Quantcast
Channel: Eisamay
Viewing all 41318 articles
Browse latest View live

৪ জনের মৃত্যু, ফের আগুন জ্বলল পাহাড়ে

$
0
0

এই সময়, দার্জিলিং: বেশ কয়েক দিন ঝিমিয়ে থাকার পর আবার আগুন জ্বলল পাহাড়ে৷ মাত্র ১৮ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে অন্তত চার জনের৷ মোর্চা ও জিএনএলএফের দাবি , পুলিশের গুলিতেই এঁদের মৃত্যু হয়েছে৷

মৃতের সংখ্যা আরও বেশি বলে দাবি করেছেন মোর্চার সহকারী সম্পাদক বিনয় তামাং ও জিএনএলএফের সাধারণ সম্পাদক মহেন্দ্র ছেত্রী৷ সোনাদায় শুক্রবার রাত ১১টা নাগাদ তাসি ভুটিয়া নামে এক যুবকের মৃত্যুর পরই তেতে ওঠে পাহাড়৷ হামলা হয় সোনাদা ও দার্জিলিং থানা , হেরিটেজ রেল স্টেশন সোনাদা ও ঘুমে৷

আগুন লাগানো হয় বেশ কিছু ট্র্যাফিক পোস্ট , বন দপ্তরের অফিস, বাংলো ইত্যাদিতে৷ ভাঙচুর হয়েছে দার্জিলিংয়ের খাদ্য দপ্তরের অফিসে৷ দার্জিলিংয়ের চকবাজারে সমস্ত সিসিটিভি ভেঙে দেওয়া হয়৷ সন্ধ্যায় আগুন লাগানো হয় কালিম্পংয়ে লেপচা উন্নয়ন পর্ষদের দন্তরে৷ কার্শিয়াংয়ের এসডিও অফিসেও আগুন লাগে৷ শিলিগুড়ির খাপরাইল মোড়ে পাহাড়গামী খাবার বোঝাই গাড়ি আটকে দেন স্থানীয়রা৷

উত্তেজিত জনতাই শনিবার দিনভর এই তাণ্ডব চালিয়েছে৷ কোথাও মোর্চা, জিএনএলএফ বা অন্য কোনও নেতাকে দেখা যায়নি৷ কোনও দলের স্লোগানও শোনা যায়নি৷ পুলিশকর্তারা এই ঘটনার পর কোনও মন্তব্য করতেই চাননি৷ দার্জিলিংয়ে বিকেলের পর সংবাদ মাধ্যমকে একটি এলাকায় ঢুকিয়ে বের হতে নিষেধ করা হয়৷ ছবি তুলতেও বারণ করা হয়৷ সোনাদায় গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও বিস্তারিত বলতে চাননি পাহাড়ের বিশেষ দায়িত্বপ্রান্ত আইজি (আইনশৃঙ্খলা ) জাভেদ শামিম৷

তিনি শুধু বলেন, ‘কী হয়েছিল, খতিয়ে দেখতে হবে৷’ আর গুলি চালানোর অভিযোগ স্পষ্ট ভাবে অস্বীকার করেছেন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব৷ তিনি বলেন, ‘পুলিশের গুলিতে কারও মৃত্যু হয়েছে বলে আমার কাছে খবর নেই৷ আমি নিয়মিত পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি৷’ ঘটনাস্থল থেকে অবশ্য গুলির খোল উদ্ধার হয়েছে৷ কিন্ত্ত কার গুলিতে মৃত্যু হল, তা নিয়ে মন্তব্য করা হয়নি পুলিশের পক্ষ থেকে৷

গুলির কথা না-মানলেও দার্জিলিংয়ের চকবাজারে উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে লাঠি , কাঁদানে গ্যাস ও রবার বুলেট চালাতে দেখা যায়৷ মোর্চার সহকারী সম্পাদক বিনয় তামাং বলেন, ‘পুলিশ চার জনকে গুলি করে মেরেছে৷ সোনাদায় মৃত যুবকের নাম তাসি ভুটিয়া৷ শনিবার দার্জিলিংয়ে চকবাজারে মারা যান সুরজ সুনদাস৷ পরে সমীর সুব্বা ও আশা কুমার নামে আরও দু’জনের মৃত্যু হয় সিংমারিতে৷ খবর পাচ্ছি প্রেমা ভুটিয়া নামে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে৷’ এই ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে জিএনএলএফ৷ সরকারের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়েছেন বিনয় তামাং৷

ক্ষুব্ধ বিনয় প্রশ্ন তুলেছেন , ‘দেশের রাজনৈতিক দলগুলির কাছে জানতে চাইছি , আমরা কি সত্যিই ভারতে আছি ? বসিরহাটে একটি মাত্র ঘটনায় সর্বভারতীয় দলগুলি সক্রিয় হয়ে উঠেছে৷ আর পাহাড়ে এক মাস ধরে অশান্তি ও হত্যা চললেও কারও নজর এ দিকে নেই৷ ’ প্রতিবাদে বুধবার থেকে অনশনে বসছে মোর্চা৷ সোনাদা থানায় মহিলা ব্যারাকে আগুন লাগানো হলেও পুলিশ বাধা দেয়নি৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিকেলে সোনাদা ও দার্জিলিংয়ে সেনা নামানো হয়৷ মোর্চা পাহাড়ে খাবার পৌঁছতে দিচ্ছে না , মুখ্যমন্ত্রীর এই অভিযোগের নিন্দাও করেছেন বিনয়৷ তিনি বলেন , ‘আমাদের কাছে রাজ্য সরকারের দরজা বন্ধ৷ একমাত্র কেন্দ্রীয় সরকার গোর্খাল্যান্ড নিয়ে আলোচনা চাইলে তবেই আমরা যাব৷’

জিএনএলএফের সাধারণ সম্পাদক মহেন্দ্র ছেত্রী বলেন , ‘তাসি কোনও অন্যায় করলে পুলিশ তাঁকে গ্রেন্তার করতে পারত৷ কিন্ত্ত একবারে গুলি করে মেরে দিল৷ বসিরহাটে তো পুলিশ গুলি চালায়নি৷ তা হলে পাহাড়ের জন্য রাজ্য সরকারের নীতি আলাদা বলে মনে হচ্ছে৷ ’ তাসির পরিবারের দাবি , রাতে অসুস্থ হয়ে পড়ায় ওষুধ কিনতে তিনি সোনাদা থানার কাছে গিয়েছিলেন৷ তখনই পুলিশ তাঁকে লক্ষ করে গুলি চালায়৷ পুলিশ সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে , শুক্রবার রাতে সেই সময় তাসি-সহ ৪-৫ জন যুবক সোনাদা থানার কাছে গাড়ি ভাঙচুরে যুক্ত ছিল৷ বাধা দিতে গেলে ওই যুবকদের হামলায় জখম হন দীপক মণ্ডল নামে এক পুলিশকর্মী৷ এর পর আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালায়৷ জখম পুলিশকর্মীকে শিলিগুড়ি পাঠানো হয়৷

রাতে তাসির দেহ বাড়িতে নিয়ে গেলেও শনিবার সোনাদা বাজারে আনার পর উত্তেজনা ছড়ায়৷ জনতা প্রথমে সোনাদায় ট্র্যাফিক পুলিশের একটি পোস্টে আগুন লাগায়৷ তার পরে আগুন লাগানো হয় সোনাদা রেল স্টেশনে৷ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ এগোতেই ক্ষিন্ত হয় জনতা৷ এরপর নতুন করে অশান্তির সূত্রপাত হয়৷


বাদুড়িয়া-তদন্তে বিচারবিভাগীয় কমিশন মমতার

$
0
0

এই সময়: উত্তর ২৪ পরগনায় সাম্প্রদায়িক অশান্তির ঘটনা নিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্তের আদেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি সৌমিত্র পালকে বিচারবিভাগীয় তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে তিনি জানান৷ শনিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘কীভাবে বাংলাদেশে সীমান্ত খুলল , কীভাবে বাইরে থেকে লোক ঢুকল , কারা কুমিল্লার একটি ভিডিয়ো ক্লিপিং বা ভোজপুরি সিনেমার একটি দৃশ্য পশ্চিমবঙ্গের ঘটনা বলে চালাল , তা খতিয়ে দেখতেই জুডিশিয়াল কমিশন গঠন করা দরকার৷ ’

বিচারবিভাগীয় তদন্তটির ক্ষেত্র যে যথেষ্টই বিস্তৃত হতে চলেছে , সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তাঁর সংযোজন, ‘সীমান্ত তো কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে৷ দু-তিনটি সর্বভারতীয় চ্যানেলের ভূমিকাও ছিল বিতর্কিত৷ দেখা দরকার কী ভাবে স্টিং অপারেশন চালানো হয়েছিল৷ রাজ্যের সংবাদমাধ্যম সংযম দেখানোয় তাদের ধন্যবাদ দিচ্ছি৷ ’ তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল , বিজেপি রাজ্য দপ্তরে দলীয় নেতারা অশান্তির ঘটনা নিয়ে যে -সব ভিডিয়ো ক্লিপিং দেখিয়েছেন, সেই ব্যাপারে সরকার কোনও ব্যবস্থা নেবে কি না৷ তিনি বলেন , ‘কেউ অপরাধ করলে , আইন আইনের পথেই চলবে৷ যারাই করে থাকুক, খুব কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ ’

এর প্রতিক্রিয়ায় রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন , ‘ছেঁদো কথা৷ উনি (মুখ্যমন্ত্রী ) যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না , তখন অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপান৷ ওঁর হাতে পুলিশ-প্রশাসন-গোয়েন্দা দপ্তরে আছে৷ কেন দোষীদের খুঁজে গ্রেপ্তার করছেন না৷ বসিরহাট নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থে মামলা দায়ের হয়েছে৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে উনি বিচারবিভাগীয় তদন্তের আদেশ দিয়েছেন৷ ’

অন্য দিকে মমতার অভিযোগ, ‘বিজেপি’র লোকেরা এসবের পরিকল্পনা করেছে৷ টিএমসি-র দপ্তর আরএসএস পুড়িয়ে দিয়েছে৷ আমাদের এমপি , এমএলএ বসিরহাটে যাননি৷ আমরা হিন্দু সংহতি ও এমআইএমের মতো দুটি সংগঠনকে কালো তালিকাভুক্ত করেছি৷ বিজেপি ’র একটি মুসলিম সংগঠনকে নানা গণ্ডগোলের কাজে লাগানো হয়৷ বিহারেও তাই হয়েছে৷ কেউ প্রতিবাদ করলেই সিবিআই বা ইডি লেলিয়ে দিচ্ছে৷ লালু, কেজরিওয়াল এবং কংগ্রেসের কোনও কোনও মুখ্যমন্ত্রীকে এ ভাবে হেনস্থা করা হয়েছে৷ ’

মমতা জাতীয় স্তরেও বিজেপি বিরোধিতার সুর চড়া করেছেন৷ তিনি জানান , উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন ঘিরে বিরোধী দলগুলির বৈঠকে যোগ দিতে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা যোগ দেবেন৷ তিনি বলেছেন, ‘সনিয়া গান্ধী যা সিদ্ধান্ত নেবেন তা আমরা সমর্থন করব৷ আমার দলের সাংসদ বা বিধায়কেরা কেউ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থীকে ভোট দেবেন না৷ নানা ভাবে চমকানো সত্ত্বেও৷ এসব করে তৃণমূলকে ভাঙা যাবে না৷ নোটবন্দি ও জিএসটি বড় মাপের দুর্নীতি৷ বিজেপি সরকারে না থাকলে সব বেরোবে৷ বিজেপি ২০১৯ -এ বিদায় নিচ্ছে৷’

পাহাড় ও উত্তর ২৪ পরগণার পরিস্থতির প্রেক্ষিতে এ দিন এক ঝাঁক আইপিএস অফিসারকে বদলির আদেশ দিয়েছে নবান্ন৷ পাশাপাশি , কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বিবৃতি দিয়েছে , চার কোম্পানি বিএসএফ বসিরহাটে পাঠানো হয়েছিল৷ দুদিন আগে রাজ্য সরকার অতিরিক্ত চার কোম্পানি ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী বলছেন , কেন্দ্র বাহিনী পাঠাচ্ছে না৷

সংঘর্ষের বিহিত চাইছে শান্তিকামী বসিরহাট

$
0
0

কমলেশ চৌধুরী ■ বসিরহাট
বছর সাত বয়স৷ বাবার হাত ধরে মেলায় গিয়েছিল৷ বসেছিল বাবারই আইসক্রিমের দোকানের পাশে৷ হঠাত্ হুড়োহুড়ি৷ উল্টে যায় পাশের দোকানের পাঁপড় ভাজার তেলের কড়াই৷ গরম তেল ছিটকে আসে ছোট্ট পায়ে৷ ছেলে অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে৷ দোকান ফেলে ছেলে কোলে বাড়ি ছোটেন বাবা৷ আশপাশে তখন ভাঙচুর চলছে সমানে৷ ঘটনা সোমবার সন্ধের৷

শনিবার বসিরহাটের দালালপাড়ার বাড়িতে বসে আইসক্রিম বিক্রেতা অনর্গল , ‘হাউহাউ করে কাঁদছিল ছেলে৷ বাড়িতে এসে দুটো ফ্যান চালিয়ে দিই৷ তাতেও কিছু হয়নি৷ মেডিসিন সেন্টারে যাওয়ার পর ওষুধ পড়তে কষ্টটা একটু কমেছে৷ কিন্ত্ত খুব ভয় পেয়ে গেছে !’ তাঁর প্রশ্ন, ‘এমন একটা ঘটনা ঘটে গেল ! প্রশাসন , মিডিয়া কেউ আসেনি৷ কেন বলতে পারেন ?’প্রশ্ন তুলছেন ময়লাখোলার এক বাসিন্দাও৷

তাঁর বাড়ির দোতলার টানা জানালার বেশিরভাগ কাচই ভাঙা৷ রাস্তা দিয়ে দুষ্কৃতীদের মিছিল ভাঙতে ভাঙতে এগিয়েছিল মঙ্গলবার বিকেলে৷ সেই থেকে পরিবারের নিত্যসঙ্গী আতঙ্ক৷ বললেন , ‘বোমা পড়ছে , ইট পড়ছে , বাড়ি -দোকান ভাঙা হচ্ছে , ভয়ে থানায় ১৫-১৬ বার ফোন করেছি৷ পুলিশ আসবে বলেও আসেনি৷ শেষে এসডিপিও -র নম্বর দিয়েছিল৷ তাঁকেও বার পঁচিশ চেষ্টা করেছি৷ ফোন ধরেননি৷ এই ভাবে বৌ-বাচ্চা নিয়ে বাড়িতে থাকা যায় ?’ওই বাসিন্দার বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন শোনপুকুরের তিন প্রৌঢ়া৷ শিউড়ে উঠছিলেন ভাঙচুরের চিহ্ন দেখে৷

একজন বললেন , ‘রাত বোমা পড়ছে৷ পুরুষরা রাত জাগছে৷ আমরাও ঘুমোতে পারছি না৷ ’ তাঁদের আক্ষেপ , ‘বসিরহাটে কোনওদিন কোনও ঝঞ্ধাট ছিল না৷ জায়গাটার নাম খারাপ হয়ে গেল !’কলেজপাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়েছিলেন একদল যুবক৷ তাঁদের কথাতেও এক সুর৷ বসিরহাটের গায়ে দাগ লেগে গেল ! কিন্ত্ত কেন লাগল ? গরম গরম কথায় এই প্রশ্নই তুলছেন যুবকেরা৷ তাঁদের কাঠগড়ায় প্রশাসন , স্থানীয় বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাস এবং বসিরহাট কলেজের এক কর্মী৷

একজন বলে গেলেন , ‘বাদুড়িয়ার একটি ছেলে ফেসবুকে পোস্ট দিল৷ তার জন্য বসিরহাটে কেন গণ্ডগোল হবে ? সোমবার হল৷ মঙ্গলবার হল৷ এর পিছনে বসিরহাট কলেজের এক কর্মী আর তার দলবল রয়েছে৷ পুলিশ সব জানে , কিন্ত্ত কোনও ব্যবস্থা নেয়নি৷ বাদুড়িয়ার ছেলেটিকে গ্রেন্তার করা অবশ্যই সঠিক পদক্ষেপ৷ কিন্ত্ত যারা সংঘর্ষকে বসিরহাট পর্যন্ত টেনে আনল , তাদের গ্রেন্তার করা হবে না কেন ? জানেন , কী পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা !’এ কথা ঠিক , গত ক ’দিনে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে৷ কিন্ত্ত এখনও অনেকটা পথ পেরোনো বাকি৷ সোমবার থেকে ইন্টারনেট বন্ধ৷ ব্যাঙ্ক বন্ধ , বেশিরভাগ এটিএমও অকেজো৷ আচমকা জীবনে নোটবাতিলের পরবর্তী পরিস্থিতি৷ লোকের হাতে নগদ কমছে৷ সব দোকানপাট এখনও খোলেনি৷ ভাঁড়ারে টান পড়তেই জিনিসপত্রের চড়া দাম৷ দিন আনি দিন খাই শ্রেণির মানুষ পড়েছেন সবচেয়ে বিপদে৷ হঠাত্ উধাও কাজকর্ম৷

এর চেয়েও বড় ধাক্কা লেগেছে মানসিক শান্তিতে৷ পারস্পরিক বিশ্বাসে৷ চেনা মানুষকে বিশ্বাস করতেও সময় লাগছে৷ বহিরাগতকে দেখতে হচ্ছে ট্যারা চোখে৷ বিপাক বাড়াচ্ছে নানা গুজব৷ তাই দিনভর শান্তি বিরাজ করলেও সন্ধের পর টুকটাক ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে৷ শুক্রবার বিকেলে কলেজপাড়া লাগোয়া সর্দারহাটিতে যেমন গণপিটুনির হাত থেকে কোনওক্রমে বাঁচেন দুই বহিরাগত যুবক৷ র্যাফের গাড়িতে ঢিল পড়ে৷ তারাও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে৷ এমনই আতঙ্ক , দল বেঁধে রাত জাগছে লাগোয়া খোলাপোতাও৷

ঘটনা হল , বসিরহাট দূরের কম্পনে কেঁপে উঠেছে মাত্র৷ ভূমিকম্পের এপিসেন্টার বাদুড়িয়া এখন একেবারে শান্ত৷ দোকানপাট খোলা৷ রাস্তায় প্রচুর লোকজন৷ রোগীর উপচে পড়া ভিড় গ্রামীণ হাসপাতালের বহির্বিভাগে৷ রুদ্রপুরে ধৃত ছাত্র সৌভিক সরকারের বাড়ির পাশে আনোয়ার আলি মণ্ডলের কাঠের কলে কাজ চলছে দিনভর৷ পাশের বাড়িতে গোল হয়ে বসা ছাত্রছাত্রীদের তড়িত্কোষ বোঝাতে শোনা গেল দিদিমণিকে৷ পুলিশ , আধাসেনারও বালাই নেই তেমন৷ সোমবার থেকে স্কুল , ব্যাঙ্ক খুললে পুরোটাই স্বাভাবিক হয়ে যাবে৷ যা চাইছে বসিরহাটও৷ একরাশ আতঙ্ক বুকে নিয়ে৷ সংঘর্ষের বিহিত চেয়ে৷

গোয়ালতোড়ে খুন ২ সিভিক ভলান্টিয়ার

$
0
0

এই সময়, গোয়ালতোড় : নৃশংস ভাবে খুন হলেন দুই সিভিক ভলান্টিয়ার৷ ভারী কিছু দিয়ে তাঁদের সারা শরীর ও মাথা থেঁতলে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা৷ পশ্চিম মেদিনীপুরে গোয়ালতোড় থানার পিংবনি -রামগড় সড়কে কাদাশোলের কাছে একটি সেতুর তলায় দু’জনের দেহ উদ্ধার হয় শনিবার সকালে৷ সেতুর উপর রক্তের দাগ দেখে পুলিশ নিশ্চিত যে সেখানেই মেরে তলায় ফেলে দেওয়া হয়েছে দেহ দু’টি৷

সেতুর দু’দিকে পৃথক দু’টি জায়গায় দেহ দু’টি পাওয়া গিয়েছে৷ একটি দেহের মাথার উপর পাথর চাপা দেওয়া ছিল৷ মৃত সিভিক ভলান্টিয়ার দু’জনকেই দলীয় কর্মী বলে দাবি করছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা৷ এলাকার তৃণমূল নেতা দুলাল মণ্ডল বলেন , ‘বিজেপি পরিকল্পনা করে ওই দুই সিভিক ভলান্টিয়ারকে খুন করেছে৷ ’যদিও পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ সেই সম্ভাবনা খারিজ করে দেন৷ যে এলাকায় দেহ দু’টি পড়েছিল , সেখানে একসময় মাওবাদী উপদ্রব থাকায় মাওবাদী হামলা বলেও জল্পনা শুরু হয়েছিল৷ কিন্ত্ত তাতেও জল ঢেলেছেন পুলিশ সুপার৷

তিনি বলেন , ‘এটুকু বলতে পারি , এই খুনের সঙ্গে মাওবাদীদের কোনও যোগাযোগ নেই৷ ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে খুন করা হয়েছে ওঁদের৷ প্রাথমিক ভাবে এটাই আমাদের মনে হচ্ছে৷ ’ কর্তব্যরত অবস্থাতেই সিভিক ভলান্টিয়ার দু’জন অমিত মাহাতো (৩০) ও সৌরভ মাহাতো (২৭) খুন হয়েছেন৷ পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন , ‘কেউ অমিতের মোবাইলে ফোন করে ওঁকে ডেকেছিল৷ অমিত তখন সৌরভকে সঙ্গে নিয়ে যায়৷ অমিতকেই হয়তো খুন করার পরিকল্পনা ছিল৷ কিন্ত্ত সৌরভ দেখে ফেলায় প্রমাণ লোপ করতে ওঁকেও মেরা ফেলা হয়েছে৷ ’শুক্রবার রাতে আরও ৬ জন সিভিক ভলান্টিয়ারের সঙ্গে পিংবনি বাজারে ডিউটি ছিল অমিত ও সৌরভের৷ তাঁরা দু’জন গোটা রাতে আর না -ফিরলেও অন্য সিভিক ভলান্টিয়াররা আর খোঁজ না -করায় প্রশ্ন উঠেছে৷

যদিও পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে , অন্য সিভিক ভলান্টিয়াররা ভেবেছিলেন যে অমিত ও সৌরভ বাড়ি চলে গিয়েছেন৷ এই সাফাই নিয়ে প্রশ্ন অবশ্য থেকেই গিয়েছে৷ এ দিন সান্ত্বনা জানাতে গিয়ে এক সিভিক ভলান্টিয়ারের ক্ষোভের মুখে পড়েন এলাকায় শাসকদলের বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো৷ মৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সৌরভ মাহাতোর বোন দীপান্বিতা তাঁকে বলেন , ‘জঙ্গলমহলে এত পুলিশ -আধা সামরিক বাহিনী রেখে কী লাভ ? আপনারা তো দাবি করেন , জঙ্গলমহল শান্ত৷ তাহলে আমার দাদা ও অমিতদা খুন হলেন কীভাবে ?’ ক্ষোভের মুখে নিরুত্তর দেখা গিয়েছে বিধায়ককে৷

দু’টি পরিবারের পক্ষ থেকেই প্রশ্ন করা হয়েছে , জঙ্গলমহলে কেনও বিনা অস্ত্রে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ডিউটি করানো হবে ? পিংবনি বাজারে যেখানে অমিতরা ডিউটি করছিলেন , সেখান থেকে এক কিমি দূরে তাঁদের দেহ পড়েছিল৷ প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ মনে করছে , এই খুন বেশ কয়েক জন দুষ্কৃতীর কাজ৷ পুলিশ এলাকার কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে৷ দু’জনকে আটক করেছে পুলিশ৷ জেলার পুলিশ সুপার ব্যক্তিগত আক্রোশে খুনের কথা বললেও নানা জল্পনা আছে এলাকায়৷ স্থানীয় বাসিন্দা সুরজিত্ মাহাতো বলেন , ‘দেখে মনে হচ্ছে , এটা পেশাদার খুনিদের কাজ৷ ’ তৃণমূল এই খুনের জন্য বিজেপিকে দায়ী করলেও মৃতদের পরিবার এমন অভিযোগ করেনি৷ ঘটনাস্থলের কাছে একটি মোটরবাইক পাওয়া যায়৷ ওই বাইকেই সৌরভকে সঙ্গে নিয়ে অমিত পিংবনি থেকে গিয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে৷

ওই বাইক ও সেতুর উপর রক্ত দেখে শনিবার সকালে প্রথম স্থানীয় বাসিন্দাদের সন্দেহ হয়৷ তাঁরা উঁকিঝুঁকি করায় সেতুর তলায় দেহ দু’টির হদিস মেলে৷ ঘটনাস্থলে পড়েছিল কিছু মদের বোতল , ৬টি প্ল্যাস্টিকের গ্লাস , চিপসের প্যাকেট ও একটি মোবাইল ফোন৷ ওই ফোনেই অমিতকে কেউ ডেকেছিল বলে মনে করা হচ্ছে৷ পুলিশ মোবাইলটি বাজেয়ান্ত করলেও কোন নম্বর থেকে ফোন এসেছিল , তদন্তের স্বার্থে জানায়নি৷ খুব শিগগির দোষীদের গ্রেন্তার করা হবে বলে পুলিশ সুপার আশ্বাস দিলেও দুই সিভিক ভলান্টিয়ার খুনে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে৷

তাণ্ডবে দায়ী বেলাগাম যুবারা

$
0
0

চিত্রদীপ চক্রবর্তী ও সঞ্জয় চক্রবর্তী ■ দার্জিলিং
হতাশা থেকে জমা হওয়া ক্ষোভ , আর সেই ক্ষোভটাই বদলে যাচ্ছে নাশকতায়৷
পাহাড়ে গত কয়েক দিন ধরে যে দাবিকে গণ আন্দোলনের মোড়ক দিচ্ছিলেন মোর্চার নেতারা , আপাতত তাঁদের হাত থেকে নিয়ন্ত্রণ বেরিয়ে যাওয়ায় ধ্বংসাত্মক আন্দোলনের ঠেলায় তাঁরাও বেশ খানিকটা চাপে৷ কারণ , নেতাদের কথা আর শুনতে চাইছেন না দলের নিচুস্তরের কর্মীরা৷ গত দু’টি সর্বদলীয় বৈঠকে দেখা গিয়েছে , নেতারা বন্ধ তোলার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু করলেই রে -রে করে তেড়ে আসছে উত্তেজিত জনতা৷ শনিবার সোনাদা ও দার্জিলিংয়ের ঘটনায় আরও স্পষ্ট হয়েছে , পাহাড়ের আন্দোলনে নেতাদের আর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই৷ গণতান্ত্রিক পথেই তাঁরা আন্দোলন করবেন বলে বিমল গুরুং , হরকা বাহাদুর ছেত্রী থেকে জিএনএলএফের মহেন্দ্র ছেত্রীরা যতই দাবি করুন , আন্দোলনের গতি ঠিক করছে জনতাই৷ পাহাড়ে কাজ করা পুলিশকর্তাদের বক্তব্য , এই সব ঝামেলার কোনওটাই মোর্চার শীর্ষ নেতৃত্ব জানেন না , তা বিশ্বাস করা শক্ত৷ গত একমাস ধরে দেখা গিয়েছে , পুলিশকে আক্রমণের পথে বেশি হাঁটছে যুব মোর্চার সদস্যরাই৷ যাদের নেতৃত্বে রয়েছেন দলে বিমল গুরুংয়ের ডানহাত হিসেবে চিহ্নিত প্রকাশ গুরুং৷ যিনি আবার বরাবরই এই ধরনের জঙ্গি আন্দোলনের পক্ষে৷ পুলিশকর্তাদের ব্যাখ্যা , এমনিতেই এখন পাহাড়ের যুবকদের কোনও কাজ নেই৷ তার উপর দাবি আদায়ের আন্দোলনে রাজ্য বা কেন্দ্র সাড়া না -দেওয়ায় স্থানীয় যুবকরা অধৈর্য হয়ে পড়ছিল৷ তারাই এখন ভাঙচুরে নেমে পড়েছে৷ এদের অনেকেরই হাতে এখন দেখা যাচ্ছে গুলতি এবং পিঠে ব্যাগ ভর্তি পাথর৷

শনিবারও ট্র্যাফিক পুলিশের আউটপোস্ট থেকে সোনাদা রেল স্টেশনে হামলা পরিচালনা করে স্থানীয় যুবকেরা৷ দার্জিলিংয়েও মোর্চার মিছিলের পরে নেতারা সরে যেতেই উত্তেজিত জনতা নেমে পড়ে থানার উপর হামলায়৷ সেখান থেকে আগুন ছড়ায় কাকঝোরা থেকে কালিম্পংয়ের প্রত্যন্ত এলাকায়৷ জিএনএলএফের সাধারণ সম্পাদক মহেন্দ্র ছেত্রীও স্বীকার করেছেন , ‘আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণ এখন আর নেতাদের হাতে পুরোপুরি নেই৷ জনতাই ঠিক করছে তারা কী করবে৷ তবে শনিবারের ঘটনার জন্য দায়ী প্রশাসন৷ তাসি ভুটিয়ার মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ হয়েই জনতা এমন আচরণ করেছে৷ প্রশাসন নিজেদের সংযত না -করলে পাল্টা হামলা হবেই৷ ’ গত ৮ জুন দার্জিলিংয়ের রাজভবনে ক্যাবিনেট বৈঠক চলাকালীন পাহাড়ে গোলমালের সূত্রপাত৷ ১৫ জুন বিমল গুরুংয়ের বাড়িতে পুলিশি তল্লাশির পরে জনতা -পুলিশ সংঘর্ষের সময়েও ধারে কাছে কোনও মোর্চা নেতাকে দেখতে পাওয়া যায়নি৷ ১৭ জুন সিংমারিতে গোলমালের সময়েও দেখা গিয়েছে একই কাণ্ড৷ তার পরে ধীরে ধীরে পাহাড়ের পরিস্থিতি শান্ত হচ্ছিল৷ শুক্রবার তাসি ভুটিয়ার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত দিনভর পাহাড়ে কোনও গোলমাল হয়নি৷ শনিবার ফের গণতান্ত্রিক পথে আন্দোলনের সংকল্প টলে যায়৷ জিএনএলএফ নেতা মহেন্দ্র ছেত্রী দাবি করেছেন , ‘তাসি অন্যায় করে থাকলে পুলিশ তাকে কেন গ্রেন্তার করল না ? গুলি করবে ? তার পরে আমরা জনতাকে সংযত হতে বললে তারা কথা শুনবে ?’ পাহাড়ের আন্দোলনে এখন পৃথক রাজ্যের দাবিদারদের কতটা নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তা নিয়ে সন্দিহান রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবও৷ তিনি বলেন , ‘গোলমালের সময়ে নেতাদের দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না৷ তা হলে নেতাদের নিয়ন্ত্রণে আন্দোলন হচ্ছে , এটা বলব কী করে ? যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক৷ তবে শুক্রবার কিংবা শনিবার পুলিশের গুলিতে কেউই মারা যায়নি৷ ’ শিলিগুড়ির বিধায়ক তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য পাহাড়ের এই পরিস্থিতির জন্য প্রথম থেকেই রাজ্য সরকারকেই দায়ী করছেন৷ পাহাড়ের আন্দোলনে এখন মোর্চা নেতাদের নিয়ন্ত্রণ না -থাকাটাকেও তিনি স্বাভাবিক পরিণতি বলেই মনে করছেন৷ অশোক বলেন , ‘পাহাড়ের আন্দোলন এতটা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ার জন্যও মুখ্যমন্ত্রীই দায়ী৷ উনি প্রথমেই যদি আলোচনার পরিবেশ তৈরি করতেন , তা হলে এমন হত না৷ তবে এখনও সময় আছে৷ ’

আজও জ্বলছে পাহাড়, গুরুংদের কুশপুতুল পুড়িয়ে প্রতিবাদ স্থানীয়দের

$
0
0

এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: শনিবার দিনভর অগ্নিগর্ভ থাকার পর সেই রেশ অব্যাহত রবিবারও। এখনও জ্বলছে পাহাড়। রবিবার দার্জিলিং-এ ফের কয়েকটি বিক্ষিপ্ত হিংসা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। গোর্খাল্যান্ড ইস্যুতে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের দাবিতে আন্দোলনকে আরও জোরদার করার কর্মসুচি নিয়েছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। মোর্চার এই জঙ্গি আন্দোলনের প্রতিবাদে এদিন মাটিগাড়ায় মিছিল করেন স্থানীয়রা। এদিকে, পাহাড়ের পরিস্থিতি নিয়ে এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বিস্তারিত জানান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং।

আরও পড়ুন...​ ৪ জনের মৃত্যু, ফের আগুন জ্বলল পাহাড়ে

প্রধানমন্ত্রীকে রিপোর্ট দেওয়ার পাশাপাশি রবিবার সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন কুমার চামলিং-কেও ফোন করে সিকিমের নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে খোঁজ খবর নেন তিনি। দার্জিলিং-এর আন্দোলনের জেরে সিকিমে ওষুধ, বেবি মিল্ক পাউডার, সবজি, পেট্রল-ডিজেলের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ভাঁড়ারে টান পড়েছে বলে রাজনাথকে জানান চামলিং।

এদিকে, রবিবার নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায় কার্শিয়াং-এ। মোর্চা সমর্থকরা SDO অফিসে আগুন ধরিয়ে দেওয়ায় অফিসের বেশ কিছুটা অংশ একেবারে পুড়ে গিয়েছে। শনিবারের পর এদিন ফের আগুন ধরানো হয় সোনাদা থানায়। দুপুরে ডুয়ার্সের বিভিন্ন থানায় অবস্থান কর্মসুচিও পালন করে মোর্চা। দার্জিলিং সমস্যা সমাধানে অবিলম্বে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ ও পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আগামী বুধবার থেকে থানা ও বিডিও অফিসের সামনে রিলে অনশন শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মোর্চা সমর্থকরা।

একদিকে গোর্খাল্যান্ড নিয়ে যখন নাছোড় মোর্চা, ঠিক তখনই বাংলা ভাগের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে মাটিগাড়ায় মিছিল করলেন স্থানীয় একদল মানুষ। মোর্চার আন্দোলনকে ধিক্কার জানিয়ে এদিন বিমল গুরুং ও রোশন গিরির কুশপুতুলও দাহ করেন তাঁরা।

বেশকিছুদিন মোর্চার আন্দোলন বেশ ঝিমিয়ে পড়ার পর শনিবার ফের তা তীব্র আকার ধারণ করে। মাত্র ১৮ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হয় ৪ জনের। এঁদের মধ্যে তিনজন মোর্চার ও একজন GNLF সদস্য। দুই দলেরই দাবি, পুলিশের গুলিতেই মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। শুক্রবার রাতে তাসি ভুটিয়া নামে এক যুবকের মৃত্যুর পর থেকেই ফের আগুন জ্বলে ওঠে পাহাড়ে। হামলা হয় সোনাদা ও দার্জিলিং থানা, হেরিটেজ রেল স্টেশন সোনাদা ও ঘুমে। মুখ্যমন্ত্রী শান্তি ফিরিয়ে আলোচনায় বসার আবেদন জানালেও তা উড়িয়ে দিয়েছে বিমল গুরুং-এর দল।

খবরটি ইংরাজিতে পড়তে Click করুন

#Sporadic incidents of violence and arson were reported from West Bengal's Darjeeling on Sunday after a fresh flare-up in the region following a pro-Gorkhaland activist's death allegedly in police firing.

#Union Home Minister Rajnath Singh briefs PM Modi over Darjeeling situation.

কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ বাড়াতে সংবিধান ঘাঁটছে বিজেপি

$
0
0

এই সময় : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে বিজেপি৷ দলের সর্বভারতীয় নেতৃত্ব এই ব্যাপারে দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহাদের আন্দোলনের রূপরেখা তৈরির নির্দেশ দিয়েছে৷

বসিরহাটের ঘটনাবলি নিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবিতে সরব হয়েছে বিজেপি৷ এ নিয়ে কয়েক দফা রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছে দরবারও করেছে তারা৷ সূত্রের খবর , রাজ্যের পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সংবিধানের কোন কোন অনুচ্ছেদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে প্রযোজ্য হতে পারে, তা নিয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতামত নিতে শুরু করেছে রাজ্য বিজেপি৷ নেতৃত্বের নির্দেশে তত্পর হয়ে উঠেছে দলের আইনি সেল৷

৬ নম্বর মুরলীধর সেন লেনের নেতারা অবশ্য একান্তে মানছেন, দার্জিলিং কিংবা বসিরহাট কোনও এলাকার ঘটনাতেই রাজ্যে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই৷ কিন্ত্ত কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের দাবি তুলে আন্দোলনে নতুন করে প্রাণ সঞ্চার করতে চাইছেন তাঁরা৷ এই ব্যাপারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই তাঁদের পথ-প্রদর্শক, একান্তে এমন কথাও বলছেন বিজেপি নেতারা৷ ৩৫৬ ধারায় রাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যপালের শাসন জারি ছাড়াও , কোনও জেলা , মহকুমা এমনকী থানা এলাকায় আইন -শৃঙ্খলা রক্ষায় কেন্দ্রের নাক গলানোর সুযোগ রয়েছে সংবিধানে৷
বাম জমানায় কেশপুর , গড়বেতায় সিপিএম -তৃণমূল ধারবাহিক সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে এমনই দাবি তুলেছিল তত্কালীন বিরোধীরা৷ বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন রাজ্যের বাম সরকারের পতনের দাবিতে বারে বারেই কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ চেয়ে সরব হতেন মমতা৷ কিন্ত্ত অতীতে কংগ্রেস কিংবা বিজেপি কোনও কেন্দ্রীয় সরকারই সেই দাবি মানেনি৷ তাতে অবশ্য তৃণমূলনেত্রীর লাভ কিছু কম হয়নি৷ সিপিএম বিরোধী আন্দোলন নয়া মাত্রা পেয়েছিল৷
অমিত শাহ ও কৈলাস বিজয়বর্গীয়রা মনে করছেন , ২০১৯-এর লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে রাজ্য সরকারকে বরখাস্ত করার দাবিতে লাগাতার আন্দোলন করা উচিত৷ বিজেপি সূত্রের খবর , ২০১৯ -এ লোকসভা ভোটের সঙ্গে রাজ্য বিধানসভা ভোট করার দাবিতে সরব হবে দল৷ একই সঙ্গে দুই ভোট করার জন্য মমতাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া হবে৷ ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবিতে কলকাতার রাজপথে মিছিল করে ফেলেছে বিজেপি৷ রবিবার দিলীপ ঘোষ বলেন , ‘রাজ্যের আইন -শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে৷ পাহাড় থেকে সমতল সব জায়গাতেই এক ছবি৷ এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি শাসন ছাড়া উপায় নেই৷ ’

এই ব্যাপারে রাজ্যপাল ত্রিপাঠী আগামী দিনে কী ভূমিকা নেন , তা নিয়ে সব মহলেই কৌতূহল তৈরি হয়েছে৷ রাজ্যের ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে ওঠে রাজ্যপালের পাঠানো রিপোর্ট৷ কেশরীনাথ নিজে দুঁদে আইনজীবী ছিলেন৷ রাজ্যের চলতি পরিস্থিতিতে সংবিধানকে কতটা কাজে লাগানো যেতে পারে , সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনিও একজন উপযুক্ত ব্যক্তি৷ লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন , ‘এ ব্যাপারে রাজ্যপালের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ অতীতে পশ্চিমবঙ্গেই রাজ্যপালদের সাংবিধানিক ক্ষমতা অপব্যবহারের নজির রয়েছে৷ ’বিজেপির রাষ্ট্রপতি শাসন নিয়ে গলা চড়ানোর পিছনে আরও একটি কারণ হল , অপর বিরোধী দল সিপিএমের ভূমিকা৷ বরাবর রাষ্ট্রপতি শাসনের বিরুদ্ধাচরণ করে আসেরা বামেরা রাজ্যের চলতি পরিস্থিতিতেও তাদের অবস্থান বদলায়নি৷

বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু প্রকাশ্যেই বলেছেন , ‘আমরা মনে করি না রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে৷ ’ দিলীপ ঘোষরা মনে করছেন , বামেদের এই অবস্থানে তৃণমূল বিরোধী ভোট বিজেপির পক্ষে এককাট্টা করতে সুবিধা হবে৷ বিমানের মন্তব্য উদ্ধৃত করে সোমনাথবাবু বলেন , ‘আমি মনে করি চলতি পরিস্থিতিতে সকলেরই আত্মসমীক্ষার প্রয়োজন আছে৷ ’ তাঁর কথায় , ‘এমন খবরও পাচ্ছি সংখ্যালঘুদের একাংশ বিজেপির দিকে পা বাড়াচ্ছে৷ এটা কেন হচ্ছে ভেবে দেখতে হবে সবাইকে৷ ’

অশান্ত বাংলা নিয়ে মোদী-রাজনাথ কথা

$
0
0

এই সময়, নয়াদিল্লি: ইজরায়েল এবং জার্মানি সফর সেরে রবিবার কাকভোরে দেশে ফিরেই পশ্চিমবঙ্গের সমস্যা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক সেরে ফেললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ ওই বৈঠকেই দার্জিলিং এবং বসিরহাটের পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বিস্তারিত রিপোর্ট দেন রাজনাথ৷
এ দিন সকালে দিল্লিতে লোককল্যাণ মার্গে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকে রাজ্যের বর্তমান উত্তন্ত পরিস্থিতির বিবরণ পেশ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ এর পরেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিংয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন রাজনাথ সিং৷ চামলিংয়ের আবেদন অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ এবং সিকিমের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক সচল রাখতে সব রকমের পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাসও দেন রাজনাথ৷
এর পরেই রাজনাথ কথা বলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব মহর্ষির সঙ্গে৷ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে নিরন্তর সমন্বয়ের জন্য তাঁকে নির্দেশও দেন রাজনাথ৷ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করার জন্য কেন্দ্রের তরফে সব রকমের সাহায্য প্রদানের কথা রাজ্য সরকারের আধিকারিকদের জানিয়ে দেওয়ার জন্য রাজীব মহর্ষিকে আরও একবার নির্দেশ দেন তিনি৷ এর পরেই টুইটে রাজনাথ লেখেন , ‘পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক স্তরে সমন্বয়ের জন্য আমি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবকে বলেছি৷ রাজ্যের নিরাপত্তা , সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে সুষ্ঠু পরিবহণ ব্যবস্থা ফের চালু করার জন্য তাঁকে সচেষ্ট হতে বলেছি৷ ’


দেহ নিয়ে পরিক্রমা পাহাড়ে।

সূত্রের খবর , মোদীর সঙ্গে বৈঠকে রাজনাছ জানান , বাদুড়িয়া -বসিরহাটের পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও , দার্জিলিং এখনও উত্তপ্ত৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পাঠানো আট কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনীর মধ্যে চার কোম্পানি বাহিনী যে রাজ্য ফেরত পাঠিয়েছে , সে কথাও মোদীকে জানান তিনি৷ কয়েক দিন আগেই চামলিং অভিযোগ করেন গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সিকিম , রাজ্যের সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরও তার ব্যাপক প্রভাব পড়ছে৷ সেই কথাই এ দিন মোদীকে বলেন রাজনাথ৷ এর পরেই মোদীর নির্দেশে সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তিনি৷ সিকিমের বিস্তীর্ণ অংশে বেবি ফুড , খাদ্যসামগ্রী , ওষুধ , পেট্রল , সব্জি সরবরাহ চালু করার জন্য রাজনাথের কাছে অনুরোধ করেন চামলিং৷

রাজনাথ তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেনন , দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য সব রকমের চেষ্টা করা হবে কেন্দ্রের তরফে৷ এ দিন বসিরহাট নিয়েও খোঁজ নেন মোদী৷ বাংলাদেশ লাগোয়া এই সীমান্ত অঞ্চল কেন অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল , তা জানতে চান প্রধানমন্ত্রী৷ কেন্দ্র রাজ্য সুসম্পর্কের উদাহরণ টেনে অবিলম্বে বসিরহাটের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কেন্দ্রের তরফে সব রকমের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী৷ সূত্রের খবর , রাজনাথের সঙ্গে আলোচনায় মোদী এ দিন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক মতান্তর নিয়েও খোঁজখবর নেন৷ সূত্রের খবর , পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর কথা ভাবছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক৷ এর আগে বিজেপির তরফে একটি প্রতিনিধি দল রাজ্যে গেলেও , তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি বসিরহাটে৷

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে বারবার বসিরহাটের উত্তন্ত পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হলেও , রাজ্যের তরফে সেই রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়নি৷ দিল্লিতে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে পদযাত্রা করেন প্রবাসী গোর্খারা৷ রাজঘাট থেকে যন্তরমন্তর পর্যন্ত পদযাত্রায় অংশ গ্রহণ করেন প্রায় শ ’পাঁচেক মানুষ৷ গোর্খাল্যান্ডের দাবির সমর্থনে ১১০ মিটার লম্বা পতাকা নিয়ে রাজ্য সরকার বিরোধী স্লোগান দেন গোর্খা সমর্থকরা৷ বসিরহাট কাণ্ডে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশের প্রশংসা করেও দার্জিলিংয়ের অশান্তি ও গুলি চালনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাইলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু৷ তিনি বলেন , ‘বসিরহাট -বাদুড়িয়া নিয়ে রাজ্য সরকার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভলো উদ্যোগ৷ কিন্ত্ত পাহাড়ের পরিস্থিতি নিয়েও বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া উচিত৷ ’


মাস্টারমশাইয়ের আশ্রয়ে নিশ্চিন্ত চায়নারা

$
0
0

হিমাদ্রি সরকার ■ বসিরহাট
সে দিনটা এখনও ভুলতে পারছেন না চায়না বেগম, সুস্মিতা সরকাররা৷ রবিবার থেকেই গোলমালের খবর আসছিল বাদুড়িয়া থেকে৷ কিন্ত্ত তার ঢেউ যে এ ভাবে তাঁদের পাড়া পর্যন্ত এত তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়বে , তা ভাবতেও পারেননি তাঁরা৷ বসিরহাট পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বড় জিরাফপুর শিশুভবন পাড়ার প্রায় দুশো ঘরে সব সম্প্রদায়ের মানুষই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রয়েছেন কয়েক যুগ ধরে৷

দুর্গাপুজো-ঈদ, সব উত্সব অনুষ্ঠানে দুই সম্প্রদায়ের মানুষই এখানে একই ভাবে সামিল হন৷ এ বাড়ির বাচ্চাটা অসুস্থ হলে ও বাড়ির বাসিন্দারাও উতলা হয়ে ওঠেন৷ কিন্ত্ত গত মঙ্গলবার যে ভাবে চারদিক থেকে একের পর এক মিছিল জড়ো হচ্ছিল , চোখের সামনে চলছিল দেদার ভাঙচুর , অগ্নিসংযোগ-তখন আঁতকে উঠছিলেন ওঁরা৷

সে রাতে মোস্তাফিজুর , চায়না , ইসমতারাদের কাছে মসিহা হয়ে উঠেছিলেন পাড়ারই মাস্টারমশাই গোবিন্দপ্রসাদ দাস৷ সিনেমার পর্দায় এমন সম্প্রীতির ছবি অনেক আছে৷ কিন্ত্ত এমন অশান্তির আগুনের মাঝেও দুশো ঘরের পাড়া বারবারই যেন বলেছে ‘আয় আরও বেঁধে বেঁধে থাকি৷ ’ ভ্যাবলার মোক্ষদা আদর্শ জিএসএফপি স্কুলের শিক্ষক গোবিন্দ রবিবার বলছিলেন , ‘গত মঙ্গলবার৷ আশপাশে গোলমাল হচ্ছিল , খবর পাচ্ছিলাম৷ কিন্ত্ত আমাদের এখানে অশান্তির আঁচটুকুও ছিল না৷ গোলমালটা শুরু হল বেলা পৌনে ১১টা নাগাদ৷ পাইকপাড়ার দিক থেকে ভ্যাবলার দিকে একটা বড় মিছিল আসছিল৷ ওদের চোখমুখ দেখেই মনে হচ্ছিল একটা বড় কিছু গোলমাল হতে পারে৷ মিছিল থেকে কেউ কেউ আশপাশের দোকান -বাজারে ভাঙচুর করতে শুরু করল৷ ’

বসিরহাট মোড় থেকে শুরু করে আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় কোথাও দোকান , কোথাও বাড়িতে ভাঙচুর , লুঠপাট , পাল্টা ভাঙচুর চলতে থাকে৷ পুলিশ -প্রশাসনও তখন দিশেহারা৷ চায়নার কথায় , ‘সে রাতে কী করব , বুঝে উঠতে পারছিলাম না৷ বাড়ি ছেড়ে চলে যাব , তারও জো নেই৷ তখন আমাদের পাশে দাঁড়ালেন মাস্টারমশাই -ই৷ উনিই বললেন , তোমরা এখানে এসে থাক৷ কোনও চিন্তা নেই৷ ’

স্বামী , দুই সন্তানকে নিয়ে চায়না, তাঁর জায়ের পরিবার, সব মিলিয়ে জনা পঁচিশেক মানুষ সে রাতে এসে উঠলেন গোবিন্দর বাড়িতেই৷ গভীর রাতে তখনও পাড়ার বাইরে মুহূর্মুহূ বোমার আওয়াজ কানে আসছে৷ কারা যেন হুঙ্কার দিয়ে যাচ্ছে, ‘সব ভেঙে ফেলব৷ আগুন লাগিয়ে দেব৷’ ইসমতারা বেগম বলেন , ‘কে যে কখন হামলা করবে , কিছু ঠিক ছিল না৷ আমরা তো এতদিন কখনও এ রকম দেখিনি৷ ছোট ছেলেমেয়েগুলো পর্যন্ত ভয়ে ঘুমোতে পারছিল না৷ ’

মাস্টারমশাই বলেন , ‘রাতে কারও ঘুম হয়নি৷ আমরা তো কেউ অশান্তি চাই না৷ অথচ কিছু বহিরাগত এসে সব লন্ডভন্ড করে দিয়ে চলে যাবে, এটা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না৷’ শুধু গোবিন্দ নন , তাঁর পড়শি অঞ্জনা দাস , তনুশ্রী ঘোষদের বাড়িতেও চায়নাদের মতো অনেকগুলি পরিবার আশ্রয় খুঁজেছেন৷ বছর তিরিশেকের মোস্তাফিজুর মাস্টারমশাইয়ের কথার রেশ ধরে বলেন , ‘বাইরে থেকে মিছিল করে আসা লোকজন আমাদের জিজ্ঞেস করলে একসুরেই বলেছি , আমাদের এখানে কোনও গোলমাল নেই৷ বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলে এসেছি , কেউ কোনও সমস্যায় পড়লে আমরা প্রত্যেকে পাশে আছি৷ ’
এখনও পাড়া আগলাতে রাত জেগে পালা করে পাহারা দিচ্ছে দু’পক্ষই , যাতে বাইরে থেকে কেউ এসে অশান্তি না-পাকাতে পারে৷ এ দিন অবশ্য বসিরহাটে নতুন করে কোথাও অশান্তি ছড়ায়নি৷ রাস্তার পাশে ভাঙা দোকান নতুন করে খোলার চেষ্টা করেছেন অনেকে৷ কোথাও সম্প্রীতির বার্তা দিতে হয়েছে ছোটদের বসে আঁকো প্রতিযোগিতা , কোথাও সব সম্প্রদায়ের মানুষকে নিয়ে ব্যবস্থা হয়েছে গণভোজের৷

তথ্য সহায়তা : তপন মণ্ডল।

বড় রাস্তায় টহল পুলিশের, রাত জাগছে পাড়া

$
0
0

মৈত্রেয়ী ভট্টাচার্য ■ বসিরহাট
পাড়া বাঁচাতে রাত জাগছেন পাড়ার ছেলেরাই৷
মেঘলা দুপুরের গুমোটকেও যেন ছাপিয়ে যাচ্ছিল রবিবার দুপুরের মাগুরখালির নিঃস্তব্ধতা৷ বাদুড়িয়ার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের এই পাড়া থেকেই অশান্তির সূত্রপাত হয়েছিল গত সন্তাহে৷ সে গ্রামে বহিরাগতরা এসে অশান্তি করে গেলেও গ্রাম ছিল শান্তির পক্ষে এককাট্টা৷ আজও আছে৷ রাত জেগে শান্তি -সম্প্রীতি রক্ষা করে চলেছে এই গ্রাম৷ কীসের দুশ্চিন্তা ?
গ্রামবাসীরা বলছেন , বহিরাগতদের বিশ্বাস নেই৷ এক সন্তাহ আগের ঘটনা থেকে ঢের শিক্ষা নিয়েছে এই পাড়া৷ সদ্য গ্র্যাজুয়েট শুভ বিশ্বাসের কথাই ধরা যাক৷ মাগুরখালি নীচের পাড়ায় রাতজাগা চোখে , পড়শি দাদাদের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিল ছেলেটা৷ ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া তরুণ এমএসসির ফর্ম ফিলআপের সঙ্গেই এখন পাড়া পাহারা দিতে অন্যদের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়েছেন৷ ‘রবিবার রাতে ও পাশ দিয়ে পাড়ায় ঢুকে সৌভিকদের জেঠার বাড়িতেও আগুন লাগিয়ে দিতে চেয়েছিল৷ কোনওমতে ঠেকিয়েছিলাম সবাই মিলে৷ নিশ্চিন্ত হই কী ভাবে ?’ প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন শুভ৷

সিমেন্ট কোম্পানির এক কর্মীও এক সপ্তাহ কাজে যাচ্ছেন না৷ কেন ? পুলিশ, বিএসএফ টহল দিচ্ছে না এ পাড়ায় ? প্রশ্ন শুনে হেসে ফেলে জটলাটা৷ ভিড়ের মধ্যে থেকে একজন বলে ওঠেন , ‘গত এক সপ্তাহে এই পাড়ায় একবারের জন্যও টহল দেয়নি পুলিশ বা বিএসএফ৷ চোঙা ফুঁকে দূর থেকে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েই দায় সেরেছে তারা৷ ’ ভিড় থেকে সমস্বরে অনেকেই বলেছেন, পুলিশের আরও তত্পরতা প্রয়োজন৷ বড় রাস্তা ছেড়ে ঢুকতে হবে গলিতেও৷

বিপদে নিরীহ হাতও যে কত শক্ত হয়ে উঠতে পারে বাদুড়িয়া থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে বসিরহাটের মৈত্র বাগান তার উদাহরণ৷ মধ্যরাতের অতর্কিত হামলায় সর্বস্ব হারানো মহিলারা ঝাঁটা -লাঠি হাতে দল বেঁধে বেরিয়ে পড়েছিলেন৷ ত্রিমোহিনী মোড়ে এক মহিলা বললেন , ‘প্রাণ বাঁচাতে তো রাস্তায় নামতেই হত !’ তাঁদের পাড়ায় বিএসএফ রুটমার্চ করেছে শনিবার৷ ‘রাতে ছেলেরা দল বেঁধে পাহারা দিয়েছে৷ আমরা মেয়েরাও যতটা সম্ভব ওদের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করেছি৷ ’

স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টায় কোনও কসুর করছে না বসিরহাট , বাদুড়িয়া৷ রবিবার সকাল থেকে দোকান খুলতে শুরু করেছেন ত্রিমোহিনী, রুদ্রপুর, বাদুড়িয়া বাজার, মায়ের বাজারের ব্যবসায়ীরা৷ যদিও , ব্যাঙ্ক পরিষেবা পুরোপুরি সচল না -হওয়ায় এখনও অসুবিধা পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের৷ অনেকেই বেতন হওয়ার প্রায় সাত দিন পরেও নিজের মাইনের টাকা তুলতে পারেননি এটিএম অচল থাকায়৷ নাগরিকদের ভরসা ফেরানোর উদ্যোগ ধাপে ধাপে বাড়াচ্ছে পুলিশ প্রশাসনও৷ রবিবার বিকেলে বসিরহাট পুরসভার সমস্ত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং ক্লাবগুলোকে নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন প্রশাসনিক প্রধানরা৷

দ্রুতই কাজ শুরু করবে বসিরহাট কমিশন

$
0
0

এই সময়: বসিরহাট-বাদুড়িয়ার ঘটনার তদন্তে বিচারবিভাগীয় কমিশন গঠন করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর রাজ্যে এটি ১৩তম বিচারবিভাগীয় কমিশন , যার নেতৃত্ব দেবেন অবসরপ্রান্ত বিচারপতি সৌমিত্র পাল৷ কোন শক্তি এই ঘটনার পিছনে রয়েছে তা খুঁজে প্রকাশ্যে আনাই এই কমিশনের উদ্দেশ্য৷ মুখ্যমন্ত্রী চান , দ্রুত কাজ শুরু করে এই কমিশন প্রকাশ্যে আনুক, বসিরহাট -বাদুড়িয়ার ঘটনার পিছনে কাজ করেছে কোন শক্তি৷ রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয় দে’র কথায় , ‘ইতিমধ্যেই কমিশন গঠনের বিজ্ঞন্তি প্রকাশিত হয়েছে৷ দ্রুত কমিশনের ঠিকানা ঠিক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ ’

রাজনৈতিক মহলের মতে, আগের ১২টি বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ে বাদুড়িয়া -বসিরহাটের ঘটনার তদন্তে গঠিত বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশনের গুরুত্ব অনেক বেশি৷ কারণ , এর সঙ্গে উগ্র মৌলবাদের তত্ত্ব জড়িয়ে রয়েছে৷ সরাসরি মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিজেপি ও তার সহযোগী সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে৷ ক্ষুণ্ণ হয়েছে জাতীয় সংহতি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রশ্নে বাংলার সুনামও৷ গত ৬ বছরে রাজ্যে ১২টি বিচারবিভাগীয় কমিশন গঠন করা হয়েছে৷ কিন্ত্ত সরকার হাতে পেয়েছে মাত্র চারটি কমিশনের রিপোর্ট৷

প্রথম জমা পড়েছিল এমএলএ হস্টেলে সিপিএম বিধায়ক মোস্তাফা বিন কাশেমের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত -রিপোর্ট৷ বিচারপতি ডিপি সেনগুপ্ত এই কমিশনের দায়িত্বে ছিলেন৷ তা বিধানসভায় পেশও করেছিল সরকার৷ কমিশন গঠনের এক বছরের মধ্যে সরকারের হাতে এসেছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের বিডিও কল্লোল শূরের অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে অবসরপ্রান্ত বিচারপতি গীতেশরঞ্জন ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের রিপোর্ট৷ ২০১১ সালে ৪ নভেম্বর এই কমিশন গঠনের কথা ঘোষণা করা হয়৷ ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর রিপোর্ট জমা পড়ে৷ ২১ জুলাইয়ের ঘটনা নিয়ে অবসরপ্রান্ত বিচারপতি সুশান্ত চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গঠিত বিচারবিভাগীয় কমিশন ২০১২ সালের ২৩ জুলাই কাজ শুরু করে ২০১৪ -র ২৯ ডিসেম্বর রিপোর্ট পেশ করে৷

যদিও এই রিপোর্ট সরকার গ্রহণ করেছে কি না , তা আজও জানা যায়নি৷ যেমন রাজ্য সরকারের কাছে পেশ করা হলেও জানা যায়নি , সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে গঠিত অবসরপ্রান্ত বিচারপতি শ্যামল সেনের নেতৃত্বে তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট৷ যদিও ২০১৪ সালের ২২ অক্টোবর রাতে কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে , কার্যকালও বাড়ানো হয়নি৷ আবার আমরির অগ্নিকাণ্ডে গঠন করা বিচারবিভাগীয় কমিশন ২০১২ সালের ১ জুন কাজ শুরু করলেও রিপোর্ট আজও জমা পড়েনি৷ ২০১২ সালে নভেম্বরে নদিয়ার তেহট্টে এসডিপিও -র বাড়ির সামনে বিক্ষোভে পুলিশের গুলি চালনার ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের কাজ জায়গার অভাবে অনেক দেরিতে শুরু হয়ে আজও শেষ হয়নি৷ সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ড , কাশীপুর -বরাহনগর গণহত্যা , নিউ টাউন জমি কেলেঙ্কারি , আনন্দমার্গী হত্যাকাণ্ড , পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনায় ১৯৯৯ সালে আদিবাসীদের মহাহুল উত্সবে লরি চাপা পড়ে ২৩ জনের মৃত্যু নিয়ে গঠিত অবসরপ্রান্ত বিচারপতি নিখিলনাথ ভট্টাচার্য কমিশনের রিপোর্টও জমা পড়েনি৷

প্রতিটি তদন্তের পথে বাধা সৃষ্টি করেছে সাক্ষীর অভাবই৷ একমাত্র নিউ টাউন জমি কেলেঙ্কারির তদন্তেই ৮৬০টি অভিযোগ জমা পড়েছে , কিন্ত্ত যার মধ্যে দু’শোর কিছু বেশি শুনানি এখনও পর্যন্ত করা যায়নি৷ ঘটনা হল , এই দীর্ঘসূত্রতায় বিরক্ত মমতাও৷ দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হয়েই তিনি জানতে চেয়েছিলেন , এই সব বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশনের কাজ কতটা এগিয়েছে৷ আগের ১২টি বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ে বাদুড়িয়া -বসিরহাটের ঘটনার তদন্তে গঠিত বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশনের গুরুত্ব অনেক বেশি৷ কারণ , এর সঙ্গে উগ্র মৌলবাদের তত্ত্ব জড়িয়ে রয়েছে৷ সরাসরি মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিজেপি ও তার সহযোগী সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে৷ ক্ষুণ্ণ হয়েছে জাতীয় সংহতি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রশ্নে বাংলার সুনামও৷

প্রতারণার বদলা নিতেই খুন

$
0
0

এই সময়, মেদিনীপুর: গোয়ালতোড় থানার পিংবনি-রামগড় সড়কে কাদাশোলের কাছে দুই সিভিক ভলান্টিয়ার খুনের কিনারা করল পুলিশ৷ মাওবাদী হামলা বা দুষ্কৃতী হামলার জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে , চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা নেওয়ার কারনে ব্যক্তিগত আক্রোশে এই খুন৷ ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে শনিবার রাতে ৮ জনকে গ্রেন্তার করে পুলিশ৷ রবিবার ধৃতদের গড়বেতা এসিজেএম আদালতে তোলা হলে ৭ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক৷

শুক্রবার রাতে অন্য ৬ জন সিভিক ভলান্টিয়ারের সঙ্গে পিংবনি বাজারে ডিউটি করছিলেন অমিত মাহাতো ও সৌরভ মাহাতো৷ একটি ফোন আসার পর চলে যান দু’জনে৷ গোটা রাতে তাঁরা আর না -ফিরলেও অন্য সিভিক ভলান্টিয়াররা ভেবেছিলেন , অমিত ও সৌরভ বাড়ি চলে গিয়েছেন৷ কিন্ত্ত শনিবার সকালে একটি সেতুর তলায় দু’জনের দেহ উদ্ধারের পর চাঞ্চল্য ছড়ায় জঙ্গলমহলে৷ আলাদা আলাদা ভাবে পড়েছিল দেহ৷ নৃশংস ভাবে ভারী কিছু দিয়ে তাঁদের সারা শরীর ও মাথা থেঁতলে দেওয়া হয়েছিল৷ একটি দেহের মাথার উপর পাথর চাপা দেওয়া ছিল৷

ঘটনার পর মাওবাদী আক্রমণে এই খুন বলে সন্দেহ করেছিলেন পরিবারের লোকেরা৷ মৃতদের বাড়িতে গিয়ে ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় শাসকদলের বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতোকে৷ রবিবার মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন , ‘মৃত সিভিক ভলান্টিয়ার অমিত মাহাতো গোয়ালতোড়ের পিংবনি এলাকার সনাতন মুর্মুর দুই ছেলেকে পুলিশের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রীতি দিয়ে তিনবছর আগে দেড় লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন৷ কিন্ত্ত চাকরি করে দিতে না পারায় , অনেক বার অমিতকে সেই টাকা ফেরত দিতে বলেছিলেন সনাতন৷ টাকা ফেরত না-দিয়ে উল্টে সনাতনকে ফাঁসানের হুমকি দিয়েছিল অমিত৷ এরপরই তাঁকে খুনে করার পরিকল্পনা করে সনাতন৷ ’এসপি বলেন , ‘অমিতকে খুনের জন্য বিলাশ টুডু, মিলন হেমব্রমদের সঙ্গে কথা বলে শুক্রবার বাপন কিস্কু নামে একজনের বাড়িতে খুনের পরিকল্পনা করেছিল সনাতন৷

প্ল্যান মতো সন্ধ্যায় অমিতকে ফোন করে বাড়িতে আসতে বলে বাপন৷ ডিউটিতে যাচ্ছি বলে তখনকার মতো এড়িয়ে যায় অমিত৷ ফের রাত এগারোটা নাগাদ আবার ফোন করা হয়৷ বাপন তাঁকে বলে , একটি মেয়ে আছে৷ চলে আয়৷ এরপর পিংবনি বাজারে কর্তব্যরত অন্য সিভিক ভলান্টিয়ার সৌরভকে সঙ্গে নিয়ে বাইকে করে কাদাশোল রাস্তায় সেতুর উপর পৌঁছায় অমিত৷ ’ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে , সকলের সঙ্গে মদ খাওয়ার পর মেয়েটির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে অমিত৷ তখন একটি কুঠার দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করে বিশাল৷ মেরে ফেলার পর অমিতকে সেতু থেকে নীচে ফেলে দেওয়া হয়৷ গোটা ঘটনা নিজের চোখে দেখে নেওয়ায় সৌরভকেও খুন করে সেতুর উপর থেকে ফেলে দেওয়া হয়৷

মৃত্যু নিশ্চিত করতে তাঁর মাথায় বড় পাথর চাপা দেওয়া হয়৷ পুলিশ সুপার বলেন , ‘দু’জনকে খুনের ঘটনা স্বীকার করেছে ধৃতরা৷ তবে খুনের পর তারা একদম স্বাভাবিক ছিল৷ রাতে নিজেদের বাড়িতেই তারা ঘুমোচ্ছিল৷ কেন খুন করেছে তা জিজ্ঞাসা করায় খুনিরা জানিয়েছে , সনাতনের টাকা ফেরত দেয়নি বলে তাদের মারতে বলেছিল৷ তাই মেরে দিয়েছে৷ যে সিমকার্ড ব্যবহার করে ওই সিভিক ভলান্টিয়ারকে ডাকা হয়েছিল , সেটা রাত দেড়টা নাগাদ বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ ’

স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে , এলাকায় দাদাগিরি করতেন অমিত৷ তৃণমূল ঘনিষ্ঠ হওয়ায় কখনও তা মাত্রা ছাড়িয়ে যেত৷ গোয়ালতোড় এলাকার তৃণমূল নেতা দুলাল মণ্ডল শনিবার বলেছিলেন , ‘মৃত দু’জনেই তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী থাকায় তাঁদের খুন করেছে বিজেপি৷’ রবিবার অবশ্য তিনি বলেন , ‘চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নিয়ে থাকলে অন্যায় করেছে৷ পুলিশ তদন্ত করুক৷ সব সত্য উঠে আসবে৷ ’

বানভাসি উত্তরবঙ্গে আরও বৃষ্টির শঙ্কা, সতর্ক প্রশাসন

$
0
0

এই সময়, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও কলকাতা: চলতি বর্ষায় এই প্রথম বিপাকে উত্তরবঙ্গ৷ প্রবল বর্ষণে ফুলেফেঁপে উঠেছে বেশ কয়েকটি নদী৷ বহু এলাকা প্লাবিত৷ কোচবিহারে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ তিন জন৷ বৃষ্টি থামার কোনও লক্ষণ নেই৷

আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস, আগামী ২-৩ দিন পাহাড়, তরাই, ডুয়ার্সের জেলাগুলিতে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ চলতে থাকবে৷ ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ারই আশঙ্কা৷

শনিবার থেকে প্রবল বৃষ্টি চলছে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে৷ বক্সাদুয়ার , কুমারগ্রাম , হাসিমারায় ২২-২৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ২৪ ঘণ্টায়৷ আলিপুরদুয়ার , জলপাইগুড়ি , নাগরাকাটা , গজলডোবায় ১২-১৫ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হয়েছে৷ বিপুল বর্ষণের জের সামলাতে তিস্তা নদীর গজলডোবা ব্যারেজ থেকে ১ ,৯২৯ কিউমেক জল ছাড়া হয়৷ পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকায় দোমোহিনী থেকে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মেখলিগঞ্জ পর্যন্ত তিস্তার অসংরক্ষিত এলাকায় হলুদ সঙ্কেত জারি করে সেচ দন্তর৷ কোচবিহারের পুণ্ডিবাড়ি থানার কাছে মালতিগুড়ি ও মধুপুর এলাকায় তোর্ষা নদীতে দু’টি নৌকা ডুবে যায়৷ দু’টি ঘটনায় নিখোঁজ তিন গ্রামবাসী কাননবালা সেন , নাসিরুদ্দিন মিয়া ও মিতা বিশ্বাস৷ তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ৷

জলপাইগুড়ির নিচু এলাকায় জল জমে গিয়েছে৷ জলস্ফীতি করলা নদীতে৷ গয়েরকাটায় আংরাভাসা নদীর জলে প্লাবিত বিস্তীর্ণ এলাকা৷ বানারহাট ও বিন্নাগুড়িতে হাতিনালার জলস্ফীতির কারণে প্লাবিত হয়েছে বেশ কিছু এলাকা৷ ফালাকাটার জটেশ্বরের লীলাবতী মহাবিদ্যালয় জলমগ্ন৷ নষ্ট হয়েছে বহু মূল্যবান নথি৷ হাউরি নদীতে জল বেড়ে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন টোটোপাড়া৷ আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক দেবীপ্রসাদ করণম জানান , বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন প্রস্ত্তত৷

ত্রাণ বণ্টন ও উদ্ধার কাজ চালাতে বিশেষ দলকে প্রস্ত্তত থাকতে বলা হয়েছে৷ উত্তরপ্রদেশের উপর একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার পরই উত্তরবঙ্গে প্রবল বর্ষণের পূর্বাভাস দেয় আবহাওয়া দন্তর৷ এখন একটি ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে পশ্চিম বিহারের উপর৷ ফলে বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প ভরা দখিনা বাতাস পৌঁছে যাচ্ছে উত্তরবঙ্গে৷ তা পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে তোড়ে নামছে বৃষ্টি৷ আগামী ২-৩ দিন এমনই ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ চলবে৷ তুলনায় আগামী দু’দিন দক্ষিণবঙ্গে হাল্কা থেকে মাঝারি বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিই ভরসা৷ তার পর কলকাতা -সহ আশপাশের জেলাগুলিতে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে পারে৷

বিজেপিকে ঠেকাতে রাজপুত সমাজের পাশে শাসকদল

$
0
0

এই সময়, সিউড়ি: অনুব্রতর গড়ে ইতিমধ্যেই থাবা বসিয়েছে বিজেপি৷ বাধা পাওয়া সত্ত্বেও গ্রামে গ্রামে দলের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন বিস্তারকরা৷ গেরুয়া শিবিরের গতি রোধ করতে এবার রাজপুত-ক্ষত্রিয় সমাজকে পাশে পেতে চাইছে তৃণমূল৷

রবিবার সিউড়িতে রাজপুত-ক্ষত্রিয়দের প্রথম বীরভূম জেলা সম্মেলনে হাজির হয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন দলের হেভিওয়েট নেতা -মন্ত্রীরা৷ আগামী দিনে রাজ্য জুড়ে , এমনকি জেলার তিনটি মহকুমায় সম্মেলন করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা৷ ঘটনায় অবশ্য শাসকদলের অন্দরমহলে জাতপাতের রাজনীতির অভিযোগ করেছে বিরোধীরা৷ তাদের বক্তব্য , গোবলয়ের মতো এ রাজ্যেও জাতপাতের তোষামোদ শুরু করেছে তৃণমূল৷
‘সেবামূলক কাজের জন্য তাদের পাশে দাঁড়ানো হয়েছে ’ বলে মন্তব্য করেছে তৃণমূল৷ সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন৷ বীরভূমে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ বিজেপি৷ রামনবমী , বিস্তারক অভিযান , বিদ্যার্থী পরিষদের গ্রাম্য জীবন দর্শনের নামে যুবকদের কাছে টানার মতো বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি করছে তারা৷ রবিবারই ২১ জোড়া আদিবাসী পরিবারের বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সঙ্ঘ শিবির৷ এই অবস্থায় নিজেদের সমর্থন ধরে রাখতে পাল্টা হনুমান পুজোর মতো রাজপুত সমাজকেও সমান গুরুত্ব দিতে চাইছে তৃণমূল৷

দলের বিভিন্ন ব্লক নেতাদের পাশাপাশি এদিন রাজ্যের দুই মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা ও আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য থেকেই তা পরিষ্কার৷ আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন , ‘রাজপুত সমাজ একজোট হয়ে জেলা জুড়ে কাজ করুক, এটা আমরা চাই৷ আমরা পাশে থাকব৷ ’ অনুব্রত মণ্ডল বলেন , ‘এই ধরনের অনুষ্ঠান আগে হত না৷ প্রতি বছর সম্মেলন করুন আপনারা৷ আমি বলছি , রাজপুত ক্ষত্রিয় সমাজকে সবরকম ভাবে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করব৷ রাজ্য জুড়ে সংগঠন করুন৷ আগামী দিনে অন্য মহকুমায় সম্মেলন করুন৷ কোনও অসুবিধা হলে আমি আছি৷ ’

রাজপুত-ক্ষত্রিয় প্রীতিতে অবশ্য অন্য গন্ধ পাচ্ছে বিজেপি৷ দলের জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলেন , ‘আসলে ওরা ভয় পেয়েছে৷ তাই এবার জাতপাতের রাজনীতি শুরু করেছে৷ হুমড়ি খেয়ে গোটা তৃণমূল , ক্ষত্রিয়দের পাশে পেতে ঢালাও প্রতিশ্রীতি দিচ্ছে৷ তবে সাধারণ মানুষ এত বোকা নয়৷ মিথ্যা প্রতিশ্রীতিতে সবাই তৃণমূলে চলে যাবে , এটা ভাবার কোনও কারণ নেই৷ ’

কংগ্রেস নেতা সৈয়দ সিরাজ জিম্মী বলেন , ‘আসলে রূপটা ক্রমশ সামনে চলে আসছে৷ তাই এবার জাতপাতের তোষামোদ শুরু করেছে টিএমসি৷’ যদিও এই অনুষ্ঠানের হোতা জেলা তৃণমূল সহ -সভাপতি রানা সিংহ বলেন , ‘সমাজে সেবামূলক কাজ যাঁরা করেন , তাঁদের পাশে দল সব সময় থাকবে৷ এতে আইডেন্টিটি পলিটিক্সের কিছু নেই৷ ’

বিজেপির বনধে রায়গঞ্জে ভাঙচুর বাস

$
0
0

এই সময়, রায়গঞ্জ: কর্মীখুনের প্রতিবাদে বিজেপির ডাকা ১২ ঘণ্টার উত্তর দিনাজপুর জেলা বন্ধকে কেন্দ্র করে অশান্তি ছড়াল রবিবার৷ এ দিন রায়গঞ্জের নেতাজি মোড় এলাকায় দূরপাল্লার দু’টি সরকারি বাসে ভাঙচুর চালানো হয়৷ জাতীয় সড়কে চলন্ত একটি ট্রাকের সামনের কাচও ভাঙা হয়৷ গাড়ি ভাঙচুর ও রাস্তা অবরোধের অভিযোগে গোটা জেলায় ১০২ জন বন্ধ সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর৷

শনিবার বিজেপি কর্মী খুনের ঘটনার পর রবিবার দিনভর চোপড়ায় ছিল চাপা উত্তেজনা৷ উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠোর বলেন, ‘চোপড়ায় খুনের ঘটনায় নির্দিষ্ট ধারাতে মামলা রুজু হয়েছে৷ ঘটনার পূর্ণ তদন্তের পাশাপাশি অভিযুক্তদের ধরতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে৷’ এ দিন সকাল থেকেই বিজেপির কর্মী -সমর্থকদের বাইক মিছিল নজরে আসে রায়গঞ্জে৷ শহরের বেশ কয়েকটি বাজারের দোকানপাট খুললেও বন্ধ সমর্থকদের বাইক বাহিনী গিয়ে তা বন্ধ করে দেয়৷ কয়েকটি সরকারি বাস চললেও রাস্তায় বেসরকারি বাসের দেখা মেলেনি৷

উত্তর দিনাজপুর বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক পল্লব প্রামাণিক বলেন , ‘নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় আমরা রাস্তায় বাস নামাইনি৷ বাইরের জেলা থেকেও একই কারণে কোনও বেসরকারি বাস আজ এই জেলায় ঢোকেনি৷ ’এ দিন দুপুরে বিজেপির পক্ষ থেকে রায়গঞ্জে বন্ধের সমর্থনে একটি মিছিল বের করা হয়৷ মিছিল শেষে বিজেপির জেলা সভাপতি নির্মল দাম বলেন , ‘গোটা জেলাতেই বন্ধ একশো শতাংশ সফল হয়েছে৷ গতকাল চোপড়াতে তৃণমূলের গুণ্ডা বাহিনীর হাতে আমাদের বুথ সভাপতির খুনের ঘটনাকে মেনে নিতে পারেনি সাধারণ মানুষ৷ ’ বাস ও ট্রাক ভাঙচুরের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন , ‘আমাদের কর্মী-সমর্থকরা কোথাও কোনও ভাঙচুর করেনি৷ তৃণমূল কর্মীরাই ভাঙচুর করে আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে৷ ’

বিজেপির এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি অমল আচার্য বলেন, ‘পুলিশের চোখের আড়ালে বাস ও ট্রাকে ভাঙচুর চালিয়েছে বিজেপি কর্মীরাই৷ ’সোমবার সকালে চোপড়ায় যাবে রাজ্য বিজেপির প্রতিনিধি দল৷ ২৬ জুলাই সেখানে দিলীপ ঘোষের জনসভা হবে বলেও জানা গিয়েছে৷


সারদা নিয়ে ফের সক্রিয় সিবিআই, জিজ্ঞাসাবাদ শতাব্দীকে

$
0
0

এই সময়: একা নারদে রক্ষা নেই, সারদা দোসর৷ দীর্ঘ দিন বাদে ফের সারদার আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে তত্পরতা শুরু করল সিবিআই৷ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রের খবর , সোমবার সারদা তদন্তে সিবিআইয়ের একটি দল তৃণমূলের সাংসদ-অভিনেত্রী শতাব্দী রায়ের কলকাতার বাড়িতে গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে৷ দিল্লি থেকে সিবিআইয়ের মুখপাত্রও সাংসদকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি স্বীকার করেছেন৷ তবে শতাব্দী বলেন , ‘আমাকে কেউ জিজ্ঞাসাবাদ করতে আসেনি৷ আমি এখনই বাড়িতে ঢুকলাম৷ ’

সারদা তদন্ত নিয়ে ফের নাড়াচাড়া শুরু হওয়ার পিছনে রাজনৈতিক টানাপোড়েনই দেখছেন অনেকে৷ কেউ বিজেপি -র বিরুদ্ধে মুখ খুললেই সিবিআই -ইডি দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে বলেবার বারই সরব হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সিবিআই সূত্রের খবর , সারদাকর্তা সুদীন্ত সেনের নাম করে তদন্তকারী সংস্থার কাছে পাঠানো চিঠিতে সারদার গ্রুপ অব কোম্পানিজের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে শতাব্দীর নাম রয়েছে৷ তিনি কীসের ভিত্তিতে ওই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হলেন , কে তাঁর সঙ্গে সুদীন্ত সেনের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন , এর পিছনে আরও কেউ আছে কি না , সারদার সঙ্গে তাঁর কোনও চুক্তি হয়েছিল কি না , সংস্থা থেকে তিনি কত টাকা নিয়েছেন --এ সবই জানতে চান তদন্তকারীরা৷

চুক্তির পক্ষে কোনও কাগজপত্র আছে কি না , তা-ও তাঁরা দেখতে চান৷ দিল্লি থেকে সিবিআই মুখপাত্র জানান , সাংসদের বাড়িতে ঘণ্টাখানেক কথা বলেছেন তদন্তকারীরা৷ যদিও শতাব্দী বলেছেন , ‘আমাকে নতুন করে কেউ তলব করেনি৷ আগে এক বার যা ডেকে পাঠিয়েছিল , তার পর আর কেউ ডাকেনি৷ ’ তবে সিবিআই সূত্রের খবর , আরও বেশ কয়েক জন প্রভাবশালীকে খুব শিগগিরই তলব করতে পারে সিবিআই৷

সারদা নিয়ে শতাব্দীকে জিজ্ঞাসাবাদের দিনই নারদ-তদন্তে ফের সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়লেন আর এক তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদ৷ এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ নিজাম প্যালেসে সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসারদের কাছে হাজিরা দেন সুলতান৷ বেশ কিছু নথিপত্রও তিনি তদন্তকারীদের কাছে জমা দেন৷ সে -সব নথি পরীক্ষা করে তাঁকে ফের তলব করা হতে পারে বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর৷ এক সন্তাহ আগে সুলতানকে প্রায় সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই৷

নারদের ফুটেজে ম্যাথু স্যামুয়েলের কাছ থেকে যে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে , সে টাকা কোথায় গেল , তা জানতে চান তদন্তকারীরা৷ সুলতান দাবি করেন , ওই টাকা নির্বাচনী তহবিলে জমা দেওয়া হয়েছে৷ সেই সংক্রান্ত নথি নিয়ে ফের তাঁকে তলব করে সিবিআই৷ এ দিনই নারদ স্টিং অপারেশনের তদন্তে তৃণমূলের মন্ত্রী তথা মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে হাজির হতে বলেছিল আর এক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি৷ তবে ইডি -র দন্তরে হাজির হননি মেয়র৷ তাঁর আইনজীবী গিয়ে তদন্তকারীদের সঙ্গে দেখা করে আরও কিছু দিন সময় চান৷ শেষমেশ মেয়রকে হাজিরা দেওয়ার জন্য আরও দু’সন্তাহ মঞ্জুর করেছে ইডি৷

কেন্দ্র দাঙ্গা বাধাচ্ছে, দুষলেন মমতা

$
0
0

তাপস প্রামাণিক ■ নন্দকুমার
ইংরেজ বিরোধী আন্দোলন ঠেকাতে বঙ্গভঙ্গের কৌশল নিয়েছিলেন ব্রিটিশ শাসকরা৷ সেই একই কায়দায় উন্নয়নের প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠতে না -পেরে বাংলাকে ভাগ করার ষড়যন্ত্র করছে মোদী সরকার৷ তার জন্য বাইরে থেকে বাংলায় হিংসা আমদানি করা হচ্ছে৷ এর বিরুদ্ধে মানুষকে রুখে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সোমবার পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারে একটি তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্রের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন , ‘১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গান বেঁধেছিলেন , বাংলার মাটি বাংলার জল ...৷ বাংলা রামকৃষ্ণের জন্মভূমি৷ এই বাংলাকে ভাগ করা অত সহজ নয়৷ জীবন দিয়েও বাংলা ভাগ রুখব৷ ’ নন্দকুমার থেকে দিঘা যাওয়ার পথে রাস্তার দু’ধারে যে ভাবে হাজারে হাজারে মানুষ মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন , তা দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব৷

উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় সাম্প্রদায়িক হিংসা এবং পাহাড়ে অশান্তির জন্য কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরাসরি চক্রান্তের অভিযোগ এনে তুলোধোনা করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সরকারি অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেই তিনি তাঁর ভাষণে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে রাজ্যে দাঙ্গা বাঁধানোর মতো গুরুতর অভিযোগ এনেছেন৷ কখনও আবার অশান্ত দার্জিলিংয়ে সিআরপিএফ মোতায়েন নিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনেছেন৷ প্রায় ৪০ মিনিটের ভাষণের বেশিরভাগ সময়টাই তিনি ব্যয় করেছেন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে৷

কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রী মহেশ শর্মা অবশ্য মমতার দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন৷ তিনি বলেন , ‘পশ্চিমবঙ্গকে আলাদা চোখে দেখার কোনও কারণ নেই কেন্দ্রের৷ গোটা দেশকে যে ভাবে দেখা হয় , এই রাজ্যকেও সেই একই ভাবে দেখা হয়৷ গোটা দেশ যে ভাবে চলতে যায় , বরং উনিই (মমতা ) তাতে তাল মেলাচ্ছেন না৷ শাড়ি -চটি পরে ঘুরলেই উন্নয়ন হয় না৷ পশ্চিমবঙ্গ অনেক পিছিয়ে আছে উন্নয়নের নিরিখে৷ আমি তো তিন বছর ধরে কেন্দ্রের মন্ত্রী৷ এখানে কী হচ্ছে , জানি৷ ’ বসিরহাটে সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনায় কেন্দ্রকে দায়ী করে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ , সীমান্তের ও -পার থেকে দুষ্কৃতীদের নিয়ে এসে বসিরহাটে গণ্ডগোল পাকানো হয়েছে৷ তাঁর যুক্তি , সীমান্তের ১৫ কিমি এলাকা পর্যন্ত বিএসএফের দায়িত্বে৷ বিএসএফ থাকা সত্ত্বেও কী করে সীমান্তের ও -পার থেকে দুষ্কৃতীরা এসে দাঙ্গা করতে পারে ! মমতার কথায় , ‘যেটা তোমার দেখার কথা , সেটা তুমি দেখছ না৷ উল্টে কিনা আমাকে অভিযোগ করছ৷ ’ তাঁর দাবি , অসমে মহিলাদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে৷ কোচবিহারেও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দিয়ে এই ধরনের অস্ত্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল৷ বিজেপিকে উদ্দেশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন , ‘তুমি কি মহিলাদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিতে পার ? কী অধিকার রয়েছে তোমার ?’ প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন , ‘যিনি সব কিছু জ্বালিয়েপুড়িয়ে দেন , তিনি কখনও দেশের নেতা হতে পারেন না৷ যাঁর কোনও চরিত্র নেই , তিনি রাজনৈতিক নেতা হতে পারেন না৷ যারা মানুষের মধ্যে দাঙ্গা লাগিয়ে দেয় , তারা নেতা হতে পারে না৷ ’স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন , ‘বাংলা যখন এগিয়ে চলছে তখন প্রতিযোগিতায় পেরে উঠতে না পেরে রাজ্যের বিরুদ্ধে কুত্সা করছে , অপপ্রচার করছে৷ ’ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা , ‘হিংসা নয় , সারা ভারতবর্ষে উন্নয়নের প্রতিযোগিতা হোক৷ ’ উদাহরণ হিসাবে তিনি জানান , শিশুমৃত্যু বন্ধে সারা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে৷ প্রথম স্থানে রয়েছে জম্মু-কাশ্মীর৷ জনসংখ্যার নিরিখে তারা পশ্চিবঙ্গের ধারেকাছেও নেই৷ জেলায় জেলায় সরকারি হাসপাতালে এসএনসিইউ , মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাব , আইসিসিইউ এবং নিখরচায় চিকিত্সা পরিষেবা চালু হওয়ার ফলেই রাজ্য এই সাফল্যের মুখ দেখছে৷

দার্জিলিংয়ে সিআরপিএফ মোতায়েন নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনে তিনি জানান , আদালত নির্দেশ দেওয়ার পরও কেন্দ্র সিআরপিএফ পাঠাচ্ছে না৷ তার বদলে কেন্দ্রীয় সরকার বলছে , ঝাড়গ্রাম থেকে দু’কোম্পানি সিআরপিএফ তুলে নিয়ে যেতে৷ মমতার প্রশ্ন, ‘একটা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কেন্দ্র কেন চক্রান্ত করবে ? গুজরাটেও তো বিজেপি ’র সরকার আছে৷ অন্ধ্রপ্রদেশে চন্দ্রবাবু নাইডুর সরকার আছে৷ সেখানে তো এ -সব কিছু হচ্ছে না৷ ’

দুঃস্বপ্ন ভুলে ছন্দে বসিরহাট

$
0
0

তপন মণ্ডল ■ বসিরহাট
গত সাত দিনের স্মৃতি দ্রুত ভুলতে চাইছে বসিরহাট৷ এক সপ্তাহ পর, সোমবার বসিরহাটে স্কুল -কলেজ -অফিস পুরোদমে চালু হল৷ সেসব জায়গায় হাজিরাও বেশ ভালো৷ খুলেছে দোকানপাট , বাজারহাট৷ সেখানেও ক্রেতাদের পাতলা ভিড় দেখা গিয়েছে৷ চলছে বিভিন্ন রুটের বাস ও অন্যান্য পরিবহণ৷ ব্যাঙ্ক , পোস্ট অফিসে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে৷ খুলেছে সরকারি , বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির এটিএম -ও৷ মহকুমা প্রশাসন জানিয়েছে , ধীরে ধীরে এবং ধাপে ধাপে নেট এবং কেবল পরিষেবাও চালু করা হবে৷

তবে রাস্তাঘাটে পরিচিত লোকেদের মধ্যে কথাবার্তায় চলে আসছে গত ক’দিনের হাড় হিম করা অভিজ্ঞতার কথা৷ হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সকলেই বলছেন, ‘আর যেন সেই দিনগুলি ফিরে না আসে৷ ’ এলাকার ক্লাবগুলি স্থানীয় ভিত্তিতেই যে যেভাবে পারছে , শান্তি বৈঠক ডাকছে৷ হচ্ছে মহল্লায় মহল্লায় শান্তি মিছিলও৷ তবে মানুষের মনে এখনও আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে৷ এ দিনই সকালে কথা হচ্ছিল , দুষ্কৃতীদের হামলায় নিহত ট্যাঁটরার বাসিন্দা কার্তিক ঘোষের ছেলে প্রভাশিসের সঙ্গে৷ তিনি বলেন , ‘আমরা বাবাকে আর ফিরে পাব না৷ তবে ভবিষ্যতে আর কাউকে যেন আমার বাবার মতো বেঘোরে প্রাণ দিতে না হয়৷ ঢের হয়েছে৷ আমরা এখন শুধু শান্তি চাই৷ ’

প্রভাশিস এ দিনও জানান , তাঁদের পরিবার কোনও রাজনীতির সঙ্গে কোনও দিন যুক্ত ছিল না৷ কার্তিকই ছিলেন ঘোষ পরিবারের একমাত্র রোজগেরে৷ তাঁর একটি চায়ের দোকান ছিল৷ গোলমালের মধ্যে তাঁর মৃত্যুর কারণে এই ক’দিন সেই দোকানটি বন্ধ ছিল৷ শনিবার বড় ছেলে দেবাশিস দোকানটি খুলেছেন৷ সোমবার তাঁর চায়ের দোকানে দেখা হল কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে৷ তাঁদেরই এক জন সোহরাব মণ্ডল বলেন , ‘আমাদের এখানে এর আগে কখনও এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি৷ আমরা চাই , সকলে মিলেমিশে থাকুক৷ এটাই আমাদের পরম্পরা৷ ’ গত সাত দিনের ঝঞ্চাটে সব চেয়ে সমস্যায় পড়েছেন দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ জন৷ যেমন বসিরহাট শহরের বাসিন্দা জিয়াউল হক৷ পেশায় বাসের হেল্পার৷ গত ক’দিনে তাঁর রুটের বাস চলাচল বন্ধ ছিল৷ ফলে জিয়াউলের আয় -ও বন্ধ৷ তিনি বলেন , ‘কী করে যে এই ক’দিন কাটালাম , তা আমিই জানি৷’ তাঁর কথা , ‘আমি যখন বাসে যাত্রী তুলি, তখন তো হিন্দু-মুসলিম দেখি না৷ সব যাত্রীই সমান৷ আমরা কেন মারামারি করে মরব ?’ তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস , একদল দুষ্কৃতীই গত ক’দিন ধরে গোলমাল পাকিয়েছে৷ এলাকায় অশান্তি ছড়িয়েছে৷

জিয়াউলের মতোই করুণ অবস্থা ভ্যানচালক বরুণ ঘোষের৷ মঙ্গলবার সকাল থেকে তিনি একেবারে ঘরে বসা৷ সোমবারই প্রথম ভ্যান বার করেছেন৷ তবে এ দিনও বরুণ তেমন সওয়ারি পাননি৷ বরুণ বলেন , ‘আজ খুব ভালো লাগছে রাস্তায় লোক জন দেখে৷ এই ক’দিন তো রীতিমতো ভূতুড়ে চেহারা ছিল শহরটার৷ ’ সোমবার বসিরহাট বাজারে মাছ নিয়ে বসেছিলেন কেশব হাতি৷ তিনি বলেন , ‘প্রায় সাত দিন পর আজ মাছ নিয়ে বসলাম৷ তবে বাজারে সেই পরিচিত ভিড় কোথায় ? হয়ত সব মাছ বিক্রি হবে না৷ বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে৷ এরই মধ্যে বসিরহাটের বিভিন্ন প্রান্তে এ দিনও আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানরা এবং পুলিশ কর্মীরা রুট মার্চ করেছেন৷ রবিবার বেশি রাতে বসিরহাটের শশীনার গোফনায় ব্যাপক বোমাবাজি চলে৷ স্থানীয় যুবকরা রাত পাহারায় ছিলেন৷ বোমার শব্দ শুনে তাঁরা ছুটে যান৷ কিন্ত্ত কাউকে দেখতে পারেননি তাঁরা৷ তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় আধা সামরিক বাহিনীও৷ প্রায় আট গাড়ি বোঝাই জওয়ান দেখে বাসিন্দারা ভরসা পান৷ তবে ওই বোমাবাজিতে কেউ জখম হননি৷

ফের শিল্পবান্ধব বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর

$
0
0

তাপস প্রামাণিক ■ নন্দকুমার
শিল্পে কোনও ধরনের গণ্ডগোল তিনি বরদাস্ত করবেন না বলে ফের হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সোমবার পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারে ইন্ডিয়ান পাওয়ার কর্পোরেশন লিমিটেডের একটি তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্রের উদ্বোধন করতে এসে দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর আর্জি, ‘শিল্পে কোনও ডিস্টার্ব করবেন না৷ শিল্পের স্বার্থে আমরা সব রকম ভাবে সাহায্য করব৷ দরকার হলে পরিকাঠামো তৈরি করে দেব৷ যাতে আমাদের ভাই -বোনেরা চাকরি পায়৷ ’

হলদিয়ায় প্রায় ৩৫০০ কোটি টাকা খরচ করে একটি নতুন তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্র গড়ে তুলেছে ইন্ডিয়া পাওয়ার কর্পোরেশন লিমিটেড৷ যার উত্পাদন ক্ষমতা ৪৫০ মেগাওয়াট৷ মোট তিনটি ইউনিট থেকে গড়ে ১৫০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুত্ উত্পাদিত হবে৷ এখান থেকে রাজ্য বিদ্যুত্ সরবরাহ নিগমকেও বিদ্যুত্ সরবরাহ করবে তারা৷ ঘটনাচক্রে এই সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব অমিতকিরণ দেব৷ সিঙ্গুর -নন্দীগ্রামে জমি অধিগ্রহণ -পর্বে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকারের মুখ্যসচিব ছিলেন অমিতকিরণ৷ আর অধিগ্রহণের বিরোধিতা করে জমি আন্দোলনকে উচ্চগ্রামে নিয়ে গিয়েছিলেন আজকের মুখ্যমন্ত্রী৷

বিরোধীরা সেই সময় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-নিরুপম সেনদের পাশাপাশি মুখ্যসচিব অমিত এবং শিল্পসচিব সব্যসাচী সেনকেও নিশানা করেছিল৷ যদিও সময়ের ফেরে সেই অমিতকিরণকেই এ দিন মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে বসে থাকতে দেখা যায়৷ সরকারি পরিষেবা প্রদানের সময়ও অমিতকিরণকে কাছে ডেকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী শিল্পের পাশে থাকার বার্তাই দিতে চেয়েছেন বলে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ মনে করছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকায় অত্যন্ত খুশি অমিতকিরণ৷ তিনি বলেন , ‘মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আজই প্রথম আলাপ হল৷ উনি সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন৷ ’ পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীরও ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রাক্তন মুখ্যসচিব৷ তিনি বলেন , ‘জমি নিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছিল৷ উনি নিজে সমস্তটা সামলেছেন৷ ’ প্রসঙ্গত , সিইএসসি -র পর ইন্ডিয়া পাওয়ার কর্পোরেশনের হাত ধরেই রাজ্যে বিদ্যুত্ ক্ষেত্রে বিপুল বেসরকারি বিনিয়োগ হল৷

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী জানান , এই তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য রাজ্য সরকার ল্যান্ড ব্যাঙ্ক থেকে মোট ১৯৮ একর জমি দিয়েছে৷ বাকি ১৪ একর জমি শিল্প কর্তৃপক্ষ সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে কিনেছেন৷ জমিহারা পরিবারের সদস্যরা বিদ্যুত্ কেন্দ্রে চাকরি পেয়েছেন বলেও মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন৷ এখানকার বিদ্যুত্ গ্রাম বাংলায় পাঠানো হবে৷ অনুষ্ঠানে আগত হলদিয়ার বিভিন্ন শিল্পসংস্থার প্রতিনিধিদের অভিবাদন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন , ‘আপনারা আরও এগিয়ে আসুন৷ বাংলায় আরও বেশি করে বিনিয়োগ করুন৷ ’ শুভেন্দু অধিকারী বলেন , ‘বাম আমলে রং দেখে কারখানায় চাকরি দেওয়া হত৷ কিন্ত্ত এখানে জমিদাতা পরিবারের সদস্যরাই চাকরি পেয়েছেন৷ জমি নেওয়ার জন্য আমরা মানুষকে রক্তস্নাত করিনি৷ সরকারি ল্যান্ড ব্যাঙ্ক থেকেই সিংহভাগ জমি দেওয়া হয়েছে৷ বাকিটা সরকারি নীতি মেনে চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি কিনে নিয়েছেন ওঁরা৷ ’ এর জন্য মুখ্যমন্ত্রীকেই পুরো কৃতিত্ব দিয়েছেন তিনি৷

রাজ্যে শিল্পের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে মরিয়া মুখ্যমন্ত্রী যখনই জেলা সফরে যান , তখনই নিয়ম করে দলের নেতা -কর্মীদের উদ্দেশে বার্তা দিয়ে থাকেন৷ কিছু দিন আগে বীরভূমে জেলা প্রশাসনিক বৈঠকেও পাথর ও কয়লা খাদানে দুর্নীতি ও দুষ্কৃতিমূলক কার্যকলাপ নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন৷ দলকে সতর্ক করেছিলেন৷ বর্ধমানে গিয়েও একই হুঁশিয়ারি শুনতে পাওয়া গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে৷ পূর্ব মেদিনীপুরেও তার ব্যতিক্রম হয়নি৷ হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে বিভিন্ন কলকারখানায় ইউনিয়ন এবং দলীয় নেতাদের জুলুমবাজি নিয়ে অসন্ত্তষ্ট শিল্পমহল৷ সে কথা জানতে বাকি নেই মুখ্যমন্ত্রীরও৷ তাই হলদিয়ায় শিল্পপ্রকল্পের উদ্বোধনে এসে মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দিলেন , শিল্পে কোনও ধরনের হাঙ্গামা তিনি মেনে নেবেন না৷

মগডালে কাঁঠাল, নাগাল লম্ফঝম্প দাঁতালের

$
0
0

জয়া চক্রবর্তী ■ আলিপুরদুয়ার
নিঝুম রাত৷ বাইরে তুমুল বৃষ্টি৷ শ্রমিক মহল্লায় স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছিলেন কুমার ঘাউ৷ আচমকাই তাঁর ঘুম ভেঙে যায় প্রবল কম্পনে৷ অজানা আশঙ্কায় বুক কেঁপে উঠেছিল আলিপুরদুয়ারের শামুকতলা থানার কার্তিকা চা-বাগানের স্থায়ী শ্রমিকের৷ ভূমিকম্প, বজ্রপাত নাকি অন্য কিছু এই ভাবতে ভাবতেই উদ্ভ্রান্তের মতো ছয় বছরের মেয়েকে বুকে আগলে স্ত্রীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ঘর ছেড়ে৷ কিন্ত্ত তার পরই যে দৃশ্য চোখে পড়ে, তাতে আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার উপক্রম হয় তাঁর৷

দেখেন, ঠিক তাঁর ঘরের পাশে থাকা গাছের মগডালে কাঁঠালের নাগাল পেতে লম্ফঝম্প শুরু করেছে এক দাঁতাল৷ তাতেই কেঁপে উঠছে মাটি৷ শ্রমিক পরিবারটি বেরিয়ে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রবল আক্রোশে গাছটিকে ভেঙে দেয় দাঁতাল৷ আর গাছ গিয়ে পড়ে কুমারের বাড়ির উপর৷ মুহূর্তে ধূলিস্যাত্ হয় তাঁর ঘর৷ অর্থাত্ সপরিবারে বেরিয়ে না এলে সাক্ষাত্ মৃত্যুই কপালে ছিল শ্রমিক পরিবারটির৷ কয়েক দিন ধরেই বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প লাগোয়া উত্তর রায়ডাকের জঙ্গলে দেখা মিলছে ওই প্রকাণ্ড দলছুট দাঁতালটির৷ যথেচ্ছ ভাঙচুর চালাচ্ছে সে৷ তার মোকাবিলায় নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে বনকর্মীদের৷

রবিবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি৷ তবে এ দিন কুমারের বাড়িতে সে হানা দিয়েছিল পাকা কাঁঠালের লোভে৷ নাগালের মধ্যে থাকা ফলগুলি উদরস্থ করতে সময় লাগেনি তার৷ কিন্ত্ত তার পরই নজর পড়ে গাছের মগডালে৷ প্রায় ত্রিশ ফুট উঁচুতে ঝুলতে থাকা পাকা কাঁঠালটি পেতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি দাঁতাল৷ লাফিয়ে -ঝাঁপিয়ে যে করেই হোক সেটি খেতে চাইছিল সে৷ প্রচণ্ড বৃংহনে ততক্ষণে জেগে উঠেছে শ্রমিক মহল্লা৷ কম্পন অনুভব করে বাইরে বেরিয়ে এসেছে শ্রমিক পরিবারটিও৷ দাঁতালের রুদ্ররূপ দেখে চিত্কার করে ওঠেন প্রতিবেশীরা৷ সেই চিত্কারে সম্বিত্ ফেরে কুমারের৷ কোনও রকমে পালিয়ে বাঁচেন তাঁরা৷ এ দিকে , কাঁঠালের নাগাল না পেয়ে মোটেও শেয়ালের মতো ‘আঙুর ফল টক’ আউড়ে ক্ষান্ত হয়নি দাঁতাল৷ বরং প্রবল আক্রোশে ধরাশায়ী করে ফেলে বিশাল গাছটিকে৷ আর সেই গাছ পড়ে কুমারের ঘরের উপর৷ ভেঙে গুঁড়িয়ে যায় তাঁর বাড়ি৷ ভুক্রমেও ঘরের ভেতরে থেকে গেলে মৃত্যু নিশ্চিত ছিল পরিবারটির৷ গাছটিকে মাটিতে ফেলে প্রাণ ভরে কাঁঠাল সাবাড় করে অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে যায় বুনো দাঁতালটি৷

তার পর দুলকি চালে অদৃশ্য হয়ে যায় অন্ধকারে৷ হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রতিবেশী ও বনকর্মীরা৷ নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচলেও আতঙ্কের ঘোর কাটতে চাইছে না শ্রমিক পরিবারটির৷ কাঁপা গলায় কুমার বলেন , ‘প্রচণ্ড দুর্যোগের রাতে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলাম আমরা৷ আচমকাই বুঝতে পারি মাটি কাঁপছে৷ ভয়ে মেয়ে আর বউকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ি৷ কিন্ত্ত সামনে অমন ভয়ঙ্কর দাঁতালটিকে দেখে পা সরছিল না৷ বনের কাছে ঘর বলে হাতিদের আনাগোনা মাঝে মাঝেই চোখে পড়ে৷ কিন্ত্ত এমন আক্রোশ এর আগে কখনও দেখিনি৷ কোনও কারণে ঘুম না ভাঙলে মৃত্যু নিশ্চিত ছিল৷ এটা ভাবলেই আর দু’চোখের পাতা এক করতে পারছি না৷ ’

কুমারের প্রতিবেশী রাজু ওঁরাও বলেন, ‘হাতির চিত্কারে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল৷ বিপদ বুঝে বাইরে বেরিয়ে যে সাংঘাতিক দৃশ্য দেখেছি , ভাবলে এখনও শরীর হিম হয়ে আসছে৷ আমিই চিত্কার করে কুমারকে হুঁশিয়ার করি৷ নাগালে পেয়ে গেলে ওদের তিন জনকে চোখের সামনেই পিষে মারতো ওই মহাকাল৷ বরাত জোরে বেঁচে গিয়েছে পরিবারটি৷ ’

Viewing all 41318 articles
Browse latest View live