিংয়ে দেখতে পাওয়া যায় না৷ তিনিও কয়েকদিন ধরে জনসমক্ষে আসছেন না৷ পাতলেবাসেই তিনি ঘাঁটি গেড়েছেন৷ ওই এলাকায় কাউকে ঢুকতেও দেওয়া হচ্ছে না৷ কেবলমাত্র দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারাই সেখানে যেতে পারছেন৷ তাহলে প্রকাশ্যে না -এলেও হরকাবাহাদুরকে নিয়ে এমন বিতর্কের কারণ কী ? তাতে অবশ্য জল্পনায় রাশ পড়ছে না৷

ভূমিকম্পে কাঁপল উত্তরবঙ্গ, আপনি টের পেয়েছেন?

$
0
0

এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: এক দিকে ১ লক্ষ টন ওজনের হিমশৈল ভেঙে পড়ছে, অন্য দিকে বিশ্বের নানা প্রান্ত বার বার কেঁপে উঠছে ভূমিকম্পে। সোমবার ১৭ জুলাই ভারত-ভুটান সীমান্তে আলিপুরদুয়ারের জয়গাঁও কাঁপল। রিখটার স্কেলে ভুমিকম্পের মাত্রা ছিল ৩.৪। বড় কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই।

রিপোর্ট বলছে, ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১০ কিমি গভীরে এই কম্পনের কেন্দ্রস্থল ছিল। এর ফলে উত্তরবঙ্গের কিছু অঞ্চলেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে এ অঞ্চলে টেকটনিক প্লেটের নড়াচড়ার জন্য বার বার ভূমিকম্প হচ্ছে। যেমনটা নিউজিল্যান্ড, পাপুয়া নিউগিনি, ইতালিতে সাম্প্রতিককালে দেখা গেল। ২ বছর আগে নেপালের ভয়ংকর ভূমিকম্পের জন্যও দায়ী ছিল এই টেকটনিক প্লেটের গতিবিধি। ৭.৮ মাত্রার এই ভূমিকম্পে মারা গিয়েছিলেন ৯ হাজারেরও বেশি মানুষ।



পাহাড়ে কেন বাহিনী , মোর্চা এ বার বিঁধল কেন্দ্রকেই

$
0
0

অমিত চক্রবর্তী ■ দার্জিলিং
পাহাড় থেকে সিআরপিএফ সরানোর দাবি উঠল৷ কেন পাহাড়ে এখনও কেন্দ্রীয় বাহিনী , তার জবাব চাওয়া হল কেন্দ্রের কাছ থেকে৷ এতদিন মোর্চার লক্ষ্য ছিল শুধুই রাজ্য সরকার৷ এ বার আক্রমণের অভিমুখ কেন্দ্রের দিকেও৷

সোমবার জেলাশাসক অফিস ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ছিল মোর্চার৷ কয়েক হাজার মানুষের মিছিল রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে যতটা না গলা তুলল , তার থেকে বেশি সরব হল কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে৷ আবার এ দিনই মিরিকে বিক্ষোভ দেখানোর সময় মৃত্যু হয়েছে আশিস তামাং নামে এক মোর্চা সমর্থকের৷ মোর্চার অভিযোগ , পুলিশের গুলিতে আশিসের মৃত্যু হয়েছে৷ যদিও পুলিশ এই অভিযোগ মানতে চায়নি৷ এ দিনই পাতলেবাসে দুর্গের মতো ঘেরা দলীয় অফিসে মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুং এক নেপালি সংবাদমাধ্যমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন৷

মোর্চা সভাপতির দাবি , মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন , পাহাড় হাসছে৷ যদি সত্যিই তাই -ই হয় , তা হলে তিনি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পাহাড় থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহার করুন৷ পাহাড়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে তাঁর দল মিছিলে স্লোগান তুললেও গুরুং কিন্ত্ত ওই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন , কেন্দ্রের প্রতি এখনও তাঁদের ভরসা রয়েছে৷ সোমবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিকে তাঁদের নজর রয়েছে৷ তার পরে কেন্দ্র কিছু ব্যবস্থা নেবে বলে তাঁদের বিশ্বাস৷ সূত্রের খবর , রাষ্ট্রপতির শপথে মোর্চা সভাপতির আমন্ত্রণ রয়েছে৷ কিন্ত্ত তিনি এই পরিস্থিতিতে তাঁর দুর্গ ছেড়ে বেরোবেন কি না , তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে সব মহলে৷

গত একমাস ধরে বন্ধের মধ্যে শহরের অলিগলি থেকে বড় রাস্তা ফাঁকা থাকলেও ব্যতিক্রম দার্জিলিং টয়ট্রেন স্টেশন থেকে চক বাজার হয়ে হিলকার্ট রোডের জিরো পয়েন্ট৷ বেলা দশটার পর থেকে দলে দলে পুরুষ -মহিলা এসে জড়ো হন রাজপথের এই অংশে৷ সেখান থেকেই শুরু হয় মিছিল , স্লোগান৷ কখনও তা যায় ম্যাল পর্যন্ত৷ রান্না খাবার বিলি , ট্রাক -গাড়িতে চাল -সব্জি বিলিবণ্টনও তাই হয় এই বড় রাস্তার বিভিন্ন মোড় থেকে৷ তবে বেলা দুটো বাজতেই ভিড় উধাও৷ যদিও সোমবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য বড় কোনও মিটিং -মিছিল হবে না বলে আগেই ঘোষণা করেছিল মোর্চা৷ কিছু সময়ের জন্য জেলাশাসকের অফিস ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ছিল৷ সে জন্য সকাল ন ’টা থেকেই ভিড় জমতে থাকে স্টেশন থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত৷ বেলা পৌনে বারোটা নাগাদ সেই মিছিলের মাথা যখন জেলাশাসকের অফিস পৌঁছেছে , শেষ তখনও জিরো পয়েন্টে৷ মোর্চার স্থানীয় নেতাদের দাবি , দশ হাজারেরও বেশি লোক এসেছিল আগাম ঘোষণা ছাড়াই৷ সেই মিছিল থেকেই সিআরপিএফকে দার্জিলিং থেকে সরিয়ে কাশ্মীর পাঠানোর দাবি ওঠে৷

এর আগে ১১ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন ছিল পাহাড়ে৷ কিন্ত্ত কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে আরও চার কোম্পানি সিআরপিএফ রবিবারই চলে এসেছে৷ ফলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে দিল্লিকেও পাল্টা চাপে রাখার কৌশল নেওয়া হল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ এ দিন জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ব্যবহারে রাশ টানতে স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিল মোর্চা৷ কিন্ত্ত শেষ পর্যন্ত জেলাশাসক তাঁর চেম্বারে তাঁদের ডাকেননি৷ বরং নিজেই বাইরে বেরিয়ে এসেছিলেন৷ এই বিষয়টিকে ভালো ভাবে নেননি মোর্চা নেতারা৷ তাঁরা ফিরে আসেন৷ আন্দোলনের পরবর্তী রূপরেখা ঠিক করতে আজ , মঙ্গলবার কোঅর্ডিনেশন কমিটি বৈঠক করবে৷

পূরণ হওয়ার নয় এই ক্ষতি, শঙ্কা পাহাড়ের পর্যটনে

$
0
0

অমিত চক্রবর্তী ■ দার্জিলিং
ভরা বর্ষাতেও কাঞ্চনজঙ্ঘা হাসছে৷ এ দৃশ্য দেখতে ভোর রাতে কাঁচা ঘুম থেকে উঠে গাড়ি ভাড়া করে টাইগার হিলে গিয়ে ঠেলাঠেলি করার দরকার নেই৷ দার্জিলিংয়ের ম্যালে বসেই রোদ ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবি চোখে পড়বে৷ কলকাতায় বসে এই খবর পড়ে আমবাঙালি হাত কামড়াতে পারেন৷ কিন্ত্ত ইচ্ছা থাকলেও পাহাড়ে ছুটে আসার জো নেই৷ মোর্চার বন্ধের জেরে পাহাড়ে এখন পর্যটকদের নো -এন্ট্রি৷ স্থানীয় কিছু প্রাতর্ভ্রমণকারী আর গোলমালের পাহাড়ে কর্মসূত্রে আসা কিছু পুলিশ অফিসারই কাঞ্চনজঙ্ঘাকে সোমবার উপভোগ করলেন ম্যালে বসে৷ কেউ কেউ ছবিও তুললেন৷ এপ্রিল থেকে পর্যটনের পিক সিজন জুন পর্যন্ত হলেও গত কয়েক বছর ধরে জুলাইয়েও দার্জিলিংয়ের অধিকাংশ হোটেলের সব ঘর ভরে থাকে পর্যটকে৷ এ বার জুন থেকেই পাহাড়বিমুখ পর্যটক৷

পাহাড়ে এখন নিত্য অশান্তি৷ প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি পুড়ছে তাণ্ডবে৷ পাহাড় এখন আন্দোলনকারীদের৷ বিশৃঙ্খলাকারীদের৷ এতেই দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির সম্ভাবনায় আশঙ্কিত পর্যটন ব্যবসায়ীরা৷ এই ক্ষতি আদৌ পূরণ হবে কিনা , তা নিয়ে সন্দিগ্ধ তাঁরা৷ দার্জিলিং , কার্শিয়াং , কালিম্পং -সহ গোটা পাহাড়ে হোটেল , হোম স্টে , গেস্ট হাউস মিলিয়ে ২০০০ থেকে ২২০০ ঘর রয়েছে৷ যার সব ক’টি গত একমাস ধরে বন্ধ৷ এক হোটেল ম্যানেজার বললেন , ‘সব হোটেল বাইরে থেকে তালা বন্ধ৷ তার মানে ভিতরে কোনও কর্মচারীকেও রাখা হয়নি৷ এটাও ব্যতিক্রম৷ পাহাড়ে এর আগে যতবারই বন্ধ হয়েছে , তত বারই কিছু কর্মী রাখতে হয়েছে হোটেলে৷ কিন্ত্ত এখন খেতে দেওয়ারও উপায় নেই৷ তাই হোটেল তালাবন্ধ করা ছাড়া উপায় কি ?’ ম্যানেজার বললেন , ‘নাম লিখবেন না৷ নিরাপত্তা নেই যে৷ ’চা -শিল্প ছাড়া পাহাড়ের অর্থনীতির আর এক স্তম্ভ পর্যটন৷ বন্ধে সেই পর্যটনে চরম ক্ষতি হয়েছে৷ উত্তর -পূর্বাঞ্চলে গ্রামীণ পর্যটন বিকাশে অগ্রণী সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজারভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজমের আহ্বায়ক রাজ বসু বলেন , ‘পর্যটনের ক্ষেত্রে একদিনের বন্ধকে সাতদিনের ক্ষতি বলে ধরা হয়৷ ফলে পাহাড়ের এই ৩৩ দিনের বন্ধে ক্ষতি কতটা , তা বুঝতে অসুবিধা হয় না৷ ভবিষ্যতের ক্ষতি আরও বেশি৷ ন্যূনতম ক্ষতি মাপার জন্য ২০০০ ঘর এবং ঘর প্রতি ভাড়া কমপক্ষে এক হাজার টাকা ধরলেও তার সঙ্গে বন্ধের দিন গুণ করলেই হবে৷ ’ দার্জিলিং শহরে হিলকার্ট রোড , লা ডেংলা রোড , ম্যাল রোড , আপার ম্যাল রোড , কোচবিহার রোড , চকবাজার , লেবং কার্ট রোড , মোটর স্ট্যান্ড -সহ আশপাশের এলাকায় সারা বছরই স্থানীয় মানুষের সঙ্গে পর্যটকের ভিড়ে ঠাসা থাকে সমস্ত হোটেল৷

সেই দার্জিলিং এখন বিকেলের পরে যেন ভূতুড়ে শহর৷ আলো -আঁধারিতে ঢেকে থাকে শহরের অধিকাংশ রাস্তা৷ দোকানপাট বন্ধ৷ রাস্তায় গাড়ির দেখা নেই৷ মোটরবাইকও উধাও হয়ে যায় বিকেলের পর থেকে৷ হোটেল মালিকরা বলছেন , এপ্রিল থেকে জুন , এই সময়টাকে মূল লাভের সময় হিসেবে ধরা হয়৷ আর সেপ্টেম্বর -অক্টোবরের আয়কে হোটেল রক্ষণাবেক্ষণের খরচ হিসেবে তোলা থাকে৷ প্রতি পর্যটক পিছু পোর্টার , গাড়িচালক , রাঁধুনি -সহ ছ’জন স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থান হয়৷ পুজোতেও হোটেলের তালা খুলবে কি না , বুঝতে পারছেন না মালিকরা৷ খুললেও ইতিমধ্যে যে ভাবে বুকিং বাতিল করেছেন পর্যটকরা , তাতে এই ক্ষতি পূরণ সম্ভব হবে না বলে তাঁরা মনে করছেন৷ এই বর্ষায় স্যাঁতস্যাঁতে ভাব থাকায় লেপ , তোষক , কম্বল , বালিশ ভিজে ওঠে৷ তাই এই সময়ে কর্মীরা রোদ উঠলে সে সব ঝাড়পোঁছ করে সামলে রাখেন৷ কিন্ত্ত এখন তা আর সম্ভব হচ্ছে না কর্মীরা না -থাকায়৷ বিদেশেও দার্জিলিং সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচার পর্যটনে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করছে বলে মনে করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা৷ বন্ধ পাহাড়ের অন্যতম আকর্ষণ টয়ট্রেন৷ যদি কোনও দেশ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ধ্বংসের জন্য দার্জিলিংয়ে পর্যটকদের আসা বিপজ্জনক ঘোষণা করে , তা হলে সেই ক্ষতি সামাল দেওয়া মুশকিল হবে বলে তাঁদের মত৷ গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের বিরোধিতা না -করেও তাই তাঁরা চাইছেন শান্তি ফিরুক পাহাড়ে৷ শান্তি না -ফিরলে দার্জিলিংয়ের পর্যটনই যে শেষ হয়ে যাবে !

বিকৃতকাম সনাতনকে দুষছে গ্রাম

$
0
0

সঞ্জিত গোস্বামী ■ পুরুলিয়া
শিশুকন্যার দেহে সুচ ফোটানোয় অভিযুক্তকে গোটা গ্রাম জানে ‘বিকৃতকামী ’ হিসাবে৷ এর আগে এত বড় অপরাধের রেকর্ড না-থাকলেও পুরুলিয়ার নদীয়াড়া গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দারাও সনাতনের বিকৃত যৌনলালসা সম্পর্কে অবহিত৷ প্রাক্তন হোমগার্ড সনাতনের সঙ্গে বড় হয়ে ওঠা এলাকার এক প্রৌঢ় সোমবার ‘এই সময়’কে বলেন, ‘সনাতনের সম্পর্কে অনেকে বলে যে ও নাকি তন্ত্রসাধনা , তুকতাক, ঝাড়ফুঁক করে৷ এ সব একেবারেই ঠিক নয়৷ আমরা ছোট থেকে ওকে চিনি৷ বরাবরই ও বিকৃতকাম৷ মেয়ে দেখলেই ও উন্মাদের মতো আচরণ করে৷ ’

এমন আচরণের জন্য পরিবারও অনেক দিন আগে থেকে সনাতনের উপর রুষ্ট৷ এ বারও গোটা ঘটনাটি সামনে এসেছে সনাতনের এক পুত্রবধূর উদ্যোগে৷ ওই পুত্রবধূ সক্রিয় না-হলে দেহে একাধিক সুচ নিয়ে যন্ত্রণাকাতর তিন বছরের শিশুকন্যার চিকিত্সাই শুরু হত না৷

শাশুড়ির বাত্সরিক শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে পুরুলিয়ার নদীয়াড়া গ্রামের বাড়িতে এসে শিশুটিকে ছটফট করতে দেখেন সনাতন পাঠকের বড় ছেলের স্ত্রী রিঙ্কু সরকার৷ এই সনাতনের বিরুদ্ধেই শিশুকন্যাটির শরীরে সাত-সাতটি সুচ ফুটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে৷ সনাতন এখনও ফেরার৷ শিশুটির চিকিত্সা চলছে এসএসকেএমে৷ ঘটনাটি জানাজানিই হত না রিঙ্কু উদ্যোগ নিয়ে শিশুটিকে হাসপাতালে না-পাঠালে৷ রিঙ্কু বলেন, ‘আমি বাড়ি এসে দেখি , বাচ্চাটা বিছানায় পড়ে একটানা কেঁদে চলেছে৷ আমিই ওর মাকে বলি শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে৷ আমি একরকম জোর করেই ওদের হাসপাতালে পাঠাই৷ ’ সনাতনের পরিবার এখন তার শাস্তিই চাইছে৷ তার ছোট ছেলের স্ত্রী রিনা পাঠক বলেন , ‘এমন অপরাধের জন্য আমার শ্বশুরের চরম শাস্তি হওয়া উচিত৷ শাস্তি হওয়া উচিত শিশুটির মায়েরও৷ সব জেনেও ও বাচ্চাটাকে চিকিত্সা না -করিয়ে ঘরে ফেলে রেখেছিল৷ ’ শুধু পরিবার নয় , গোটা নদীয়াড়া গ্রামই এখন ফুঁসছে সনাতনের এমন অপকর্মে৷ গ্রামে গিয়ে সনাতনের সম্পর্কে যাঁকেই জিজ্ঞাসা করুন না কেন , উত্তর মিলছে একটাই৷ ‘সনাতন পাঠকের শাস্তি চাই৷’ গ্রামের দু’-তিন জন যুবক প্রায় সমস্বরে বলেন , ‘সনাতনকে পেলে আমরা ওকে পিস পিস করে কেটে পুলিশকে উপহার দেব৷ ’ ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর ৭২ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও এখন সনাতন গ্রেন্তার না -হওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে পুলিশের উপরেও৷

যদিও পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস বলেন , ‘সনাতন ধরা পড়বেই৷ ঝাড়খণ্ডের পুলিশকেও ওর খোঁজ করতে বলা হয়েছে৷ সম্ভাব্য সব জায়গায় আমরা নজর রাখছি৷ ’ পুলিশের ধারণা , সনাতন ঝাড়খণ্ডেই পালিয়ে গিয়েছে৷ গ্রাম সূত্রে জানা গিয়েছে , পারিবারিক পেশা অনুযায়ী সনাতন কথকতা করে৷ রামায়ণ গান , কীর্তন ইত্যাদি করার সুবাদে ঝাড়খণ্ডের অনেক গ্রামে তার যাতায়াত অনেক দিনের৷ সেই যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে সেই গ্রামগুলির কোনটিতে সে আত্মগোপন করে আছে বলে মনে করছেন নদীয়াড়া গ্রামের বাসিন্দারা৷ তাঁদের বক্তব্য , দেহে সুচ ঢুকিয়ে ফেলে রাখলে শিশুটি তিলে তিলে মারা যাবে এবং তাতে তার দুষ্কর্ম কেউ টের পাবে না বলে সনাতন মনে করেছিল৷ শিশুটির মা-ও যে ভাবে ফেলে রেখেছিল , তাতে সনাতনের সেই উদ্দেশ্য সফল হয়ে যেত যদি তার পুত্রবধূ ওদের হাসপাতালে না -পাঠাতো৷

পাহাড়ে আন্দোলনের নামে গুন্ডামিই বহাল

$
0
0

এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: মোর্চা সমর্থকদের গুন্ডামিতে মঙ্গলবারও উত্তপ্ত পাহাড়। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত যে, মিরিকে অশান্তি ঠেকাতে পুলিশকে গুলি চালাতে হয়। এদিনের সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে আশিস তামাং নামে এক মোর্চা সমর্থকের। মোর্চার অভিযোগ, পুলিশের গুলিতেই আশিস তামাঙের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর দেহের ময়না তদন্তের দাবিতে প্রায় ২০০ মোর্চা সমর্থক উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে জড়ো হয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখায়।

সকালে কালিম্পঙের সতেরো মাইলে পঞ্চায়েত অফিসে আগুন লাগানোর অভিযোগ ওঠে মোর্চার বিরুদ্ধে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে মোর্চা। এর আগে গতকাল সন্ধেয় মিরিকে মিছিল করছিল মোর্চা। মিছিল থেকে স্থানীয় তৃণমূল কর্মী নবরাজ তামাঙের ওপর হামলা চালানো হয়। তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এরপরই মোর্চা ও তৃণমূলের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ বেধে যায়। নবরাজ তামাংকে শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়েছে।এদিকে পাহাড় থেকে স্পেশাল অডিট টিম নামিয়ে আনার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে নবান্নে। এই স্পেশাল টিম পয়লা জুলাই থেকেই পাহাড়ে রয়েছে। এই টিম মুখ্যমন্ত্রী গড়েছিলেন

GTA-র কাজ খতিয়ে দেখার জন্য। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত যে কোনও কাজই করতে পারছেন না ওই দলের সদস্যরা। তাই আপাতত পাহাড়ে থাকা সরকারি অফিসারদের দিয়েই অডিটের কাজ চালানো হবে বলে জানিয়েছে নবান্ন। বিকেলে মিরিক মিউনিসিপ্যালিটি অফিসে আগুন লাগিয়ে দেয় মোর্চা সমর্থকরা। তীব্র ভাঙচুর চালায় বিডিও অফিসেও।

হামলায় কারা, চিনতে পারছে না মিরিকবাসী

$
0
0

সঞ্জয় চক্রবর্তী ■ মিরিক
মিরিকে অব্যাহত হিংসা৷ সোমবার দিনভর অশান্তির পর ব্যাপক পুলিশ বাহিনী ও সিআরপিএফ মোতায়েন করা হলেও তাণ্ডব ঠেকানো যায়নি৷ সোমবার রাতে গুলিতে হত আশিস তামাংয়ের দেহ ময়না-তদন্তের পর এ দিন সন্ধ্যায় মিরিকে পৌঁছলে ফের উত্তন্ত হয়ে ওঠে মিরিক পুর এলাকা৷ পুরসভার সামনে ও শহরের যত্রতত্র দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িতে আগুন লাগায় মোর্চাকর্মীরা৷ হামলা চলে বিডিও অফিস, পুরসভা, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের বাড়িতেও৷ সোমবারের তাণ্ডবের পর পাহাড়ের হিংসায় ‘বহিরাগত’ যোগের তত্ত্বকে সামনে আনছেন পুলিশকর্তারাও৷ ক’দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাহাড়ের গোলমালের পিছনে চিনের যোগসাজশের সম্ভাবনা তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংকে চিঠি দিয়েছিলেন৷

পুলিশ নবান্নে যে রিপোর্ট দিয়েছিল , তাতে নেপালের মাওবাদী যোগের সম্ভাবনার কথাও বলা হয়েছিল৷ এ দিন রাজ্য পুলিশের এডিজি (আর্মড ফোর্স) রণবীর কুমার বলেন , ‘সোমবার থেকে মিরিকে যে গোলমাল চলছে , তাতে স্থানীয় বাসিন্দারা যুক্ত নন৷ বহিরাগতেরা গোলমাল করছে৷ ’ মিরিকের বাসিন্দাদের বক্তব্যও পুলিশের দাবিকে সমর্থন করছে৷ মিরিক পুরভবন লাগোয়া এলাকার এক বাসিন্দা বলেন , ‘মিরিকের লোকেরা গোলমাল করে না৷ তৃণমূল পুরসভার ক্ষমতায় আসায় আমরা জমির পাট্টা পেয়েছি৷ আমরা কেন গোলমালে যাব৷ যারা ঝামেলা করছে , আমরা তাদের চিনিই না৷ ’এডিজি (আমর্ড ফোর্স) রণবীর কুমার এ দিন বলেন , ‘পুলিশের গুলিতে আশিস তামাংয়ের মৃত্যু হয়নি৷ আমাদের গুলির হিসাব ঠিক আছে৷ বহিরাগতেরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এসেছিল৷ আমাদের সন্দেহ , বহিরাগতদের গুলিতে আশিসের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে৷ ’

মোর্চা অবশ্য পুলিশের দাবি উড়িয়ে দিয়েছে৷ তবে তাণ্ডবে যে তাঁদের কর্মীরাই জড়িত , তা স্পষ্ট হয়েছে মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরির মন্তব্যে৷ মঙ্গলবার রোশন বলেন , ‘পুলিশ এ সব গল্প বানাচ্ছে৷ যারা পাহাড়ে পৃথক রাজ্য চান , তারাই আন্দোলন করছেন৷ সমর্থক মারা গেলে কর্মীদের মনে ক্ষোভ তৈরি হবেই৷ ’ মিরিক থেকে কার্শিয়াং কিংবা দার্জিলিং গড়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে৷ সেখান থেকে এসে হামলা চালানো কঠিন৷ বরং মিরিক থেকে মাত্র ১০ কিমি দূরে নেপালের পশুপতি এলাকা৷ সোমবারের গোলমালে আহত এক মোর্চাকর্মীকে চিকিত্সার জন্য নেপালে নিয়ে যাওয়ায় ফলে হামলাকারীরা নেপাল থেকেই আসছে কি না , সেই প্রশ্ন এখন মিরিকের বাসিন্দাদের মনে৷ যদিও তাঁরা মুখে কুলুপ এঁটেছেন৷ মিরিক শহর দিনেও অলিখিত কার্ফুর চেহারা নিয়েছে৷ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে নিহত আশিস তামাংয়ের দেহ আনতে যে মোর্চাকর্মীরা খোলা খুকরি নিয়ে আস্ফালন করে প্রকাশ্যে৷ পুলিশ-সিআরপিএফ , কেউ তাদের বাধা দেয়নি৷

সোমবার পুরপ্রধান লালবাহাদুর রাইয়ের ওয়ার্ডে মোর্চার হামলায় আহত হন ১০ পুলিশকর্মীও৷ তাঁদের দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক৷ কালিম্পংয়ের পোয়ু, পুলবাজারের কাইনজালিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত পুড়িয়ে দেওয়া হয়৷ রম্ভির কাছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগানো হয়৷

Viewing all 41318 articles
Browse latest View live